বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম তীর এলাকায় বন বিভাগের গড়ে তোলা সবুজ বন বিভিন্ন যানবাহনে চলাচলকারী মানুষকে আকৃষ্ট করে। এই সবুজ বেষ্টনী বঙ্গবন্ধু সেতুর গাইড বাঁধ রক্ষা, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এই বনকে ঘিরে গড়ে উঠতে পারে পর্যটন কেন্দ্র। পাবনা বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উদ্বোধনের প্রায় ১০ বছর পর ২০০৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম তীর এলাকার ৬০০ একর ভূমি নিয়ে শুরু করা হয় সবুজ বনায়নের কাজ। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, ঝাউগাছ ইত্যাদির চারা রোপণ করা হয়। পাশাপাশি বিলুপ্ত প্রজাতির ঔষধি আমলকী, বহেড়া, হরীতকীসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা রোপণ করা হয়। এই বন এলাকায় বর্তমানে সব মিলিয়ে প্রায় ৬০ প্রজাতির গাছ রয়েছে। বন এলাকার উত্তরাংশে গড়ে তোলা হয় বঙ্গবন্ধু যমুনা ইকোপার্ক। হরিণ, বানর, খরগোশ, সাপসহ নানা প্রজাতির প্রাণী ছাড়া হয় এই বনে। শুরুতে ৩০টি হরিণ ছাড়া হলেও বর্তমানে তা বেড়ে প্রায় ৬০টিতে উন্নীত হয়েছে। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বনে ছাড়া হয়েছে অজগরসহ নানা প্রজাতির সাপ। প্রাকৃতিকভাবেই আশ্রয় নিয়েছে নানা রঙ ও জাতের পশু-পাখি। পশু-পাখির কলকাকলিতে সবসময় মুখর থাকে বন এলাকা। দূরদূরান্ত থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু দেখতে আসা ভ্রমণপিপাসুরা বনকে বিশ্রামাগার হিসেবে ব্যবহার করেন। বনের একাংশে গড়ে তোলা বঙ্গবন্ধু যমুনা ইকোপার্ক এলাকায় ভ্রমণপিপাসুদের বিশ্রামের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে গোলঘর, বৃক্ষতলে তৈরি করা হয়েছে হেলনা বেঞ্চ। নির্মাণ করা হয়েছে কয়েকটি টয়লেট। তবে টয়লেটগুলোতে এখনও পর্যাপ্ত পানি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। শীতকালে এই বন এলাকাকে ঘিরে প্রতিদিন পিকনিক করতে আসে দূরদূরান্তের হাজারো মানুষ। সিরাজগঞ্জ জেলা সদরসহ আশপাশের মানুষ সুযোগ পেলেই পরিবার-পরিজন নিয়ে বিনোদনের জন্য আসে এই এলাকায়। বন এলাকায় পিকনিকের জন্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা গেলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আরও ব্যাপক হারে লোকজন আসত এই এলাকায়। এক সময় এই এলাকায় মানুষ কেবল বঙ্গবন্ধু সেতু দেখতে আসত। বর্তমানে সেতুর পাশাপাশি বনায়নও মানুষকে আকর্ষণ করেছে। বগুড়া ঝাউতলা ইয়ং স্টার ক্লাবের সদস্য ইমরান হাসান জানান, প্রতিবছর তারা ডিসেম্বর মাসে ক্লাবের সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যরা বগুড়ার বাইরে পিকনিকে গিয়ে থাকেন। তারই ধারাবাহিকতায় গত শুক্রবার তারা বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় এসেছিলেন বার্ষিক পিকনিক করতে। উদ্দেশ্য শুধু পিকনিক করা নয়। সেতুর পশ্চিম এলাকায় গড়ে ওঠা বন ঘুরে দেখাও তাদের অন্যতম উদ্দেশ্য। এখানে এসে গোটাবন এলাকা ঘুরে তাদের ভালো লেগেছে বলে জানান। তবে পায়ে হেঁটে বন দেখার জন্য রাস্তার উন্নয়ন দরকার। বনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফরেস্টার নূর মোহাম্মদ জানান, গাইড বাঁধ রক্ষা, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম এলাকার ঘন সবুজ বন। সেতু চালুর পর এক সময় এই এলাকা শুধু বালুকাময় ছিল। বনায়নের ফলে এক ছায়া-সুশীতল পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। বনের একটি বাড়তি আকর্ষণ এই ইকোপার্ক। তবে সবুজ বনায়নকে ঘিরে বিনোদনের আরও কিছু সুযোগ সৃষ্টি করা গেলে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হতো।