গাছে আমের মুকুল স্বপ্ন বুনছেন চাষি

বছর ঘুরে সময়ের পালাবদলে ঋতুরাজ বসন্ত এসেছে। ফাগুনের সঙ্গে শীতের তীব্রতাও নিয়েছে বিদায়। একই সঙ্গে আমের জেলা রাজশাহীর আমের বাগান মুকুলে ছেয়ে গেছে। নগরীসহ জেলার আম বাগানে মুকুল আর গুটি গুটি আম দেখে স্বপ্নও বুনছেন চাষিরা। চলার পথে আম গাছের মগডালে তাকিয়ে পথচারীদের চোখও জুড়িয়ে যাচ্ছে। আমের মুকুলে ভিড় করছে মৌমাছি। মুকুলের মিষ্টি ঘ্রাণ কাছে টানছে তাদের। গাছের প্রতিটি শাখা-প্রশাখায় ভ্রমরের সুরব্যঞ্জনা। ফলে ব্যাকুল হয়ে উঠছে আমপ্রেমীদের মন। আম বাগান মালিক ও চাষিদের মুখে হাসি ফুটছে। স্বপ্নপূরণের প্রত্যাশায় দিন-রাত আম গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। বৃহত্তর রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বাগানের চিত্র এটি।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গাছে গাছে নানা আমের মুকুলের মিষ্টি ঘ্রাণ বের হচ্ছে। আগে আসা মুকুলে আমের গুটি ধরতে শুরু করেছে। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী জেলায় ১৬ হাজার ৫১৯ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। কিন্তু রাজশাহীতে গেল বছর ১৬ হাজার ৫৮৩ হেক্টর জমিতে আমের বাগান ছিল। বিভিন্ন উপজেলায় প্রতি বছরই নতুন নতুন আম বাগান গড়ে উঠছে। তাই এবার আবাদের পরিমাণও কিছুটা বাড়বে। এবার শীত খুব তাড়াতাড়ি কমে যাওয়ায় প্রতিটি বাগানেই কমবেশি গাছে আগাম মুকুল এসেছে। মুকুলে গুটি গুটি আমও চলে আসছে। এদিকে গাছে গাছে আগাম মুকুল আসায় বেজায় খুশি রাজশাহী অঞ্চলের আম চাষিরা। আম গাছের প্রাথমিক পর্যায়ের পরিচর্যাও করছেন। মুকুলের মাথাগুলোকে পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য ওষুধ স্প্রে করা হচ্ছে। এ অঞ্চলে নিয়মিত জাত ল্যাংড়া, গোপালভোগ, ক্ষীরসাপাতি ও আশ্বিনা জাতের আম গাছ বেশি। সেই সঙ্গে গবেষণাকৃত বারি-৩, বারি-৪ জাতের বাগানও রয়েছে। রাজশাহী অঞ্চলে প্রায় ২৫০ জাতের আমের ফলন হয়। তবে এবার জাত আম গোপালভোগ, ল্যাংড়া, ক্ষিরসাপাতি, বোম্বাই, হিমসাগর, ফজলি, আম্রপালি, আশ্বিনা, ক্ষুদি, বৃন্দাবনী, লক্ষ্মণভোগ, কালীভোগ, তোতাপরী, দুধসর, লকনা ও মোহনভোগ জাতের আম বেশি চাষ হয়েছে। রাজশাহী নগরীর পুলিশলাইন, ভেড়িপাড়া, মালোপাড়া, ছোটবনগ্রাম, ভদ্রা ও মেহেরচ-ী এলাকার অধিকাংশ গাছেই আমের মুকুলে ভরে গেছে। চাষিরা আশা করছেন, এবার আমের ফলন ভালো হবে।
রাজশাহীর ছোটবনগ্রাম এলাকার আম চাষি ফরিদ আলী শেখ বলেন, এ বছর শুরু থেকেই শীতের তেমন তীব্রতা নেই। মধ্য ডিসেম্বরে তাপমাত্রা নেমে গিয়েছিল। তবে তা স্থায়ী হয়নি। এছাড়া ঘন কুয়াশার আধিপত্য নেই শীত মৌসুমজুড়েই। তাই এবার গাছে আগাম মুকুল এসেছে। তবে ফেব্রুয়ারি মাঝামাঝিতে বেশি পরিমাণ মুকুল দেখা দিয়েছে। এবার আমের ভালো ফলন হবে বলেই মনে করছেন তিনি। রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক দেব দুলাল ঢালি বলেন, রাজশাহী জেলায় ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে আমের বাগান রয়েছে। প্রতিনিয়ত আমের বাগান বাড়ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার আম গাছে খুব একটা কীটনাশক প্রয়োগের প্রয়োজন দেখা দেবে না। তবে ছত্রাকজনিত রোগে আমের মুকুল ও গুটি আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে বাগানে দুই দফা ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। যে কারণে ছত্রাক জাতীয় রোগ থেকে আমের মুকুলগুলো রক্ষা হবে। আমের ফলন বাড়বে। প্রথম দফা মুকুলে ফুল ফোটার আগে ইমিডা ক্লোরোফিড এবং ম্যানকোজেব গ্রুপের কীটনাশক স্প্রে করলে পোকার আমক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে এবং আমের মুকুল ঝরে পড়া রোধ করবে। বর্তমানে যেসব বাগানে আগে মুকুল এসেছিল তাতে মটরদানার মতো গুটি এসেছে।