দেশ রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর গুরুত্বপুর্ণ পদে থেকেও ভালুকার আঙ্গারগাড়া গ্রামে নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছেন দেশ বিদেশের নানা প্রজাতির ফলদ ও ঔষধি বৃক্ষের বাগান।আঙ্গার গাড়া গ্রামের মরহুম শামছুল হক মেম্বারের বড় ছেলে মেজর শফিকুল ইসলাম। তিনি ছুটি পেলেই চলে আসেন গ্রামের বাড়িতে। বাড়ির সামনের প্রায় দুই একর জমিতে আমরোপালী জাতের আম বাগানসহ প্রায় ৬০ প্রজাতির দেশি বিদেশি গাছ লাগিয়েছেন। ছুটির ফাঁকে বাড়ি এসে নিজেই লেগে যান গাছের পরিচর্যায়। গত রোববার সরজমিন গেলে দেখা যায়, সদ্য মুকুল ফুটা আমরোপালী আম বাগান পরিচর্যা করছেন মেজর শফিকুল ইসলাম। তার বর্তমান কর্মস্থল ঢাকা সেনানিবাস। বাগান করার পেছনে তিনি তার ইচ্ছা ও দীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। ছাত্র জীবন থেকে কৃষির প্রতি বিশেষ করে বৃক্ষ রোপন ও পরিচর্যায় তিনি সকলের প্রিয়ভাজন ছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালে তিনি বাংলাদেশ সেনা বাহিনীতে যোগ দেন। প্রশিক্ষণ শেষে ১৯৮৮ সালে কমিশন প্রাপ্ত হন। তার পিতামহ আনছার আলী সরকার ও মাতামহ ইনছান আলী সরকারের বিরল প্রজাতির ফলদ ও ঔষধি বৃক্ষের বাগান ছিল। তাদের অনুপ্রেরণাতেই তিনি বিরল প্রজাতির দেশি বিদেশি বৃক্ষের চারা সংগ্রহের নেশায় মেতে উঠেন। আর বাড়ির আঙ্গিনা ও চার পাশে রোপন করেন দেশি বিদেশি নানা জাতের মূল্যবান গাছ পালা। গত কয়েক বছর ধরে প্রায় দুই একর জমিতে বেড়া দিয়ে বিভিন্ন জাতের আমসহ ৬০ প্রজাতির গাছের কৃষি বাগান গড়ে তুলেছেন। চারা কেনা ও বেড়া দেয়া বাবদ তিনি দেড় লাখ টাকার মত বিনিয়োগ করেছেন বাগানটিতে। দুই বছর যাবৎ আমরোপালী গাছে আম আসছে। এ বছরও প্রতিটি গাছে মুকুল এসেছে। আমরোপালী সুস্বাদু হাসবিহিন মিষ্টি আম। ছোট ছোট গাছে ছোট লম্বাকৃতির আম ধরে। তিনি কর্মস্থলে থাকাকালীন সময় বাড়িতে মা সুফিয়া হক ও ছোট ভাই রফিকুল ইসলাম নান্নু কৃষি বাগানটির দেখাশোনা করে থাকেন। এক এক করে প্রতিটি গাছের সাথে নাম ও গুনাগুনের পরিচয় করালেন তিনি। ছোট্র একটি গাছে দুটি মাত্র ফল ধরেছে। ফলটির নাম মিশরীয় ডুমুর যার আরবীয় নাম ত্বীন। তিনি জানান পবিত্র কোরআন শরীফে উলি্লখিত ফলের নামের মধ্যে এটিও একটি ফল। পাশেই আফ্রিকান আতা বা সাওয়ার সফট এটি টক ফল ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহারী যা ১৫শ’ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। আলু বোখারা বিরানি রান্নায় ব্যবহার হয়। এবুকাডো পাকলে পেস্টের মতো হয় হোটেল রেস্তোরাঁয় সালাদ হিসেবে মুখ রোচক। এছারা বাগানে রয়েছে রাম বোটান, জয়ফল, তুতফল, শাওল, জাবাতি কাবা, মেংগেস্টিন, কোশিও নাট, বিলম্বি, আতাফল, বারি মাল্টা, থাই মাল্টা, তৈশর, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ব বিদ্যালয় কর্তৃক উদ্ভাবিত মিষ্টি জলপাই, লবঙ্গ, থাই সরিষা, ফলসা, জামাল ফল, জামরুল, বার মশলা, ম্যান্ডারিন বা চায়না কমলা, বারি বের, বহেরা, হরিতকি, আমলকি, ত্রিফলা, দেশী ডালিম, দেশী গাব, কারিপাতা, পলিমার পেয়ারা, কাজি পেয়ারা, দেশি পেয়ারা, মিষ্টি কামরঙ্গা, টক কামরাঙ্গা, নাটোরের মাল্টা, থাই জাম্বুরা, থাই সফেদা, দেশি সফেদা, কাউফল, বেদেনা, স্টার আপেল, অরবরই, আশফল বা কাঠলিচু , গোলাপজাম, বারি পেয়ারা, কদবেল, নাগপুরি কমলা, বঙ্ বাদাম, বার মাসি সজনে, চেরিফল ইত্যাদি। তার হাতে রোয়া বাড়ির সামনে উঠানে আফ্রিকান জাতের দুটি পাম গাছ পাশা পাশি দাঁড়িয়ে রয়েছে। শুধু এসবই নয় তার লাগানো সেগুন গাছ বিক্রি করে ৩০ লাখ টাকা উপার্জন হয়েছে। বাড়ী আসলে এলাকার বেকার যুবকদের ফলদ, ঔষধি ও কৃষি বাগান করতে তিনি উৎসাহিত করে থাকেন। শত ব্যস্ততার পরও ইচ্ছা থাকলে একজন মানুষ কাজের ফাকে অবসর মুহূর্তে নির্ধারিত পেশার বাইরেও সৃজনশীল কিছু করতে পারেন। তার উজ্জল দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন কৃষি কাজের সাথে সম্পৃক্ত থেকে সেনা কর্মকর্তা মেজর শফিকুল ইসলাম। ২০০১ সালে সি এরা লিয়েনে এক বছর ও ২০১০ সালে আইবরিকোস্টে এক বছর জাতিসংঘ মিশনে যোগ দেন।
খবরটি পঠিত হয়েছে ১০১ বার