চট্টগ্রামের মুরাদপুর উড়াল সেতু এ মাসেই চালু হচ্ছে

মুরাদপুর-লালখানবাজার উড়াল সেতুতে এ মাসের শেষের দিকে যান চলাচল শুরু হবে। এটি হবে চট্টগ্রাম নগরের সবচেয়ে বড় উড়াল সেতু। দৈর্ঘ্য পৌনে চার কিলোমিটার। গত মাস পর্যন্ত ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকিটুকু সম্পন্ন করার জন্য রাত-দিন কাজ চলছে। আগামী জুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটির উদ্বোধন করবেন।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, পরীক্ষামূলক যান চলাচল শুরুর পর জিইসি মোড় এলাকায় সেতুতে ওঠা-নামার জন্য লুপ ও র্যাম্প নির্মাণের কাজ শুরু হবে। ষোলশহরে লুপ ও র্যাম্পের কাজ চলছে। এ বছরের মাঝামাঝি ষোলশহরে ও শেষদিকে জিইসি মোড়ে র্যাম্পের কাজ শেষ হবে। জিইসি মোড়ে চারটি ও ষোলশহরে দুটি—মোট ছয়টি লুপ ও র্যাম্প হবে।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম কালের কণ্ঠকে বলেন, মুরাদপুর-লালখানবাজার উড়াল সেতুর মূল কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। মূল সেতুর ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। অবশিষ্ট ৫ শতাংশ কাজ শেষ করে এ মাসের শেষদিকে যান চলাচল শুরুর প্রস্তুতি চলছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। আগামী জুনে তিনি এটির উদ্বোধন করবেন। তবে এখনো তারিখ ঠিক করা হয়নি।

আবদুচ ছালাম বলেন, উড়াল সেতুটি চালু হলে নগরের প্রধান সড়কে যানজট অনেক কমবে। জিইসি মোড় ও ষোলশহর দুই নম্বর গেট এলাকায় যানজট থাকবে না। মূল সেতুতে যান চলাচল পরীক্ষামূলকভাবে চালুর পর জিইসি মোড়ে র্যাম্প নির্মাণ শুরু হবে। ষোলশহরে র্যাম্প নির্মাণের কাজ চলছে।

চট্টগ্রাম নগরের কালুরঘাট থেকে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের আগে কাটগড়বাজার পর্যন্ত প্রায় ২৪ কিলোমিটার প্রধান সড়ক। এ সড়ক হয়েই যেতে হয় শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। নগরের লাইফলাইন হিসেবে পরিচিত এ সড়কের মুরাদপুর থেকে লালখানবাজার পর্যন্ত ৬ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার উড়াল সেতু ও র্যাম্প নির্মাণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৯৬ কোটি ৩৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। সিডিএ দিচ্ছে ২৫ কোটি টাকা, বাকি টাকা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি)। চার লেনের মূল সেতুর দৈর্ঘ্য তিন হাজার ৭৫০ মিটার। র্যাম্পের মোট দৈর্ঘ্য তিন কিলোমিটার—ষোলশহরে ১ দশমিক ৮ কিলোমিটার ও জিইসি মোড়ে ১ দশমিক ২ কিলোমিটার।

ভূমি প্রতিমন্ত্রী ও আনোয়ারা আসনের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর নামে উড়াল সেতুটি নির্মিত হচ্ছে। নির্ধারিত সময়সীমার প্রায় ছয় মাস আগে সব কাজ শেষ হতে যাচ্ছে। ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্প শেষ করার সময় নির্ধারিত রয়েছে।

উড়াল সেতুর নির্মাণকাজ শুরুর পর থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নিয়মিত মনিটর করা হচ্ছে। ফলে কাজে বিলম্ব হচ্ছে না। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। কাজের ঠিকাদার ম্যাক্স-রেনকিন জেবি।

প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বলেন, ২০১৫ সালের মার্চে মূল নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাজ হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ আগামী বছরের জুন পর্যন্ত হলেও ছয় থেকে আট মাস আগেই সব কাজ শেষ হবে। মূল সেতুতে এ মাসের শেষের দিকে যান চলাচল শুরু হবে।

পরিচালক জানান, প্রথমে প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল প্রায় ৪৬৩ কোটি টাকা। পরে নকশায় পরিবর্তন ও লুপ-র্যাম্পের সংখ্যায় পরিবর্তনের কারণে ব্যয় বেড়ে যায়। সময়ও বাড়ানো হয়। তিনি বলেন, মোট ছয়টি র্যাম্প নির্মিত হবে। সব মিলিয়ে ৬৯৬ কোটি ৩৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে। সেতু পুরোদমে চালু হলে নগরে যানজট অনেক কমবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ১২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর আগে ২০১৩ সালের ১৮ অক্টোবর নগরের জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ মাঠে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি জানান, সেতুটির নাম আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর নামে রাখা হবে।