তিস্তার চরে কুমড়া বিপ্লব

রংপুর জেলার তিস্তা নদীর বালুচরে মিষ্টিকুমড়ার ক্ষেত আর ক্ষেত। কুমড়ার হলুদ ফুলের শোভায় মুগ্ধ কৃষক; থমকে দাঁড়ায় পথিক। এই চরে এ বছর রীতিমতো কুমড়ার বিপ্লব হয়েছে। হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে।
সরেজমিন গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলর বিভিন্ন চর ঘুরে দেখা গেছে, যে বালুচরে কোনোদিন কোনো ফসল ফলানো সম্ভব হয়নি, সেই খসখসে তপ্ত বালুচর হলুদ-সবুজে ছেয়ে গেছে। ডগায় ডগায় লাল-হলুদ মিষ্টিকুমড়া সবার নজর কেড়েছে। এসব চরের কৃষক কোনোদিন ভাবতেই পারেনি, বালুচরে ফসল ফলানো সম্ভব হবে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পরামর্শে ও প্রাকটিক্যাল অ্যাকশন বাংলাদেশের সহায়তায় কৃষকের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় চলতি মৌসুমে উপজেলায় কুমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। এ উপজেলার উৎপাদিত কুমড়া বর্তমানে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় রফতানি হচ্ছে। রাজিব গ্রামের দিনেশ চন্দ্র, শফিকুল, তালুক সাহবাজ গ্রামের কৃষক আঃ খালেক, হরিচরণ শর্মা গ্রামের শফিকুল জানান, তাদের বাপ-দাদার আমলে কখনও এসব বালুচরে কোনো ফসলের চাষ হয়নি। কৃষি বিভাগ ও প্রাকটিক্যাল অ্যাকশন বাংলাদেশের সহযোগিতায় চরে কুমড়া চাষ শুরু করি। কোনো কোনো কৃষকের ২০০ থেকে ২৫০ ‘গাদায়’ কুমড়া চাষ করেছেন। নভেম্বর মাসে একটি করে গাদায় দুই থেকে তিনটি চারা রোপণ করা হয়। ২০০ গাদায় তাদের খরচ হয়েছে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা। এরই মধ্যে প্রতি চাষির কুমড়া বিক্রি হয়েছে ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকার। জমিতে যে সংখ্যক কুমড়া আছে, তাতে তাদের আরও ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার বিক্রি হবে। তারা জানান, কুমড়া চাষে বেশি সমস্যা হয় তপ্ত বালুচরে সেচ দেয়া। চরে পানি সংরক্ষণ করা খুব কঠিন হয়। কুমড়া চাষে তেমন কোনো রোগবালাই নেই। মাঝে মাঝে ছোট থাকতে কিছু কুমড়া পচে যায়। জৈব সার ছাড়া তেমন কোনো রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হয় না। সোমবার দুপুরে রাজিব চরে মাঠ পরিদর্শন করেন কাউনিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ মাহাফুজার রহমান মিঠু ও নির্বাহী অফিসার দীপঙ্কর রায়। তারা বালুচরে মিষ্টিকুমড়ার সমারোহ দেখে অভিভূত হন ও ভূয়সী প্রশংসা করেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামিমুর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫০০ হেক্টর; অর্জিত হয়েছে ৫৫০ হেক্টর। এর মধ্যে তিস্তার চরে কুমড়া চাষ হয়েছে ৭৩ হেক্টর জমিতে। অল্প খরচে অধিক ফলন এবং দাম পেয়ে চাষিরা কুমড়া ও স্কোয়াশ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।