সরিষার ভালো ফলনে লাভবান পাবনার কৃষক

সরিষা মাড়াই শেষে ঘরে তুলেছেন পাবনার নয় উপজেলার চাষীরা। চলছে বেচা-কেনা। দাম গত বছরের তুলনায় একটু কম হলেও আশাতীত ফলনে লোকসানের আশঙ্কা নেই। লাভের মুখ দেখছেন কৃষকের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, পাবনা জেলার নয়টি উপজেলায় চলতি রবি মৌসুমে ২৯ হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়। ফলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩৬ হাজার ১৪৪ মণ। সরিষা উত্পাদনের লক্ষ্যও পূরণ হয়েছে।
সরিষার গুণগত মান বৃদ্ধি ও বিভিন্ন মিলে সরবরাহের জন্য এখন চলছে মাড়াই করা সরিষা শুকানোর কাজ। শুকানো সরিষার দাম ভালো পাওয়া যায়। তাই পাইকাররা হাট থেকে সরিষা কিনে শুকানোর কাজ শুরু করেছেন বেশ আগেই।
বনওয়ারীনগর গ্রামের ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমান খুচরায় আর্দ্র সরিষা মানভেদে প্রতি মণ কিনেছেন ১ হাজার ৩০০ থেকে দেড় হাজার টাকায়। তিনি বলেন, ‘শুকানো সরিষার বর্তমান বাজারদর ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা সরিষা শুকিয়ে বেশি দামে তেলের বিভিন্ন মিলে বিক্রি করবেন। চলতি বছর সরিষার ফলন ভালো হওয়ায় সরবরাহ বেড়েছে। গত মৌসুমে প্রতি মণ আর্দ্র সরিষা বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়। সরবরাহের চাপে এবার দাম কিছুটা কম। তবে ভালো ফলনের কারণে ব্যবসায়ীরা কম পুঁজিতে লাভের মুখ দেখছেন। আগামীতে সরিষার দাম বাড়বে বলে আশা করছেন অনেক ব্যবসায়ী। তাই তাদের অনেকেই সরিষা গুদামজাত করতে শুরু করেছেন।’
সোনাহার গ্রামের সরিষাচাষী নুরুল ইসলাম চলতি বছর বিঘাপ্রতি জমি থেকে ছয় মণ মাঘি সরিষা পেয়েছেন। আগে একই পরিমাণ জমিতে মাঘি সরিষার ফলন পাওয়া যেত তিন-চার
মণ। গত বছরে প্রতি বিঘায় এর ফলন হয়েছিল পাঁচ মণ।
পাবনার কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম জানান, মাঘি সরিষার চেয়ে বারি-১৪ জাতের সরিষার ফলন আরো বেশি। বিঘাপ্রতি জমিতে কৃষকরা এ সরিষার সর্বোচ্চ ফলন পেয়েছেন সাত মণ পর্যন্ত। আজিজুল ইসলাম এবার এক বিঘা জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষা আবাদে ব্যয় করেছেন প্রায় ৩ হাজার ৫০০ টাকা। চলতি বছর প্রতি বিঘায় উত্পাদিত সরিষা বিক্রি করে প্রায় ৯ হাজার টাকা পাওয়া যাচ্ছে। তাই বেশি মুনাফা অর্জনের আশা করছেন তিনি।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিভূতি ভূষণ সরকার জানান, চলতি বছর জেলায় সরিষার ফলন ভালো হয়েছে। ফলন বাড়ানোর জন্য ক্ষেতের পাশে মৌ-বাক্স বসানো হয়েছিল। মৌমাছি পরাগায়ণে সহায়তা করেছে। ফলে ফলন বেড়েছে। এ পদ্ধতিতে লাভবান হচ্ছেন কৃষক ও মৌ ব্যবসায়ী উভয়েই। মৌ ব্যবসায়ীরা এখান থেকে উত্পাদিত মধু বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে ভালো দাম পাচ্ছেন।