ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের পুঁজিবাজার বেশি লাভজনক

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং থাইল্যান্ডের তুলনায় বাংলাদেশের পুঁজিবাজার বেশি লাভজনক। বাংলাদেশের স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো যে লভ্যাংশ দেয় সে তুলনায় এখানকার কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম কম। ফলে কোম্পানিগুলোর শেয়ার কিনলে যে প্রকৃত লভ্যাংশ (ডিভিডেন্ড ইল্ড) পাওয়া যায়, তা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে পাওয়া যায় না। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাসিক প্রতিবেদনে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন দেশের স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্যের ভিত্তিতে ডিএসই এ তথ্য দিয়েছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো মূলত শেয়ারের গায়ের দরের (ফেসভ্যালু) ভিত্তিতে লভ্যাংশ দেয়। কিন্তু শেয়ারক্রেতা সাধারণত গায়ের দরে শেয়ার কিনতে পারেন না। তাকে শেয়ার কিনতে হয় আরো বেশি দামে বাজারমূল্যে। তাই শেয়ারহোল্ডারকে তার প্রকৃত লভ্যাংশ বুঝতে বাজারমূল্যের ভিত্তিতে সে কত লভ্যাংশ পেল তা হিসেব করতে হয়।

তথ্যে দেখা গেছে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্য সূচকে অন্তর্ভুক্ত কোম্পানিগুলোর প্রকৃত লভ্যাংশ (বাজারমূল্যের ভিত্তিতে লভ্যাংশ) ৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ। যা ভারতের সেনসেক্সভুক্ত কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ। আর বিএসই ১০০ সূচকে অন্তর্ভুক্ত কোম্পানিগুলোর জন্য ১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। অর্থাত্ কেউ যদি ডিএসইর অন্তর্ভুক্ত কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করেন তবে তিনি বছরশেষে ৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ প্রকৃত লভ্যাংশ পান। আর সেনসেক্সভুক্ত কোম্পানির শেয়ার কিনলে প্রকৃত লভ্যাংশ পান ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ। আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টস্-এর তথ্য অনুযায়ী, ডিএসইএক্সের প্রকৃত নগদ লভ্যাংশ ২ দশমিক ৬০ শতাংশ। সেই হিসেবে প্রকৃত নগদ লভ্যাংশ প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার বেশি লাভজনক।

ডিএসইর তথ্যে দেখা গেছে, শ্রীলংকার সিএসই অল শেয়ার ইনডেক্সের ক্ষেত্রে প্রকৃত লভ্যাংশ ৩ শতাংশ। থাইল্যান্ডের এসইটিভুক্ত কোম্পানিগুলোর প্রকৃত লভ্যাংশ ১ দশমিক ৯৩ শতাংশ। অর্থাত্ এ দুটি দেশের পুঁজিবাজারের তুলনায়ও বাংলাদেশের পুঁজিবাজার লাভজনক। ডিএসইর কর্মকর্তারা বলছেন, পুঁজিবাজারে মুনাফা করার দুটি উপায়। প্রকৃত লভ্যাংশ এবং মূলধনী মুনাফা। প্রকৃত লভ্যাংশের পাশাপাশি মূলধনী মুনাফার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের পুঁজিবাজার ভারতের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। তথ্যে দেখা গেছে, গত এক বছরে ভারতের পুঁজিবাজারে মূলধনী মুনাফা হয়েছে সাড়ে ১৩ শতাংশ। আর বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে মুলধনী মুনাফা হয়েছে প্রায় ২৭ শতাংশ।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে বাজার যত বেশি মুনাফামুখী বিনিয়োগকারীদের আগ্রহও সে বাজারের দিকে তত বেশি থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের পুঁজিবাজার তত বেশি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারেনি। এর বড় কারণ হলো— এখানকার কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতা কম। ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং এ্যাক্ট করা হলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। এখনও বাজারে গুজবের ভিত্তিতে লেনদেন হয়, বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের লেনদেন কম। ফলে অনেক সময় ভালো কোম্পানির শেয়ারের দামের তুলনায় খারাপ কোম্পানির শেয়ারের দাম বেশি থাকে।