স্বর্ণখনির বাংলাদেশ

গত বছরের শেষ প্রান্তে তাইওয়ানের তাইপেতে অ্যাপিক্টা অ্যাওয়ার্ডে বিচারক হওয়ার সুযোগ ছিল আমার। নিজেই স্কুল শাখা বেছে নিয়েছিলাম। দেখার ইচ্ছা ছিল এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ছাত্রছাত্রীরা তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে কীভাবে, কী উদ্ভাবন করে এবং কেমন করে সেগুলো উপস্থাপন করে। এর মাঝেই দেখা হয়েছিল ব্রুনাই দারুস সালামের ১৪ বছরের কিশোর ফয়সালের সঙ্গে। আমরা ৫ দেশের পাঁচ বিচারক ফয়সালের ৩০ মিনিটের উপস্থাপনা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছিলাম। এটির কারণ হয়তো এমন যে, এই বয়সের কোনো কিশোরের কাছ থেকে এত প্রাণবন্ত উপস্থাপনা শুনব বলে আমরা আশা করিনি। ফয়সালের মতোই আরো যেসব কিশোর-কিশোরীরা তাদের প্রকল্প উপস্থাপন করেছিল তাদের মানও বিশেষ করে আমাকে চমকে দিচ্ছিল। আমি ভাবছিলাম ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে আমাদের দেশে যখন এই অনুষ্ঠানটি হবে তখন কি আমরা থাইল্যান্ডের কিশোরীদের মতো একটি কিশোরী দল বা ব্রুনাই দারুস সালামের ফয়সালের মতো কাউকে পাব? মনে মনে আশা ছিল যে, হয়তো পাব। আমাদের ছেলেমেয়েরা তো প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় ভারতসহ দুনিয়ার তাবত বড় দেশগুলোকে হারায়। দেশে যেসব প্রতিযোগিতা হয় বা যেসব উদ্ভাবনী কর্মকাণ্ড হয় তাতে আমাদের পক্ষ থেকে একটি বড় ধরনের উদ্ভাবনী দল উপস্থাপন করা তেমন কঠিন হওয়ার কথা নয়।
এমনই করে আমরা ভাবি যে, ১৯৭২ সালে হেনরি কিসিঞ্জার যে দেশটিকে তলাহীন ঝুড়ির দেশ বলেছিলেন তার কী আছে? না, বাংলাদেশে আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য বা জোহানেসবাগের মতো কোনো সোনার খনি নেই। এ দেশে গ্যাসের খনিও ফুরিয়ে যাওয়ার পথে-সোনা পাব কই। সোনার খনির বদলে এ দেশে যা আছে তা হচ্ছে মানুষ। এত কম জায়গাতে এত মানুষ আমাদের যে, ভাবতেই গা শিউরে ওঠে। খাবারের জন্য জায়গা তো দূরের কথা এক সময়ে আকাশ অবধি উপরে ওঠেও থাকার জায়গা গড়ে তুলতে পারব কিনা জানি না আমরা। বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশটা জেগে উঠলে হয়তো একটু স্বস্তি পাব। আগে তো ভাবতাম, বাঙালিদের প্রবাসী বানিয়ে দেব, দেশে জায়গা না থাকলেই কি? কিন্তু এখন তো মনে হয় কাজে প্রবাসী হলেও বসবাস বাংলাদেশেই করতে হবে। এর মানেটা সহজ; এই দেশের মানুষকেই সোনার বিকল্প ভাবতে হবে। একেই আমরা বলি বাংলাদেশটা সোনার মানুষের খনি। আমি নিজে বিশ্বাস করি আমাদের প্রতিটি সন্তান সোনার টুকরো বা হীরার টুকরো। দেশের ৮ কোটি মানুষ ২৫ বছরের নিচের। এর মাঝে প্রায় ২ কোটি শিশু। এ শিশুদের দেখলেই আমার কেবলই ফুলের মতো মনে হয়। কয়েকজনকে একসঙ্গে দেখলেই ফুলবাগান মনে হয়। ওরা যে দেখার চাইতেও সুন্দর তার প্রমাণও আমি প্রায় প্রতিদিনই পাই। একটি প্রমাণের কথা আমি কখনো ভুলতে পারি না।
২০১৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলার আরবান একাডেমিতে প্রথম শ্রেণির ৩৯ জন শিশুকে আমি বিজয় প্রাথমিক শিক্ষাসহ উইন্ডোজ ১০ ট্যাব দিয়েছিলাম। ওরা হচ্ছে গ্রামের এমন শিশু যারা জীবনে কম্পিউটার দেখেনি। ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সেই শিশুদের দেখতে গিয়ে আমার চোখ কপালে ওঠে। ওরা সবগুলো ট্যাবের ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড বদল করেছে এবং ১২ মাসের লেখাপড়া এক মাসে শেষ করেছে। আমাদের জন্য তাই এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, আমাদের সোনর মানুষগুলোকে আমরা সোনা হিসেবে গড়ে তুলতে পারি কিনা।
এই নিবন্ধে আমি এমন একটি সোনার টুকরোর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব যে, আপনি নিজেই ওকে নিয়ে গর্ববোধ করবেন। গত শুক্রবার ২৪ মার্চ ১৭ ওর সঙ্গে দেখা হয়েছিল আমার। আগে থেকেই আমাকে বলে রাখা হয়েছিল যে, এটুআইয়ের সলভেথন প্রতিেেযাগিতায় অন্যতম বিচারক হতে হবে। শুক্রবারে সচরাচর আমি দেরি করে ওঠি। সেদিন সে সুযোগ ছিল না। দশটাতেই পৌঁছে গেলাম জাতীয় বিজ্ঞান জাদুঘরে। সাড়ে দশটার দিকে আমরা প্রতিযোগিতায় আগত প্রকল্পগুলো দেখা শুরু করি। মোট ৩৫টি প্রকল্প। সারা দেশ থেকে আসা প্রকল্পগুলো নানা বিষয়ের, নানা প্রযুক্তির। প্রকল্পগুলো দেখতে দেখতে আমরা যখন প্রায় ক্লান্ত তখনই চোখে পড়ল এক কিশোরকে যার গোঁফও ভালো করে গজায়নি। সঙ্গে টুপিপড়া পাকা দাড়িওয়ালা একজন লোক। বুড়ো মানুষটির দিকে তাকাতেই তিনি বললেন আমি আজমাইনের নানা। বগুড়ার জিলা স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র আজমাইন আকমাল নানার হাত ধরেই এসেছিল এটুআইয়ের সলভেথন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে। ৩৫টি প্রকল্পের মাঝে সর্বকনিষ্ঠ এই কিশোর এসেছিল একটি রোবট নিয়ে। এর আগে আমি নানা ধরনের রোবট দেখেছি বুয়েট বা অন্য বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের ছাত্রছাত্রীদের হাতে। বিদেশের ছাত্রছাত্রীদের হাতে তৈরি রোবটও দেখেছি। বাংলাদেশের সপ্তম শ্রেণির কোনো ছাত্রের নিজের হাতে তৈরি করা কোনো রোবট এই প্রথম দেখলাম। আজমাইনের কাছে জানতে চাইলাম কি করবে এ রোবট। সে খিলগাঁওয়ে পাইপের ভেতরে আটকেপড়া একটি শিশুর কথা জানালো। তার মতে, একটি রোবট এমন একটি শিশু যে পাইপ বা ম্যানহোলে আটকে যেতে পারে তাকে উদ্ধার করবে। একজন মহিলা বিজ্ঞানীসহ আমরা ৫ জন বিচারক মন্ত্রমুগ্ধের মতো তার কথাগুলো শুনলাম। ১৪ বছর বয়সী এ ছেলে তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে এমন একটা আস্থা আমরা পেলাম। আমি ওর কাছে জানতে চাইলাম, দুনিয়াতে এমন রোবট আর কেউ বানাতে পারেনি? তার মতে, ভারতের কেউ একজন বানিয়েছিল। তবে সেটি শিশুটিকে উদ্ধার করার বদলে ক্ষতিই করে ফেলতে পারে। ইউটিউবে ভারতীয় রোবটের বিবরণ দেয়া আছে। যে কেউ ইচ্ছা করলে এই লিঙ্ক থেকে একটি ভিডিও দেখে নিতে পারেন। যঃঃঢ়ং://িি.িুড়ঁঃঁনব.পড়স/ধিঃপয?া=ফ৮তষশড়১ৎ৯ঢ়ঊ?
সেদিন আমরা এটুআইয়ের প্রকল্প হিসেবে আজমাইনের রোবটকে সর্বসম্মতিক্রমে বাছাই করেছি। আশা করি এটুআইয়ের সহায়তায় আজমাইন তার স্বপ্নের রোবটটি বানাতে পারবে। সেদিনের উপস্থাপনাতেই আমার কিন্তু বিস্ময় শেষ হয়নি। একটু একটু করে আমি আজমাইনের খবর নিতে শুরু করি। ওর জীবনটা শুরুর সঙ্গে আমার একটি যোগাযোগ আছে। আমি ২০০১ সালে বগুড়ায় একটি মাল্টিমিডিয়া স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেই। স্কুলটি পরে বগুড়ার করতোয়া পত্রিকার সম্পাদক মোজাম্মেল হক লালু প্রতিষ্ঠা করেন। সেই স্কুলে প্লে গ্রুপ থেকে কম্পিউটার শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়। স্কুলটি এখন কলেজ হয়েছে ও সব ছাত্রছাত্রীর জন্য তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা বাধ্যতামূলক রয়েছে। আজমাইন সেই স্কুলে প্লে গ্রুপ ও নার্সারি পড়েছে। সেখান থেকেই আজমাইনের তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার শুরু। করতোয়া মাল্টিমিডিয়া স্কুলটি এখন বগুড়ার অন্যতম সেরা স্কুল। সেই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র আজমাইনের নিজের মুখের গল্পটা এ রকম, ‘আমার নাম আজমাইন আকমাল। বর্তমানে বগুড়া জিলা স্কুলের ৭ম শ্রেণিতে পড়ছি। জন্ম বগুড়াতেই। বাবা বগুড়ার জেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা। মা গৃহিণী। আমাদের বড় ভাই আজমাল আওয়াসাফ রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে কম্পিউটার সায়েন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। মেঝ বোন সাইমা ইসলাম লাবণ্য। বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। আমি সবার ছোট। ছোটবেলায় খেলনা দিয়ে খেলতে খেলতে খেলনা বানানোর চেষ্টা করতাম। যেকোনো কিছু দেখলে সেটা কীভাবে হচ্ছে এবং কেন হচ্ছে তা বের করার চেষ্টা করি। ছোটবেলা থেকেই কম্পিউটার ভালো লাগে। প্লে গ্রুপ এবং নার্সারিতে মোস্তাফা জব্বার স্যারের প্রতিষ্ঠিত করতোয়া মাল্টিমিডিয়া স্কুলে পড়েছি। তখন থেকেই কম্পিউটার ভালো লাগে। ৩য় শ্রেণিতে ভর্তি হই বগুড়া জিলা স্কুলে। বগুড়া জিলা স্কুল বিজ্ঞান ক্লাব থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে শেখা শুরু করি প্রোগ্রামিং। শুরুটা হয়েছিল তৃতীয় শ্রেণিতে স্ক্র্যাচ প্রোগ্রামিং ভাষা দিয়ে। ধীরে ধীরে ভালোবেসে ফেলি প্রোগ্রামিং। শেখা শুরু করি প্রোগ্রামিং ভাষা পড়াশোনার পাশাপাশি গেম খেলে সময় নষ্ট না করে, যেন গেম বানাতে পারি সে জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ২ ঘণ্টা করে প্রোগ্রামিং চর্চা করি। বর্তমানে সি ++ প্রোগ্রামিং ভাষা শিখছি। প্রোগ্রামিংয়ের পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে গবেষণা করি। রোবোটিক্স আমার অনেক ভালো লাগে। মানুষের কাজে আসবে এমন স্মার্ট রোবট বানানোর ইচ্ছা আছে। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার লড়াইয়ে সরকারের পাশাপাশি আমাদেরও কাজ করা দরকার।’ এমন ভাবনা থেকেই বগুড়া জিলা স্কুল বিজ্ঞান ক্লাবের প্রতিষ্ঠা করা। বর্তমানে আমি ক্লাবটির সঙ্গে যুক্ত। ক্লাস ৩-৬ এর বাচ্চাদের বিজ্ঞানমনস্ক করে তোলা, প্রোগ্রামিং শেখানো, মজার ছলে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় শেখানোর জন্য বগুড়া জিলা স্কুল বিজ্ঞান ক্লাবটির সঙ্গে কাজ করছি। প্রথমে বাবা-মা আমার প্রোগ্রামিং বা রোবট বানানোতে সাপোর্ট করতেন না। তারা ভাবতেন সময় নষ্ট করছি। পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে সেটিও মনে করতেন। তখন বাবা-মা বা পরিবার থেকে সাপোর্ট ছিল না। কিন্তু দু’একটা কম্পিটিশনে অংশগ্রহণ করি এবং বিজয়ী হয়ে দেখিয়ে দিই যে, আমি খারাপ কিছু করছি না। তারপর থেকে পরিবারের সাপোর্ট পাই। এখন বাবা-মা এবং পরিবারের সবাই দারুণ উৎসাহ দেন ও সহযোগিতা করেন।
বর্তমানে ম্যানহোল থেকে যেকোনো শিশুকে উদ্ধার করতে পারবে এমন একটি পরিপূর্ণ রোবট বানানোর কাজ করছি। শুধু এই প্রোজেক্ট নিয়েই কাজ করছি, এমন নয়। আরো বেশ কিছু প্রোজেক্ট নিয়ে কাজ করছি বর্তমানে। আমার আরেকটি ইচ্ছা হচ্ছে তৃতীয় শ্রেণি থেকে ষষ্ঠ শ্রেণির বাচ্চাদের প্রোগ্রামিং শেখানো, যা বর্তমানে চালিয়ে যাচ্ছি বিজ্ঞান ক্লাব থেকে। সহযোগিতা পেলে আরো বড় পরিসরে করব ইনশাআল্লাহ। আমি কৃতজ্ঞ যে, এই লেখাটি আমি মোস্তাফা জব্বার স্যারের বিজয় দিয়ে লিখেছি। স্যার আমার প্রেরণা।’
আজমাইনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের যে দুই কোটি আজমাইন বাংলার ঘরে ঘরে রয়েছে তাদের জন্য এই জাতি যদি কিছু না করে তবে সেটি হবে দুর্ভাগ্যজনক। আজমাইনের সঙ্গে আমার এখন দৈনন্দিন যোগাযোগ আছে। আমি নিজে বিশ্বাস করি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই তাকে সর্বপ্রকারের সহায়তা করবে। আমি এটিও কামনা করি যে, আজমাইন শিশুদের উদ্ধার করার মতো কঠিন কাজ করতে পারার রোবটটি তৈরি করে এদেশে রোবোটিক্স-এর এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। ১৪ বছরের এই কিশোর কম্পিউটার বিজ্ঞানের ছাত্র হওয়ার অনেক আগেই যখন অন্যদের পথ দেখানোর কাজ করে ফেলতে পারছে তখন আমাদের নিজেদের বোধোদয় হওয়া উচিত। বিশেষ করে আমরা যেটুকু পথ পার হতে পেরেছি সেটির সামনের আলোটা আমাদের দেখতে হবে। আমি স্মরণ করতে পারি তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষাকে মাধ্যমিক স্তরে বাধ্যতামূলক করার লড়াইটা আমার জন্য যথেষ্ট কষ্টের ছিল। আমাদের শিক্ষাবিদরা কৃষি, ক্যারিয়ার শিক্ষা বা শরীর চর্চাকে যতটা গুরুত্ব দিয়েছিলেন তেমনটি তথ্যপ্রযুক্তিকে দেননি। তবুও অনেক বড় একটা লড়াইতে আমরা জয়ী হয়েছি যখন স্কুলে কম্পিউটারকে বাধ্যতামূলক করা হয়। তবে এখনো তাতে প্রবল সংকট রয়েছে। হিসাবে জানা গেছে যে সব স্কুলে কম্পিউটার শেখানোর ল্যাবতো দূরের কথা শতকরা ৪০ ভাগ স্কুলে এই বিষয়ের শিক্ষকই নেই। বছরের পর বছর ধরে বিষয়টি গুরুত্বই পায়নি।
যাহোক আমরা এরই মাঝে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষাকে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বাধ্যতামূলক করেছি। আজমাইন প্রমাণ করেছে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষাটা প্লে গ্রুপ থেকে হলেই সঠিক হবে। করতোয়া মাল্টিমিডিয়া স্কুল তাকে সেই বয়সেই কম্পিউটারে আগ্রহী করতে পেরেছে। দ্বিতীয়ত, আমাদের চোখ খোলা উচিত যে, প্রোগ্রামিং অনার্স পড়ার বিষয় নয়। তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র যে প্রোগ্রামিং শিখতে পারে এবং সপ্তম শ্রেণির ছাত্র যে রোবট বানাতে পারে সেটি আমাদের শিক্ষাবিদরা কি অনুভব করবেন? সবচেয়ে বড় কথাটি হচ্ছে আজমাইনের স্বপ্নটি নিয়ে। এই কিশোর ও তার ক্লাব এখন স্বপ্ন দেখে তৃতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়া শিশুদের প্রোগ্রামার বানাতে।
প্রসঙ্গক্রমে আজমাইনের বাবার সঙ্গেও আমার যোগাযোগ হয়েছে। তিনি বগুড়া জেলা নারী বিষয়ক কর্মকর্তা। নিজে তৃণমূলের নারীদের দক্ষ করার জন্য কাজ করছেন। তিনি আশা করেন, রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া তার বড় ছেলে তথ্যপ্রযুক্তিতে বড় কিছু করবে। একজন আদর্শ বাবার মতো তিনি তার কন্যা ও ছোট সন্তান আজমাইনকে নিয়েও বিশাল স্বপ্ন দেখেন। মনে রাখা ভালো সন্তানদের ঘিরে বাবা-মায়ের এমন স্বপ্নটাই প্রথম গুরুত্বপূর্ণ।
আমার লেখার পাঠক পাঠিকারা অবশ্যই স্মরণ করতে পারবেন যে, বহু বছর ধরে আমি শিশুশ্রেণি থেকে বাধ্যতামূলক কম্পিউটার শিক্ষার পাশাপাশি শিশুদের প্রোগ্রামার বানানোর এবং শিশু প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করার কথা বলে আসছি। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগকে আমি এই প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শেখ রাষে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপনের প্রস্তাবও দিয়েছিলোম। প্রস্তাব দিয়েছিলাম যে পরীক্ষামূলকভাবে এসব স্কুলে শিশুদের প্রোগ্রামিং মেখাব এবং এরপর একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করব। এসব বিষয় তেমন আগায়নি। আমাদের সরকারি প্রবণতা হচ্ছে চোখের সামনে যা পড়ে তার দিকেই আমরা নজর দিই। এসব প্রস্তাবনার বাইরে আমি ২০১৫ সালের আগস্টে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে টেলিফোন শিল্প সংস্থার দায়িত্ব নেওয়ার নির্দেশ পেয়ে ওই সংস্থাটির মাধ্যমেই একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করার চেষ্টা করি। সেই প্রকল্পটি ছিল ২০টি প্রাইমারি স্কুলের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের হাতে তাদের পাঠ উপকরণসহ ট্যাব দেয়া হবে। তারা কম্পিউটার বিষয়টি শিখবে এবং তাদের প্রোগ্রামিংও করানো হবে। সেই প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ১৪ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ে আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পেয়েছে। জুলাই মাসে এর কাজ শুরু হওয়ার কথা। এটি যদি সফল করা যায় তবে আমরা পুরো দেশের সামনে একটি বড় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারব। তখন মনে করা হবে না যে কেবল আজমাইনই একটি ব্যতিক্রম।
আমার নিজের পরিচালিত আনন্দ মাল্টিমিডিয়া স্কুলগুলোতে শিশু শ্রেণি থেকে কম্পিউটার শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে পারলেও আর কোথাও আগাতে পারিনি। গত ২৭ মার্চ ১৭ আয়োজিত ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স নির্বাহী কমিটির সভায় প্রসঙ্গটি আলোচিত হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে তারা কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছে। কিন্তু কেবলমাত্র কর্মপরিকল্পনা তৈরি করার বিষয়ে আলোচনা করা ছাড়া তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। আমি এখনো এমন কথা ভাবতেই পারছি না যে প্রাথমিক স্তরে কম্পিউটার শিক্ষা বাধ্যতামূলক হবে। সরকারের নীতিনির্ধারকদের মাঝে তেমন কোনো ভাবনাই দেখতে পাই না। ফলে আমি এখনো মোটেই আশাবাদী নই যে, প্রাথমিক স্তরে সবার জন্য তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়টি বাধ্যতামূলক হবে। বর্তমান শিক্ষা প্রশাসনকে আমি এতটা দূরদর্শী হিসেবে দেখতে পাচ্ছি না। প্রাথমিক বা মাধ্যমিক কোনো স্তরেই শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের যে বিশাল কর্মযজ্ঞ হওয়ার কথা তা দৃশ্যমান নয়। নয় বছর পরও আমরা জানি না কোন পথে কতদিনে কীভাবে আমরা শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরটা করতে পারব। তারা এমনকি সাধারণ শিক্ষার মান নিয়েও প্রশ্নবিদ্ধ। ২০০৯ সালে আমরা ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন দেখেছিলাম সেটি যারা তালাবদ্ধ করে রেখেছে এবং যারা ৯ বছরে শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের কোনো কর্মপরিকল্পনাও জাতিকে দিতে পারে না তাদের কাছে এতটা আশা আমি করছি না। শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর নিয়ে আমার নিজের প্রস্তাবনা এরকম :
ক. প্রথমত, এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে আমাদের ডিজিটাল যুগের জন্য মানবসম্পদ তৈরি করতে হবে। জ্ঞানভিত্তিক সমাজের জন্য জ্ঞানকর্মী তৈরির কথাও আমাদের ভাবতে হবে। এজন্য সবার আগে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাতেই পরিবর্তন আনতে হবে। শিক্ষার বড় পরিবর্তনের প্রথমটি হচ্ছে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করতে পারে এবং ডিজিটাল প্রযুক্তিতে স্বচ্ছন্দ এমন প্রজন্ম গড়ে তোলা এবং ধারাবাহিবকভাবে এমন ব্যবস্থা করা যাতে ভবিষ্যতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে তেমন শিক্ষাই নতুন প্রজন্ম ধারাবাহিকভাবে পাবে।
এজন্য অবিলম্বে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়টি শিশুশ্রেণি থেকে বাধ্যতামূলকভাবে পাঠ্য করতে হবে। প্রাথমিক স্তরে ৫০ নম্বর হলেও মাধ্যমিক স্তরে বিষয়টির মান হতে হবে কমপক্ষে ১০০। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে এর মান অন্তত ২০০ নম্বর হতে হবে। স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা, ইংরেজি-বাংলা-আরবি মাধ্যম নির্বিশেষে সবার জন্য এটি এমনভাবেই অবশ্যপাঠ্য হতে হবে। পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় বিষয়টিকে কোনো ধরনের অপশনাল নয়, বাধ্যতামূলক করতে হবে। এজন্য সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
খ. দ্বিতীয়ত, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতি ২০ জন ছাত্রের জন্য একটি করে কম্পিউটার হিসেবে কম্পিউটার ল্যাব গড়ে তুলতে হবে। এই কম্পিউটারগুলো শিক্ষার্থীদের হাতে কলমে ডিজিটাল যন্ত্র ব্যবহার করতে শেখাবে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীরা যাতে সহজে নিজেরা এমন যন্ত্রের স্বত্বাধিকারী হতে পারে রাষ্ট্রকে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষায় ইন্টারনেট ব্যবহারকে শিক্ষার্থী-শিক্ষক-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয়ত্তের মাঝে আনতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষার্থী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহকে বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে দিতে হবে। দেশজুড়ে বিনামূল্যের ওয়াইফাই জোন গড়ে তুললে শিক্ষায় ইন্টারনেটের ব্যবহারকে সম্প্রসারিত করবে। ইন্টারনেটকে শিক্ষার সম্প্রসারণের বাহক হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।
গ. তৃতীয়ত, প্রতিটি ক্লাসরুমকে ডিজিটাল ক্লাসরুম বানাতে হবে। প্রচলিত চক, ডাস্টার, খাতা কলম বইকে কম্পিউটার, ট্যাবলেট পিসি, স্মার্ট ফোন, বড় পর্দার মনিটর/টিভি বা প্রজেক্টর দিয়ে স্থলাভিষিক্ত করতে হবে। প্রচলিত স্কুলের অবকাঠামোকে ডিজিটাল ক্লাসরুমের উপযুক্ত করে তৈরি করতে হবে।
শিক্ষা ব্যবস্থাতে রূপান্তরের আরো তিনটি কৌশলের কথা আমরা আলোচনা করতে পারি। তারপর আরো দুটি প্রধান কৌশল নিয়ে আলোচনা করা যাবে।
ঘ. চতুর্থত, সব পাঠ্য বিষয়কে ডিজিটাল যুগের জ্ঞানকর্মী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য উপযোগী পাঠক্রম ও বিষয় নির্ধারণ করে সেইসব কনটেন্টসকে ডিজিটাল কনটেন্টে পরিণত করতে হবে। অনুগ্রহ করে কেউ এসব কনটেন্টসকে পাওয়ার পয়েন্টের উপস্থাপনা বা ভিডিও লেকচার বলে মনে করবেন না- এগুলো যেন হয় ইন্টার্যাাকটিভ মাল্টিমিডিয়া সফটওয়্যার। ইতোমধ্যে ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরির নামে যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে সেসব কর্মকাণ্ডের ফলাফল মূল্যায়ন করে বিশ্বমানের ইন্টারঅ্যাকটিভ ডিজিটাল কনটেন্ট পেশাদারিভাবে প্রতিযোগিতামূলক-ভাবে তৈরি করতে হবে। এনজিওদের ডেকে এনে কনটেন্ট তৈরি করার কাজ বিলিয়ে দেয়ার প্রবণতা ছাড়তে হবে। একই সঙ্গে বেসরকারি খাতে বিপুল পরিমাণ কনটেন্ট তৈরি করার জন্য ব্যাপক সহায়তা প্রদান করতে হবে। আইসিটি ডিভিশন, এটুআই, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বিশেষভাবে এ ধরনের কনটেন্ট তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। তবে বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত না করে সরকারের একার পক্ষে এই খাতে খুব ভালো অগ্রগতি সাধন করা সম্ভব হবে না। শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের তিনটি ধাপকে মনে রাখতে হবে। ১) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল করতে হবে। ২) ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করতে হবে। ৩) ক্লাসরুম ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল করতে হবে। তিনটির মাঝে একটি অনন্য সমন্বয় থাকতে হবে।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পরীক্ষা পদ্ধতি বা মূল্যায়নকেও ডিজিটাল করতে হবে। অবশ্যই বিদ্যমান পাঠক্রম হুবহু অনুসরণ করা যাবে না এবং ডিজিটাল ক্লাসরুমে কাগজের বই বা কাগজের বইয়ের পিডিএফ কপি দিয়ে শিক্ষাদান করা যাবে না। ক্লাসরুমে প্রজেক্টর আর ল্যাপটপ দেয়ার কাজটির সঙ্গে কনটেন্ট যুক্ত না করা হলে উপযুক্ত ফলাফল পাওয়া যাবে না নীতিনির্ধারকদের বুঝতে হবে। বুঝতে হবে যে কনটেন্ট যদি ডিজিটাল না হয় তবে ডিজিটাল ক্লাসরুম অচল হয়ে যাবে। আমরা নিশ্চিত করেই বলতে চাই যে এসব কনটেন্টকে অবশ্যই মাল্টিমিডিয়া ও ইন্টারএ্যাকটিভ হতে হবে। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ডিজিটাল যুগের বা জ্ঞানভিত্তিক সমাজের উপযোগী বিষয়বস্তু শিক্ষা দেয়া। আমাদের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় কার্যত এমনসব বিষয়ে পাঠদান করা হয় যা কৃষি বা শিল্পযুগের উপযোগী। ডিজিটাল যুগের বিষয়গুলো আমাদের দেশে পড়ানোই হয় না। সেইসব বিষয় বাছাই করে তার জন্য পাঠক্রম তৈরি করতে হবে। আমার ধারণা বিদ্যমান বিষয়গুলোর শতকরা ৯০টি ভবিষ্যতে না পড়ালেই সঠিক কাজটি করা হবে। একই সঙ্গে শিক্ষার মাধ্যম-ভাষা শিক্ষা ও শিক্ষার বহুবিধ ধারাকে সমন্বিত করতে হবে।
ঙ. পঞ্চমত, সব শিক্ষককে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠদানের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সব আয়োজন বিফলে যাবে যদি শিক্ষকরা ডিজিটাল কনটেন্ট, ডিজিটাল ক্লাসরুম ব্যবহার করতে না পারেন বা ডিজিটাল পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করতে না জানেন। তারা নিজেরা যাতে কনটেন্ট তৈরি করতে পারেন তারও প্রশিক্ষণ তাদের দিতে হবে। কিন্তু শিক্ষকরা কোনো অবস্থাতেই পেশাদারি কনটেন্ট তৈরি করতে পারবেন না। ফলে পেশাদারি কনটেন্টস তৈরির একটি চলমান প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হবে। প্রস্তাবিত ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়কে ডিজিটাল শিক্ষার গবেষণা ও প্রয়োগে নেতৃত্ব দেয়ার উপযোগী করে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ক্রমান্বয়ে সব বিশ্ববিদ্যালয়কে ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করতে হবে।
চ. ষষ্ঠত, বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষিত তিরিশের নিচের সব মানুষকে তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ জনগোষ্ঠী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তিতে বিশ্বজুড়ে যে কাজের বাজার আছে সেই বাজার অনুপাতে প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের যেসব মানবসম্পদ বিষয়ক প্রকল্প রয়েছে তাকে কার্যকর ও সময়োপযোগী করতে হবে। দেশের কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এজন্য সরকার স্থাপিত ইউনিয়ন ডিজিটাল কেন্দ্রসমূহও ব্যবহৃত হতে পারে। আমি বিশেষ করে বিশ্বব্যাংকের এলআইসিটি প্রকল্প, বেসিসের প্রশিক্ষণ প্রকল্পসহ, আউটসোর্সিং প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ও অন্যান্য মানবসম্পদ গড়ে তোলার প্রকল্পগুলোকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য অনুরোধ করছি। এখনো প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের ধারা বাস্তবমুখী ও সঠিক নয়।
আমি জানি না সরকার এসব পরিকল্পনা কবে নাগাদ বাস্তবায়ন করবে। তবে আশায় বুক বাঁধতে ক্ষতি কি!
কেবল তো অন্যের কথা বললে হবে না, নিজেকেও কিছু কাজ করতে হবে। এবার তাই নিজেই শিশুদের প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করার কথা ভাবছি। বহু বছর আলোচনা করার পর শিশুদের প্রোগ্রামার বানানোর কাজটা আমরা এবার করব এবং জাতীয় পর্যায়ের প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার আয়োজনও আমরা এই বছরেই করব। আমি মনে করি একটি বিস্তারিত ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে শিশুদের জগতটাকে সামনে নিতেই হবে।
এই বছরেই আমি চুয়েটে কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম। সেখানেই জেনেছিলাম যে স্কুলের ছাত্ররা প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের হারিয়ে দিয়েছে। তবে তাদের দুঃখ ছিল যে তাদের স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। আমি বিশ্বাস করি স্কুলের ছেলে মেয়েদের কেবল উৎসাহিত করা নয় তারাই হোক আমাদের প্রেরণা। এই দেশটার সোনার টুকরোগুলো আমাদের শিশুরাই।