মে মাসে পুরোপরি চালু হচ্ছে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার

আগামী মে মাসে খুলে দেয়া হচ্ছে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার। গতকাল মঙ্গলবার প্রকল্প পরিদর্শনে এসে এ তথ্য জানান এ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম আমিরুজ্জামান। তিনি বলেন, ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজের ফলে নগরবাসীকে পোহাতে হচ্ছে ঝক্কি-ঝামেলা। জনদুর্ভোগের দায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদফতরের (এলজিইডি) নয়।
এলজিইডি কাজ করছে ফ্লাইওভারে উপরে, আর নিচে কাজ করছে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। তারা মৌচাক, শান্তিনগর, রাজারবাগ এলাকার জলজট দূর করতে রাস্তার দু’পাশে ড্রেনের কাজ করায় মগবাজার, মালিবাগ, শান্তিনগর ও রাজারবাগ এলাকায় পানি জমে রয়েছে। যার ফলে রাস্তায় জমে থাকা পানি আর ড্রেনের মাটি মিলে কাদামাটিতে পরিণত হয়েছে। তবে এ দুর্ভোগ আর থাকবে না, আগামী দু’মাস নাগাদ মিলবে সুফল।
নির্বাহী প্রকৌশলী আরো জানান, আগামী ১ বৈশাখ ইস্কাটন থেকে শান্তিনগর অংশ খুলে দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের তাগিদ দিয়েছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আব্দুল মালেক। দ্রুতগতিতে কাজ হচ্ছে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি আরো বলেন, এই ফ্লাইওভার প্রকল্প এখন দৃশ্যমান হচ্ছে। শতকরা ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী মে’র মধ্যে সব ফ্লাইওভাবের সব অংশে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে।
এ ব্যাপারে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী শ্যামাপ্রসাদ অধিকারী জানান, আগামী মে মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ ফ্লাইওভারটি চালু হলে রাজধানীর যানজট কমবে। সেই সঙ্গে যাত্রীসাধারণের দুর্ভোগ লাঘব হবে। প্রধানমন্ত্রীর ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নে কাজ করছে এলজিইডি।
তিনি বলেন, ফ্লাইওভার চালু হলে মৌচাক, শান্তিনগর, মগবাজার এলাকায় কোনো যানজট থাকবে না। যেখানে তেজগাঁও সাতরাস্তা থেকে হলি হ্যামিলি পর্যন্ত আসতে ২৫ থেকে ৩০ মিনিট যানজটে বসে থাকতে হতো, এখন মাত্র ১ থেকে ২ মিনিটের মধ্যে সাতরাস্তা থেকে হলিফ্যামিলি পর্যন্ত আসতে পারেন এ সড়কে চলাচলকারী নগরবাসী।
পাশাপাশি মগবাজার থেকে মালিবাগ, মালিবাগ চৌধুরী পাড়া থেকে মৌচাক ও শান্তিনগর পর্যন্ত খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে চলাচল করতে পারবেন নগরবাসী। ফ্লাইওভারটি দ্রুত নির্মাণকাজ শেষে খুলে দেয়া হলে রাজধানীবাসী তার সুফল ভোগ করবে। রাস্তায় যানজট কমে যাবে, নগরবাসীর দুর্ভোগ লাঘব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন এলজিইডি সচিব আব্দুল মালেক।
৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভারটি সাতরাস্তা থেকে শুরু হয়ে হলি ফ্যামিলির মোড় পর্যন্ত অংশটি ইতিমধ্যে খুলে দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে বাংলামটর-মৌচাক ওয়্যারলেস অংশটিও খুলে দেয়া হয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, তিন ভাগে নির্মিতব্য এই ফ্লাইওভারটির প্রথম পর্যায়ে তেজগাঁও সাতরাস্তা থেকে শুরু করে এফডিসি রেলক্রসিং পার হয়ে মগবাজার চৌরাস্তা হয়ে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের কাছে নেমে গেছে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে বাংলামটর থেকে মগবাজার হয়ে মৌচাকে গিয়ে শেষ হয়েছে। আরেকটি ধাপে তৃতীয় তলাবিশিষ্ট ফ্লাইওভারটি রামপুরা রোড থেকে মৌচাক হয়ে একাংশ রাজারবাগ এবং অপর অংশ শান্তিনগর গিয়ে শেষ হবে।
জানা যায়, এ ফ্লাইওভারটি রিখটার স্কেলে ১০ মাত্রার ভূমিকম্প সহনীয়। প্রতিটি পিলার পাইলের গভীরতা প্রায় ৪০ মিটার গভীর। ফ্লাইওভারটির ৮টি মোড় যথাক্রমেÑ সাতরাস্তা, এফডিসি, মগবাজার, মৌচাক, শান্তিনগর, মালিবাগ, চৌধুরীপাড়া মোড় ও রমনা থানা, মগবাজার, মালিবাগ ও সোনারগাঁওসহ তিনটি রেলক্রসিং অতিক্রম করেছে। চার লেনবিশিষ্ট এ ফ্লাইওভারে ওঠানামার জন্য ১৫টি র‌্যাম রয়েছে। ফ্লাইওভার থেকে তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা, এফডিসি, মগবাজার, হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল, বাংলামটর, মালিবাগ, রাজারবাগ পুলিশ লাইন এবং শান্তিনগর মোড়ে ওঠানামা করা যাবে।
প্রকল্পের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পাওয়ায় ইউটিলিটিজের কারণে ফাউন্ডেশনের ডিজাইন পরিবর্তন, পাইল সংখ্যা বৃদ্ধি এবং ভূকম্পন সহনীয় করতে পট বেয়ারিং ও শক ট্রান্সমিশন ইউনিট (এসটিইউ) সংযোজনের ফলে প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্লাইওভার নির্মাণের আগে যানচলাচলের জন্য ব্যবহƒত রাস্তার প্রশস্ততা ঠিক রেখে ৩ তলাবিশিষ্ট ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করা হচ্ছে, যেখানে অতিরিক্ত ৪ লেনবিশিষ্ট রাস্তার সুবিধা জনসাধারণ পাবে।