পোশাক খাতের কর্মক্ষেত্রের উন্নয়নে খুশি ইইউ

চার বছর আগে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর তৈরি পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশের উন্নয়নের প্রশংসা করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। কারখানা ভবনের আধুনিকায়ন ও কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তায় খুশি ইইউ। গতকাল বুধবার ইউরোপীয় পার্লামেন্টের চার সদস্যের এক প্রতিনিধি দল ঢাকাস্থ ইইউ দূতাবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান। এর আগে তারা বাংলাদেশের পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ পর্যবেক্ষণের লক্ষ্যে তিন দিনের সফরে গত সোমবার ঢাকায় আসেন। সফরকালে তারা বাংলাদেশের পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও জাতীয় সংস্থা, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও ঊর্ধŸতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে মতবিনিময় করেন।
ঢাকায় নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়দুন বলেন, ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশি রফতানি পণ্যে জিএসপি সুবিধা বহাল রাখতে হলে আগামী জুনের মধ্যে শ্রম অধিকার সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশকে সুনির্দিষ্ট যেসব পদক্ষেপ নিতে হবে, তা দেখতেই প্রতিনিধি দলটি ঢাকায় এসেছে। প্রতিনিধি দলে রয়েছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের চার সদস্য লিন্ডা ম্যাকাভেন, আরনা লিটজ, নোবার্ট নয়সার ও আনিয়েস ইউনগেরিউস। তিন দিনের এ সফরে তারা আলোচনা করেন ট্রেড ইউনিয়ন, বিজিএমইএ, অ্যাকর্ড, আইএলওর প্রতিনিধিদের সঙ্গে। এ ছাড়া তারা কথা বলেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শ্রমপ্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, শ্রম সচিব মিকাইল শিপার ও পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকের সঙ্গে। সফরে কয়েকটি কারখানাও ঘুরে দেখেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা।
দলটির নেতা আরনা লিটজ বলেন ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা (জিএসপি) পাওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সুবিধা দেয়া এবং মানবাধিকার ও শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার ওপর ভিত্তি করে। গত বছর জেনেভায় আইএলওর একটি প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়, বাংলাদেশে শ্রমিকের যথাযথ অধিকার রক্ষা হচ্ছে না। এ ছাড়া ইউনিয়ন করারও সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে চারটি বিষয়ে কাজ করার ওপর জোর দেয় আইএলও। এগুলো হচ্ছে, কর্মপরিবেশের উন্নয়ন, ইপিজেডের খসড়া আইন, জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী শ্রম আইন ও স্বাধীন ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ দেয়া। এসব বিষয়ে আগামী ১৮ মে পরবর্তী পর্যবেক্ষণের আগে এবং জুনে আইএলওর আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের আগেই নিশ্চিত করতে হবে। তবে বাংলাদেশের কারখানার মান, শ্রমিকদের বেতন, পরিবেশ ও পরিদর্শকের স্বচ্ছতা নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে যাচ্ছি বলে মন্তব্য করে প্রতিনিধি দলটি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ নিয়ে আইএলওর অসন্তোষের প্রতিবেদনটি গত ৮ মার্চ হাতে পায় সরকার। এতে সার্বিক পরিস্থিতি উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট রূপরেখাও চাওয়া হয় সরকারের কাছে। আর ১০ মার্চ ইউরোপীয় কমিশনের পাঠানো আরেক চিঠিতে বলা হয়, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রূপরেখা না দেয়া হলে জিএসপি সুবিধার বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। এতে সাময়িক স্থগিত হতে পারে জিএসপি।