স্কুল ব্যাংকিংয়ে হাজার কোটি টাকা সঞ্চয়

স্কুল ব্যাংকিং চালু হয়েছে ছয় বছরের কিছু বেশি সময় হলো। এই সময়ে স্কুল ব্যাংকিংয়ে হিসাব সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে জমাকৃত টাকার পরিমাণ। বর্তমানে দেশের ব্যাংকগুলোতে বিদ্যালয়গামী ছাত্রছাত্রীদের ব্যাংক হিসাব রয়েছে ১২ লাখের বেশি। হিসাবগুলোতে জমাকৃত টাকার পরিমাণ হাজার কোটি ছাড়িয়ে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমের আওতায় ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা ব্যাংকে ১২ লাখ ৫৭ হাজার ৩৭০টি হিসাব খুলেছে। এই হিসাবগুলোতে জমা রয়েছে এক হাজার ২০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। একটি হিসাবের বিপরীতে গড় জমা রয়েছে আট হাজার ১১৮ টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে কার্যরত ৫৭টি ব্যাংকের মধ্যে ৫৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংকে শহরের শিক্ষার্থীরা সাত লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৪টি এবং গ্রামের শিক্ষার্থীরা চার লাখ ৭৩ হাজার ৭৯৬টি হিসাব খুলেছে।

হিসাবগুলোতে গড়ে আট হাজার টাকার বেশি জমার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যানশিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক মো. আবুল বশর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অনেক অভিভাবক সন্তানের ব্যাংক হিসাবে টাকা রেখে দিচ্ছেন তার পড়ালেখার খরচ চালানোর জন্য। আবার উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে অনেক শিক্ষার্থী মা-বাবার কাছ থেকে লেখাপড়ার খরচের টাকা নিয়ে ব্যাংক হিসাবে জমা করছে। পরে প্রয়োজন অনুযায়ী খরচ করছে। এ কারণে ব্যাংক হিসাবগুলোতে গড় জমার পরিমাণ একটু বেশি। আমরা ব্যাংকগুলোকে বলেছি, স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় খোলা হিসাবগুলোর বিপরীতে ডেবিট কার্ড সুবিধা দিতে। এখন একবারে সর্বোচ্চ ২০০০ টাকা তোলা যায়। অভিভাবকের অনুমতিসাপেক্ষে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত একবারে তোলা যায়। ’

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় খোলা হিসাবগুলোর ৫৮.৬০ শতাংশই বেসরকারি ব্যাংকে। রাষ্ট্রীয় মালিকানার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে হিসাব রয়েছে ৩০.৭৩ শতাংশ। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোতে ১০.৫২ শতাংশ এবং বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকে ০.১৩ শতাংশ।

স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় হিসাব খোলার দিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক। এই ব্যাংকটিতে শিক্ষার্থীদের হিসাব রয়েছে দুই লাখ ১৩ হাজার ৬২৩টি, যা মোট হিসাবের ১৬.৯৯ শতাংশ। এর পরে অগ্রণী ব্যাংকের এক লাখ ৭৬ হাজার ৪০৩টি হিসাব রয়েছে। এ ছাড়া ডাচ্-বাংলায় শিক্ষার্থীদের এক লাখ ২৩ হাজার ১৭২টি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে ৯৯ হাজার ৪২টি এবং উত্তরা ব্যাংকে ৭৮ হাজার ৯৮১টি হিসাব রয়েছে।

আবার টাকা জমার দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। এই ব্যাংকটিতে শিক্ষার্থীদের ৩৪২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা রয়েছে, যা মোট জমা থাকা টাকার ৩৩.৬০ শতাংশ। এরপর ইসলামী ব্যাংকে ১০৬ কোটি টাকা, ইস্টার্ন ব্যাংকে ৯১ কোটি, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ৫৬ কোটি এবং রূপালী ব্যাংকে ৫৫ কোটি টাকার স্থিতি রয়েছে।

বিদ্যালয়গামী ছাত্রছাত্রীদের সঞ্চয়মুখী করে গড়ে তুলতে ২০১০ সালে ‘স্কুল ব্যাংকিং’ কার্যক্রম চালুর নির্দেশনা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২০১১ সাল থেকে হিসাব খোলা শুরু হয়। ২০১৩ সালের মার্চে স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় খোলা হিসাবগুলোতে জমার পরিমাণ ১০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। এরপর থেকে হিসাব ও জমার পরিমাণ বাড়তে বাড়তে বর্তমানে এক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

শিশু-কিশোরদের মধ্যে আর্থিক সেবা পৌঁছে দেওয়ার স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৫ সালে ‘চাইল্ড অ্যান্ড ইউথ ফাইন্যান্স ইন্টারন্যাশনাল’ (সিওয়াইএফআই)-এ ‘কান্ট্রি অ্যাওয়ার্ড’ পায় বাংলাদেশ।