প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) কর্মসূচি ডিজিটাল সেবা তৃণমূলে ছড়িয়ে দিতে নীরব বিপ্লব করেছে। সেবা পেতে সাধারণ মানুষের হয়রানি কমার পাশাপাশি সরকারি দপ্তরগুলোর কাজেও আগের চেয়ে স্বচ্ছতা অনেক বেড়েছে। এখন সরকারি সেবা পেতে মানুষকে দিনের পর দিন ঘুরতে হচ্ছে না। সময় ও অর্থ ব্যয় দুই-ই কমেছে। ডিজিটাল সেবায় নিভৃতেই অনেক কৃষকের জীবনের গল্প বদলে গেছে। তবে সেই গল্প সংবাদমাধ্যমে খুব বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে না। এ ধরনের খবরের গুরুত্ব তুলে ধরতেই গতকাল বুধবার বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদক, টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক ও সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এটুআই কর্মসূচির শীর্ষ কর্মকর্তারা। এর আয়োজন করে প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআইবি)।
পিআইবি চেয়ারম্যান ও সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ারের সভাপতিত্বে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে অগ্রযাত্রা’ শিরোনামে
মতবিনিময় সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক শাহ আলমগীর, এটুআই কর্মসূচির পরিচালক কবীর বিন আনোয়ার, পলিসি অ্যাডভাইজার আনীর চৌধুরী ও জনপ্রেক্ষিক বিশেষজ্ঞ নাইমুজ্জামান মুক্তা। আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, মানবকণ্ঠ সম্পাদক আনিস আলমগীর, এটিএন বাংলার বার্তাপ্রধান জ ই মামুন, ইনডিপেন্ডেন্ট টিভির নির্বাহী সম্পাদক খালেদ মহীউদ্দিন, মাছরাঙা টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক রেজওয়ান হক রাজা, বিশিষ্ট সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান, আরটিভির প্রধান নির্বাহী সৈয়দ আশিকুর রহমান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমন আরা হক মিনু ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মনজুরুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) চেয়ারম্যান রাহাত খান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামান, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কাশেম হুমায়ুন, ইত্তেফাকের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আশীষ সৈকত ও দেশ টিভির নির্বাহী সম্পাদক সুকান্ত গুপ্ত অলক।
গোলাম সারওয়ার বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার আধুনিক রূপই আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন বাস্তবতা। সেই বাস্তবতার কথা অবশ্যই গণমাধ্যমে তুলে ধরতে হবে। তার জন্য এটুআইকে তথ্য জানাতে হবে; গণমাধ্যম তথ্য নিয়ে তা প্রচার করবে। তিনি বলেন, পাঠক যা জানতে চায়, সেটাই খবর। পাঠকের যদি শাকিব খান-অপুর খবর জানার আগ্রহ বেশি থাকে, তাহলে তা গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হবে_ এটাই স্বাভাবিক। তিনি আরও বলেন, সাইবার অপরাধ সম্পর্কে আরও বেশি সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। ফেসবুক অবশ্যই এখন সংবাদকর্মীদের তথ্য পাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। কিন্তু ফেসবুক থেকে তথ্য নিয়ে ছাপার ক্ষেত্রে অবশ্যই বাছ-বিচার থাকতে হবে।
মুহাম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, কওমি মাদ্রাসার সনদকে স্বীকৃতি দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের সঙ্গে সরকারের দরকষাকষির ক্ষেত্রে কিছু ফল এলেও দেশের কোনো লাভ হবে না। কারণ কওমি মাদ্রাসগুলো থেকে যারা বের হচ্ছেন, তারা কোনোভাবেই আধুনিক শিক্ষার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারবেন না, এটা বাস্তবতা।
মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, এটুআইর সঙ্গে শুরু থেকেই আমি নানাভাবে সম্পৃক্ত ছিলাম। এ কর্মসূচি সত্যিকার অর্থেই দেশে অনেক বড় কাজ করেছে, ডিজিটাল সেবা ছড়িয়ে দিয়েছে। গণমাধ্যম যখন এর কাজকে খবরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করবে, তখন তা গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করবে। এ কারণে এটুআই যখনই নতুন কোনো বড় উদ্ভাবন বা কোনো সেবা ছড়িয়ে দেবে, তার প্রাথমিক তথ্য জানাতে হবে।
শ্যামল দত্ত বলেন, ডিজিটাল সেবা তৃণমূলে ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলা হলে হচ্ছে, কিন্তু এখনও গ্রামে গেলে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা পাওয়া যায় না। মোবাইল গ্রাহকরা ঠকছেন, কিন্তু কোথাও অভিযোগ জানাচ্ছেন না। ডিজিটাল সেবা ছড়িয়ে দিতে হলে আগে সব জায়গায় ইন্টারনেট প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।
সোহরাব হাসান বলেন, শামীম ওসমানের কর্মকাণ্ড গুরুত্বপূর্ণ খবর হয়, কারণ তার কর্মকাণ্ড ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণার বিরুদ্ধে যায়। গণমাধ্যম ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা নিয়েও অনেক বড় খবর প্রকাশ করেছে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, পাঠক শামীম ওসমানের খবর বেশি মনে রাখে।
খালেদ মহিউদ্দীন বলেন, এটুআইর পক্ষে ইতিবাচক খবরের পাশাপাশি নিন্দা করে কোনো খবর ছাপা হলেও তা সহজভাবে গ্রহণের মানসিকতা থাকতে হবে। জ ই মামুন বলেন, খবর প্রচার-প্রকাশে দৃষ্টিভঙ্গিও সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন হওয়া উচিত। তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর এ সময়ে অনেক সংবাদমাধ্যমে কর্মীদের ফেসবুক ব্যবহার নিষিদ্ধ রাখা হয়_ তা ইতিবাচক নয়। আনিস আলমগীর বলেন, গ্রামগঞ্জে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট তো নেইই; মোবাইল ইন্টারনেটও পাওয়া যায় না। ইন্টারনেট ছাড়া তৃণমূলে ডিজিটাল সেন্টার কীভাবে চলবে সে প্রশ্ন উঠে যায়।
কবীর বিন আনোয়ার বলেন, গণমাধ্যমে শামীম ওসমানের কর্মকাণ্ডের খবর অনেক বড় করে ছাপা হলেও ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের গুরুত্বপূর্ণ খবরও অগুরুত্বপূর্ণভাবে ছাপা হয়। এর পরিবর্তন হওয়া দরকার। গণমাধ্যমেরই দায়িত্ব ইতিবাচক খবরে পাঠককে অভ্যস্ত করে তোলা।
এটুআই কর্মসূচির সার্বিক কার্যক্রম বিস্তারিতভাবে তুলে ধরে আনীর চৌধুরী বলেন, ডিজিটাল মাধ্যমের কারণে সরকারি সেবা পেতে মানুষের বর্তমানে আগের তুলনায় ৫৮ শতাংশ সময় কম লাগছে, ৩০ শতাংশ অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে এবং ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে সরকারি অফিসে ঘোরাঘুরি কমেছে। ২০২১ সাল নাগাদ সামগ্রিক সরকারি সেবাদান কার্যক্রম ডিজিটাল মাধ্যমের আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে এটুআই।