মাথাপিছু আয় ৩ হাজার ১৩৭ ডলার * গড় আয়ু পুরুষ ৭০ বছর ৭ মাস, নারী ৭৩ বছর ৩ মাস
মানব উন্নয়ন সূচকে তিন ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ
মানবসম্পদ উন্নয়ন সূচকে বিশ্বে তিন ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। ১৮৮টি দেশের মধ্যে ২০১৬ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৯তম। আগের বছর যা ছিল ১৪২। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) রিপোর্টে এ তথ্য উঠে এসেছে। তিনটি মানদণ্ডের ওপর ভিত্তি করে রিপোর্টটি তৈরি করা হয়েছে। মানদণ্ডগুলো হল : মানুষের আয়ুষ্কাল, মাথাপিছু আয় ও শিক্ষা ব্যবস্থা। আলোচ্য সময়ে মানবসম্পদ সূচকে বিশ্বে প্রথম অবস্থানে রয়েছে ইউরোপের দেশ নরওয়ে। আর সবার শেষে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক। এ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ নেপাল ও পাকিস্তানের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। তবে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে শ্রীলংকা, মালদ্বীপ, ভারত ও ভুটান।
বুধবার পরিকল্পনা কমিশনের সম্মেলন কক্ষে এ রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। এ সময় পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এশিয়ার অনেক দেশকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তবে আমাদের চ্যালেঞ্জ হল জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য শামসুল আলস, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী এবং নিউইয়র্কে ইউএনডিপি মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন কার্যালয়ের পরিচালক ড. সেলিম জাহান।
বাংলাদেশ : ২০১৫ সালের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে বিশ্বের ১৮৮টি দেশকে নিয়ে প্রতিবেদন করে ইউএনডিপি। ১৯৯০ সাল থেকে তারা এ কাজ করে আসছে। এবারের প্রতিবেদনে সূচকের সর্বোচ্চ মান ১-এর মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে শূন্য দশমিক ৫৭৯। এর আগে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ পেয়েছিল শূন্য দশমিক ৫৭০ পয়েন্ট। যে দেশ এক পয়েন্টের যত কাছাকাছি তাদের মানব উন্নয়ন তত এগিয়ে। ফলে এবার বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৯তম। আলোচ্য সময়ে বাংলাদেশের মানুষের বয়সের গড় বেড়েছে। এর মধ্যে পুরুষের গড় আয়ু ৭০ বছর ৭ মাস। আগের বছর যা দিল ৭০ বছর ৩ মাস এবং নারী ৭৩ বছর ৩ মাস। আগের বছর যা ছিল ৭৩ বছর ১ মাস। এ সময়ে ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে আয়ের পরিমাণ ৫০৫ বিলিয়ন ডলার। এতে মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১৩১ ডলার। যা মোট দেশজ উৎপাদনের ২৮ দশমিক ৯ শতাংশ। এ ছাড়া ২০১০ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দেশের গড়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৪ শতাংশ।
এ বছর বাংলাদেশের সঙ্গে একই অবস্থানে রয়েছে ঘানা ও জাম্বিয়া। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে মানব উন্নয়নে বেশ উন্নতি হলেও সমতা নিশ্চিত হয়নি। ফলে এখনও সমাজে বিপুলসংখ্যক মানুষ সুবিধাবঞ্চিত। বৈশ্বিক এ প্রতিবেদনটিতে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষাসহ সূচকে অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন বিষয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের কথা তুলে ধরা হয়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নাম এসেছে গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক ও বিকাশের।
মানব উন্নয়ন সূচক বা এইচডিআই হল তিনটি মৌলিক উপাদানের সমন্বয়ে একটি সামগ্রিক সূচক। এর মধ্যে রয়েছে- জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের আয়ু ও সুস্বাস্থ্যের তুলনায় গড় আয়ুর পরিমাপ, জ্ঞান অর্জনের সক্ষমতা যা আনুষ্ঠানিক শিক্ষা লাভের গড় সময়কাল এবং জাতীয় মাথাপিছু আয় অনুযায়ী উন্নত জীবনযাত্রার মান অর্জনের সক্ষমতার পরিমাপ। যেসব দেশের মানুষের প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল বেশি, শিক্ষা ব্যবস্থার মান উন্নত ও মাথাপিছু আয় বেশি, সেসব দেশ এ সূচকের তালিকায় শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছে। সূচকে সবার উপরে রয়েছে ইউরোপের দেশ নরওয়ে। এরপর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। এরপর পর্যায়ক্রমে সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, সিঙ্গাপুর এবং ডেনমার্কের অবস্থান।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মানবসম্পদ উন্নয়নে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে বিশ্ব। বর্তমানে বিশ্বে ৭৩৪ কোটি মানুষের মধ্যে ৪৮০ কোটি কর্মক্ষম। তবে ৭৬ কোটি ৬০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে। শিশু রয়েছে ১৯০ কোটি। বিশ্বে ৭৯ কোটি ৫০ লাখ মানুষ এখনও ক্ষুধাপীড়িত। প্রতি ৫ মিনিটে পাঁচ বছরের কমবয়সী ১১ শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। প্রতি ঘণ্টায় ৩৩ জন প্রসূতি মা মারা যাচ্ছেন। প্রায় ৩ কোটি ৭০ লাখ মানুষ এইচআইভি আক্রান্ত। ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ যক্ষ্মায় আক্রান্ত। ৬৬ কোটি মানুষের খাবার পানির উৎস অনুন্নত। ২৪০ কোটি মানুষ অনুন্নত পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা ব্যবহার করছে। প্রায় ১০০ কোটি মানুষ খোলা জায়গায় মলত্যাগ করছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা। আর এ ঝুঁকির জন্য উন্নত দেশগুলো দায়ী। তাদের শিল্পায়নের কারণে বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সসাইডের পরিমাণ বাড়ছে। তিনি বলেন, প্রতিদিন বাতাসে যে পরিমাণ কার্বন নির্গমন হয়, তার ৫৫ শতাংশই ৫টি দেশ থেকে। এগুলো হল : চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, রাশিয়া ও ভারত। এদের কারণেই সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়ছে। তিনি বলেন, এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেও এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। গত ১৩ বছর পর্যন্ত মানবসম্পদ সূচকে উপরের দিকে উঠছে বাংলাদেশ।