পাট সুতায় বিশ্বচাহিদার ৯২% বাংলাদেশের দখলে

পাট সুতায় বিশ্বচাহিদার ৯২% বাংলাদেশের দখলেপাট সুতায় বিশ্বচাহিদার ৯২% বাংলাদেশের দখলে
বাংলাদেশে মোট ৯৮টি পাট সুতা প্রস্তুতকারী কারখানা রয়েছে। আশির দশকের শেষ দিকে ব্যক্তিমালিকানায় এসব কারখানা গড়ে উঠতে শুরু করে। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ পাটপণ্য রফতানি হয়, তার মধ্যে পাট সুতার পরিমাণ ৬৮ শতাংশ। বিশ্বজুড়ে পাট সুতার চাহিদা রয়েছে প্রায় ছয় লাখ টন। এর মধ্যে ৯২ শতাংশ বাংলাদেশের দখলে রয়েছে। গতকাল বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএসএ) বার্ষিক সাধারণ সভায় এসব তথ্য জানানো হয়।
বিজেএসএর ৩৮তম বার্ষিক সাধারণ সভা গতকাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান আহমেদ হোসেন এতে সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে দুই ধরনের পাটকল রয়েছে। এগুলো হলো— বস্তা, চট ও সিবিসি প্রস্তুতকারী পাটকল এবং পাট সুতা প্রস্তুতকারী কারখানা। আমরা গর্বিত যে, দেশের অর্থনীতিতে পাট সুতা খাত বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ পাটপণ্য রফতানি হয়, তার মধ্যে পাট সুতার পরিমাণ ৬৮ শতাংশ। ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী কঠিন নজরদারির মধ্যে পাট সুতা তৈরি করতে হয়, যা বিদেশে অবস্থিত বিভিন্ন শিল্পের আধা প্রক্রিয়াজাত কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহূত হয়। পাট সুতার বিশ্বচাহিদার ৯২ শতাংশই বাংলাদেশের দখলে থাকলেও বস্তা, চট ও সিবিসি (কার্পেট ব্যাকিং ক্লথ) পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার নানা কারণে সংকুচিত হয়ে আসছে।
তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের পাট শিল্পের রফতানি বাণিজ্য গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে কাঁচা পাটের উচ্চমূল্য, শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন বৃদ্ধি, বিদ্যুত্ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে পাটপণ্যের উত্পাদন ব্যয় বেড়েই চলেছে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক অচলাবস্থা, আমদানিকারক বিভিন্ন দেশের মুদ্রার অবমূল্যায়ন ও বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দাভাব বিরাজ করায় পাটপণ্যের রফতানিমূল্য বাড়ছে না। পাশাপাশি কোনো কোনো ক্ষেত্রে চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় এ শিল্পে ধস নামছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এসব কারণে এরই মধ্যে ২৫টি পাট সুতাকল বন্ধ হয়ে গেছে।
আহমেদ হোসেন মনে করেন, সম্প্রতি ভারত সরকার বাংলাদেশ থেকে পাটপণ্য আমদানির ওপর অ্যান্টি-ডাম্পিং ডিউটি আরোপ করায় এ শিল্পের ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তিনি বলেন, এ শিল্পের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে ও বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে সব সদস্যকে সম্মিলিতভাবে নিজ নিজ অবস্থান থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে পাট সুতা খাতের পরিসংখ্যানভিত্তিক বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত উঠে আসে। তিনি জানান, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বিজেএসএর আওতাভুক্ত মিলগুলোর পাট সুতা রফতানির পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ৫১ হাজার ৩৩৪ দশমিক ৫৫ টন। এ সময় রফতানি বাবদ আয় হয়েছে ৪ হাজার ২৯ কোটি টাকা। আগের বছরের তুলনায় পরিমাণ ও আয় বৃদ্ধি পেয়েছে যথাক্রমে ১ দশমিক ৪৫ শতাংশ ও ৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই ১৬-ফেব্রুয়ারি ১৭) প্রাক্কলিত হিসাব অনুযায়ী পাট সুতা রফতানি হয়েছে ৩ দশমিক শূন্য ৮ লাখ টন, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৬ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশ থেকে পাটপণ্য আমদানির বিপরীতে ভারত গত ৫ জানুয়ারি অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। ফলে বাংলাদেশের পাট শিল্পের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়বে। ভারত বাংলাদেশের পাটপণ্যের অন্যতম বড় বাজার। বাংলাদেশ থেকে দেশটিতে গত বছরে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার টন পাট সুতা রফতানি হয়েছে। দুই দেশের সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে যাতে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হয়, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আহমেদ হোসেন সরকারের কাছে আবেদন জানান।
গতকালের বার্ষিক সাধারণ সভায় বিজেএসএর পক্ষ থেকে জানানো হয়, সরকারের জ্বালানি মন্ত্রণালয় ৪ জানুয়ারি জেবিও বা জুট ব্যাচিং অয়েলের মূল্য বৃদ্ধি করে একটি আদেশ জারি করেছে। এর বিরোধিতা করে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে চিঠি পাঠানো হয় ও সভা করা হয়। বিষয়টি নিরসনে সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। জেবিওর মূল্যবৃদ্ধির ফলে রুগ্ণ পাট শিল্পকে বছরে প্রায় ৭৬ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করতে হচ্ছে।
বিজেএসএ আরো জানায়, সরকার বৈচিত্র্যকৃত পাটপণ্য উন্নয়নের লক্ষ্যে এর ওপর ২০ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা বা ভর্তুকি প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু বৈচিত্র্যকৃত পাটপণ্যের কোনো তালিকা (প্রডাক্টস লিস্ট) না থাকার কারণে উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ সমস্যা দূর করার জন্য অ্যাসোসিয়েশন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় তালিকা প্রণয়নের উদ্দেশ্যে একটি কমিটি গঠন করে। কমিটি এরই মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়ন করেছে। আহমেদ হোসেন সরকারের কাছে আবেদন করেন, যাতে তালিকাটি যত দ্রুত সম্ভব অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।