১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার মাত্র পাঁচ বছরে বাংলাদেশকে অমিত সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠা, গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি, খাদ্যে আত্মনির্ভরশীলতা এবং দারিদ্র্য হ্রাসে বিপুল সাফল্য প্রভৃতি সেই সময় বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন মর্যাদার আসনে অভিষিক্ত করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই সময়ে অর্জন করেন ইউনেস্কো শান্তি পুরস্কার ও ফাও এর সেরেস পদকসহ বহুসংখ্যক সম্মাননা। ২০০৯ এবং ২০১৪ সালে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণের পর গত সাড়ে ছয় বছরের অর্জিত সাফল্য জননেত্রী শেখ হাসিনাকে বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। তিন দফায় শেখ হাসিনা ২৭টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন। তার গতিশীল নেতৃত্বে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষার প্রসার, নারীর ক্ষমতায়ন, খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা, বিদ্যুৎ উৎপাদন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা, এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, জনগণের গড় আয়ুষ্কাল ৭০ বছরে উন্নীতকরণ, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার হ্রাসে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম স্থান অধিকার, খাদ্যে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন, নিজ অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্রতী হওয়া, মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে গড়ে ওঠার লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই নিন্ম মধ্যম আয়ের দেশের সীমা অতিক্রম এবং অব্যাহতভাবে সাড়ে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা প্রভৃতির মাধ্যমে বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর কাছে ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এসব অভাবিত সাফল্যের কারণেই বাংলাদেশ অতীতের নেতিবাচক ভাবমূর্তির ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। নিঃসন্দেহে এসব সাফল্যের পেছনে রয়েছে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের শ্রম, সৃজনশীলতা ও উদ্যম। কিন্তু জনগণের এই শ্রমশক্তি ও সুপ্ত সৃজনশীলতাকে উন্নয়নের মহোৎসবে যিনি সংগঠিত করেছেন, তাদের সঠিক দিক-নির্দেশনা দিয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উন্নয়ন ও গণবিরোধী শক্তির সকল ষড়যন্ত্র, অপচেষ্টা নস্যাৎ করে দিয়ে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া নিশ্চিত করেছেন, তিনি আর কেউ নন, তিনি আমাদের সকলের প্রিয় প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু-কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা, আপনাকে বাঙালি জাতির অভিনন্দন! আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছেন। তার কারণেই বাংলাদেশ আজ শিখর স্পর্শ করতে সক্ষম হয়েছে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত দিয়ে যেমন বাংলাদেশের স্বাধীনতা এসেছে তেমনি তার কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে এসেছে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা। সাফল্য স্বীকৃতি স্বরূপ প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ম শেখ হাসিনা অর্জন করেছেন অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার।
তার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হচ্ছে_
১. এজেন্ট অব চেঞ্জ পুরস্কার, ২০১৬ : গত ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ’ পুরস্কারে ভূষিত করে গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফোরাম। নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য ও সাহসী ভূমিকা পালনের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে এই পুরস্কার দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সকল নারীকে এই অর্জন উৎসর্গ করেন।
২. প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন, ২০১৬ : নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘প্ল্যানেট ৫০-৫০’ পুরস্কারে ভূষিত করেছে জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন ‘ইউএন ওম্যান’। গত ২১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে এক উচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠানে তার হাতে এই পুরস্কার তুলে দেয়া হয়।
৩. চ্যাম্পিয়নস অব দি আর্থ : ২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের পরিবেশবিষয়ক সর্বোচ্চ সম্মান ‘চ্যাম্পিয়নস অব দি আর্থ’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বিভিন্ন নীতি প্রণয়ন, জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের মাধ্যমে অর্থ বিনিয়োগ ইত্যাদিসহ তার নেতৃত্বাধীন সরকারের সামগ্রিক পদক্ষেপের কথা বিবেচনা করে ‘পলিসি লিডারশিপ’ শাখায় তাকে এই পুরস্কার দেয়া হয়।
৪. সাউথ-সাউথ ভিশনারি পুরস্কার, ২০১৪: ২০১৪ সালের ২১ নভেম্বর, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জাতিসংঘের সাউথ-সাউথ ভিশনারি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। বাংলাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার, সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা চালু, সর্বসাধারণের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পেঁৗছে দেয়া, সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে বিশ্বের দরবারে রোল মডেল হিসেবে উপস্থাপনের জন্য তাকে এই সম্মাননা দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এই পুরস্কার গ্রহণ করেন।
৫. শান্তি বৃক্ষ, ২০১৪ : নারী শিক্ষায় অনবদ্য অবদানের জন্য ২০১৪ সালে ইউনেস্কো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ‘শান্তি বৃক্ষ’ স্মারক তুলে দেয়। ৮ সেপ্টেম্বর ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা তার হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন। ইউনেস্কোর মহাপরিচালক স্মারকটি হস্তান্তর করার আগে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারী শিক্ষায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একজন জোরালো বক্তা। রাজনৈতিক ও নারীর ক্ষমতায়নের জন্য তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
৬. গ ক এধহফযর পুরস্কার : সাম্প্রদায়িক ভ্রাতৃত্ব, অহিংসা, সামাজিক বোঝাপড়া এবং তৃণমূল পর্যায়ে গণতন্ত্রের উত্থানের স্বীকৃতিস্বরূপ অসলোভিত্তিক গ ক এধহফযর ঋড়ঁহফধঃরড়হ, ১৯৯৮ সালে শেখ হাসিনাকে গ ক এধহফযর পুরস্কারে ভূষিত করে।
৭. ঈঊজঊঝ মেডেল : ক্ষুধার বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা নিরলস সংগ্রামের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘ খাদ্য এবং কৃষি সংস্থা (ঋঅঙ) ২ আগস্ট, ১৯৯৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মানজনক ঈঊজঊঝ মেডেল দিয়ে ভূষিত করে।
৮. চবধৎষ ঝ. ইঁপশ পুরস্কার : ২০০০ সালের ৯ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের জধহফড়ষঢ়য গধপড়হ ডড়সবহং ঈড়ষষবমব শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং মানবিক ক্ষেত্রে তার লক্ষ্য, সাহস এবং অর্জনের জন্য চবধৎষ ঝ. ইঁপশ পুরস্কার প্রদান করে।
৯. ঋবষরী ঐড়ঁঢ়যড়ঁবঃ- ইড়রমহু পুরস্কার : পার্বত্য চট্টগ্রামের ২৫ বছরব্যাপী পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৮ সালে ইউনেস্কো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই পুরস্কার প্রদান করে।
১০. ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার : ২০১০ সালের ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শান্তি, নিরস্ত্রীকরণ এবং উন্নয়ন এর জন্য তার নিরন্তর সংগ্রামের স্বীকৃতিস্বরূপ ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার প্রদান করা হয়। ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাতিল তার হাতে এ পুরস্কার তুলে দেন।
১১. জাতিসংঘ পুরস্কার ২০১০ : শিশু মৃত্যুর হার ৫০% কমিয়ে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের জন্য জাতিসংঘ বাংলাদেশ সরকারকে ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১০ সালে এই স্বীকৃতি প্রদান করে। জাতির পক্ষ থেকে এই পুরস্কার গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের ৫ম সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ। গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে তিনি ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সরকারি ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজের ছাত্র সংসদের সহসভাপতি থাকার মধ্য দিয়ে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের একজন সদস্য এবং ছাত্রলীগের রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রজীবন থেকেই শেখ হাসিনা সব গণআন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতের সেই কালো অধ্যায়ের সময় শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহেনা পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় বেঁচে যান। পরে রাজনৈতিক আশ্রয়ে ৬ বছর ভারতে অবস্থান করেন। ১৯৮০ সালে ইংল্যান্ডে থাকাবস্থায় তিনি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে সবার সম্মতিক্রমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন। সেই তার পথ চলার শুরু। তাকে হত্যার জন্য আজ পর্যন্ত ১৯ বার সশস্ত্র হামলা করা হয়। তারপরও তিনি থেমে যাননি।
শেখ হাসিনা, একজন অনুস্মরণীয় নারী, যার কারণে আজ বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। বাংলাদেশকে তিনি এনেদিয়েছেন নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা। শেখ হাসিনার শাসন আমলেই বাংলাদেশের বেশিরভাগ আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।