বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে প্রথমবারের মতো রাজস্ব হালখাতার আয়োজন করা হয়। তবে পুরনো ঐতিহ্যের লালনে নতুন করে শুরু করা এই হালখাতায় করদাতাদের সম্পৃক্ততা কেমন হবে তা নিয়ে উৎসুক ছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
কিন্তু বৃহস্পতিবার বেলা শেষে করদাতাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও রাজস্ব পরিশোধের আগ্রহে চমকে গেছেন রাজস্ব কর্মকর্তারা। রাজস্ব হালখাতায় ওইদিন সারাদেশে মোট ৫৬৬ কোটি টাকা আদায় হয়েছে।
এর মধ্যে আয়কর থেকে ৩০৬ কোটি, কাস্টমস থেকে ২০৭ কোটি এবং মূসক বা ভ্যাট থেকে ৫৩ কোটি টাকা আহরিত হয়েছে। এনবিআরের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা সৈয়দ এ মুমেন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সূত্র জানায়, করদাতাদের বকেয়া পরিশোধে উদ্বুদ্ধ করতে প্রথমবারের মতো রাজধানীসহ সারাদেশের সব আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস অফিসে রাজস্ব হালখাতা আয়োজন করে এনবিআর। ‘বকেয়া কর আদায় নয়, পরিশোধ’ এ সস্নোগানে বাঙালি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রাজস্ব সংস্কৃতির আদলে প্রতিটি রাজস্ব অফিসের গেট ও অফিস সজ্জিত করা হয়। বৃহস্পতিবার এনবিআরের অধীন সব আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস অফিসে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত রাজস্ব হালখাতা চলে। এই সময় কর অফিস প্রাঙ্গণ করদাতা ও অংশীজনসহ সর্বসাধারণের পদচারণায় মুখরিত ছিল।
সরেজমিনে রাজস্ব বোর্ডের কয়েকটি দপ্তরে ঘুরে দেখা যায়, প্রচুর করদাতার ভিড়।
রাজধানীর এলটিইউ ‘ওপেন হাউজ ডের পরিবেশে ছিল ব্যতিক্রমী আয়োজন। গ্রামবাংলার ঐহিত্য মাটির হাঁড়ি, পাতিল, কলা গাছ, কুলো, হাতপাখা, মুখোশ, হাতির গেট আর রঙ-বেরঙের কার্টুনে সাজানো হয়েছে এলটিইউ। করদাতাদের জন্য খোলা হয় হালখাতার ঐহিত্যবাহী নতুন রেজিস্টার খাতা। মাটির সানকিতে দেয়া হয় মিষ্টি, বাতাসা, নারিকেলের নাড়ু, সন্দেশ, খৈ, কদমা, মুরালি, নিমকি, মুড়ির মোয়া, চিড়ার মোয়া, তিলের খাজা, সুন্দরী পাকন পিঠা, শাহী পাকন পিঠা, নকশি পিঠা, ঝিনুক পিঠা, স্পঞ্জ রসগোল্লা, দই, ডাবের পানি, তরমুজ, পেয়ারা, বরই ইত্যাদি। দেশের সিংহভাগ রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় অংশ নেয়া বৃহৎ করদাতাদের সম্মানে এলটিইউয়ের এই বিশেষ আয়োজন করদাতাদের আকৃষ্ট ও অনুপ্রাণিত করেছে বলে মনে করেন কর্মকর্তারা। করদাতা নিজেই এসে বকেয়া পরিশোধ করেছেন, অনেকেই আগেই পরিশোধ করে এসেছেন হালখাতার মিষ্টি খেতে, সঙ্গে সম্পর্কটা সুদৃঢ় করতে ও আগামীতে ‘উন্নয়নের অক্সিজেন রাজস্ব’ ব্যবস্থানায় আরও বেশি সহযোগিতার আশ্বাস দিতে। অন্যান্য কর অঞ্চল ও কমিশনারেটের দপ্তরেও আকর্ষণীয় আয়োজনে মুখরিত ছিল প্রাঙ্গণ। এ সময় আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস বিষয়ক টিভিসি প্রদর্শন করা হয়।
রাজস্ব হালখাতা আয়োজনের মধ্য দিয়ে এনবিআর তার বাঘের রূপ থেকে ফুলের রূপ ধারণ করছে, সেজন্য এনবিআরকে ধন্যবাদ জানান ব্যবসায়ীরা। হালখাতা অনুষ্ঠানে আসা এক ব্যবসায়ী বলেন, রাজস্ব হালখাতার মাধ্যমে এনবিআর ব্যবসায়ীসহ সব করদাতাকে কাছে টেনে নিয়ে এসেছে। হালখাতা ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা বেশি অংশগ্রহণ করে এবং তারা বেশি রাজস্ব দেয়। এনবিআর তাদের প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছেন। সফল এ রাজস্ব হালখাতার মাধ্যমে ব্যবসায়ী ও করদাতাদের মধ্যে আরও বেশি বিশ্বাস স্থাপিত হবে।
এ প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান করদাতাদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘নববর্ষ বাংলার ঐতিহ্য। এটি বাঙালি জাতির স্বাতন্ত্র্য ও সত্তার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। এ বছর এনবিআরের অন্যতম উদ্ভাবন হলো রাজস্ব হালখাতা। বাঙালির চিরায়ত এ উৎসবকে আমরা বকেয়া কর সংগ্রহে কাজে লাগাচ্ছি। সারাদিন এই উৎসবে অংশগ্রহণ করে রাজস্ব সংগ্রহে অবদান রাখায় করদাতাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
উল্লেখ্য, খাজনা আদায়ের অভিপ্রায়ে সম্রাট আকবর ভারত উপমহাদেশে প্রথম বাংলা সালের প্রবর্তনের পাশাপাশি বৈশাখ মাসের পহেলা তারিখে নববর্ষ উদযাপনের রীতি প্রচলন করেন। কালের ধারাবাহিকতায় ঐতিহ্যকে ধারণ করে এ বছর রাজস্ব বোর্ড প্রথমবারের মতো এটি উদযাপন করে।