ঝালকাঠির কলার কদর দেশ-বিদেশে

কম খরচ ও লাভ বেশি হওয়ায় ঝালকাঠিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কলা চাষ শুরু হয়েছে। মাঠ পর্যায় ছাড়াও ঝালকাঠির প্রত্যন্ত এলাকাসহ শহরতলীর আবাসিক বাড়ির পাশে খালি জায়গায় বিনা পরিচর্যায় কলার বাগন গড়ে তোলা হয়েছে। এসব স্থানে উৎপাদিত কলা নৌ ও সড়কপথে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, পাশের দেশ ভারতেও যাচ্ছে ঝালকাঠির কলা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ঝালকাঠিতে এ বছর ১ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে কলা চাষ হয়েছে। এর মধ্যে কাঁচা কলা চাষ হয়েছে ৫৩০ হেক্টর জমিতে, সবরি কলা ৪৫৫ হেক্টর জমিতে, সাগর কলা ১৫৫ হেক্টর জমিতে আর অন্যান্য জাতের কলা চাষ হয়েছে ২৩০ হেক্টর জমিতে। ঝালকাঠির চার উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কলা চাষ হয়েছে কাঁঠালিয়া উপজেলায়। এখানে এ বছর ৫০০ হেক্টর জমিতে কলা চাষ করা হয়েছে। এছাড়া সদর উপজেলায় ৪০০ হেক্টর, নলছিটি উপজেলায় ২৩০ হেক্টর, রাজাপুর উপজেলায় ২০০ হেক্টর জমিতে কলা চাষ করা হয়েছে।
কাঁঠালিয়া উপজেলার বানাই গ্রমের কলা ব্যবসায়ী মোঃ সাইফুল ইসলাম তালুকদার জানান, ঝালকাঠির প্রত্যন্ত এলাকা ঘুরে বিভিন্ন ধরনের কলা ক্রয় করেন তিনি। আকারভেদে কলার দাম নির্ধারণ করা হয়। বিচিকলা এক পোন (৮০টি) ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে ক্রয় করে ৯০ থেকে ১০০ টাকা, কাঁঠালি কলা আকারভেদে এক পোন ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০ টাকা পর্যন্ত দরে ক্রয় করে ক্রয়ের ওপর ৪০ থেকে ৫০ টাকা ব্যবসা রেখে আড়তদারের কাছে বিক্রি করেন।
আড়তদার মোঃ সোলায়মান হাওলাদার বলেন, প্রায় ২০ বছর ধরে কলার আড়তদারি ব্যবসা করছেন তিনি। গ্রামাঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা কলা কিনে এনে তার কাছে বিক্রি করেন। তিনি সামান্য ব্যবসা রেখে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নৌ ও সড়কপথে আসা পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন। কলার রক্ষণাবেক্ষণ বিষয়ে তিনি বলেন, গ্রামাঞ্চল থেকে কলা কিনে খুচরা ব্যবসায়ীরা তার কাছে কলা বিক্রি করেন। তিনি তাদের কাছ থেকে কলা ক্রয় করে নিচে কাঠের পাটাতন দিয়ে তার ওপর কলা স্তূপাকারে রেখে কলাপাতা দিয়ে ঢেকে রাখেন। পৌষ ও মাঘ মাস বাদে সারা বছরই এ ব্যবসা চলে বলে তিনি জানান। কলার পাইকার মোঃ কলিম উদ্দিন জানান, তারা আড়তদারের কাছ থেকে কলা কিনে নৌ ও সড়কপথে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, যশোর, খুলনা ও সাতক্ষীরা এলাকায় বিক্রি ভালো হয়। বিশেষ করে সাতক্ষীরা মোকামে বিক্রির পর ওই স্থানের ব্যবসায়ীরা পাশের দেশ ভারতেও বৈধ উপায়ে কলা বিক্রি করে থাকেন।
ঝালকাঠির সদর হাসাপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. গোলাম ফরহাদ জানান, কলায় কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এটি রোগপ্রতিরোধক এবং প্রতিষেধক ওষুধ হিসেবে খাওয়া সবার জন্যই উপকারী। এর পুষ্টিগুণও অত্যন্ত ভালো। ঝালকাঠির গাইনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মৃণাল কান্তি বন্দোপাধ্যায় জানান, কলা ফল হিসেবে উপকারী একটি খাদ্য। প্রাকৃতিকভাবে পাকানো কলা শিশু ও গর্ভবতী মহিলাদের জন্য উপকারী। অপরদিকে শুষ্ক মৌসুমে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ধুলাবালি দেহের ভেতরে প্রবেশ করে যে ক্ষতি করে, কলা সে ক্ষতিকারক রোগ প্রতিরোধেও কাজ করে।