প্রবাসী অধ্যুষিত মৌলভীবাজারের সাত উপজেলায় প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ জমি অনাবাদি থাকে। এতে এ অঞ্চলে সবজিসহ নানা ফসলের ঘাটতি দেখা দেয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশক্রমে সিলেট বিভাগে অনাবাদি জমিগুলো আবাদের কার্যক্রম গ্রহণ, বাস্তবায়ন ও তদারকির দায়িত্ব নেয় বিভাগীয় কৃষি উন্নয়নবিষয়ক কোর কমিটি। এর মধ্যে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে অনাবাদি জমি আবাদের আওতায় আনতে পাইলট প্রকল্প হাতে নিয়েছে কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি উন্নয়ন কোর কমিটি। উপজেলার দুইটি ইউনিয়ন যথাক্রমে আদমপুর ও পতনউষারের শতভাগ পতিত জমি বোরো আবাদের আওতায় আনার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এতে অন্তত ৫০০ কৃষক উপকৃত হবেন। এ প্রকল্প সফল হলে পর্যায়ক্রমে উপজেলার বাকি ইউনিয়নে এ পদ্ধতি চালু করা হবে। এতে উপজেলায় উৎপাদিত কৃষিপণ্য চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করা সম্ভব হবেÑ উপজেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি উন্নয়ন কোর কমিটি সূত্রে জানা যায়, কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ও পতনউষার ইউনিয়নে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ জমি অনাবাদি থেকে যায়। এসব জমির কিছু অংশে আউশ কিংবা আমন ফসল হলেও সেচ সুবিধা না থাকায় ৪ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে কোনো ধরনের সবজি কিংবা ফল জাতীয় ফসল উৎপাদন হয় না। উপজেলা কৃষি উন্নয়ন কোর কমিটি সমন্বয় সভায় এ দুইটি ইউনিয়নকে মডেল ইউনিয়ন ঘোষণা করে এখানে প্রয়োজনীয় সেচ সুবিধা ও বীজ প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ দুইটি ইউনিয়নে ১৫টি গ্রামের অনাবাদি জমির মালিকদের ২০টি ভাগে বিভক্ত করে প্রতিটি গ্রুপে ২৫ জন কৃষক অন্তর্ভুক্ত করে ২০টি সেচ পাম্প বিতরণ করা হয়েছে। এতে দুইটি ইউনিয়নের প্রায় ৫০০ কৃষক উপকারের আওতায় আসবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সামসুদ্দিন আহমেদ জানান, উপজেলার মধ্যে আদমপুর ও পতনউষার ইউনিয়নে বোরো চাষের সময় সবচেয়ে বেশি জমি অনাবাদি থাকে। অথচ এসব জমিতে সেচ সুবিধার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ ধান, শাকসবজি ও ফলজাতীয় ফসল উৎপাদন সম্ভব। আমরা এ বিষয়টি চিন্তা করে আদমপুর ও পতনউষার ইউনিয়নকে বেছে নিয়েছি। কৃষককে প্রয়োজনীয় সাপোর্ট ও সেচ সুবিধা প্রদান করা হবে। প্রাথমিকভাবে আদমপুর ইউনিয়নের ২ হাজার ২৯১ হেক্টর ও পতনউষারে ২ হাজার ৬৭৮ হেক্টর অনাবাদি জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। সেচ সুবিধা না থাকায় আউশ ধান ছাড়া অন্য কোনো ফসল আবাদ হয় না। তাই এ দুইটি ইউনিয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে কৃষিপণ্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফসলের মধ্যে শিম, লাউ, কদু, বরবটি, টমেটো, শসা, লেবু, বেগুন, হেলেঞ্চাসহ নানা শাকসবজির পাশাপাশি ফলজাতীয় আনারস, লিচু, পেঁপে, জলপাই ইত্যাদি চাষাবাদ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হবে।
আদমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আবদাল হোসেন জানান, তার ইউনিয়নের কোনাগাঁও, আদকানী, পূর্বজালালপুর, বনগাঁওসহ ১০টি গ্রামের কৃষকের মধ্যে সেচ পাম্প বিতরণ করা হয়েছে। এতে প্রায় ৩০০ কৃষক জমি আবাদের সুযোগ পেয়েছে। কমলগঞ্জ উপজেলায় ১৮ হাজার ৬২ হেক্টর আবাদি জমি রয়েছে। এসব জমিতে শুধু আউশ ও আমন ফসল হয়। পর্যাপ্ত সেচ সুবিধা পেলে ফসলের উৎপাদনও অনেক গুণ বেড়ে যাবে বলে আশা করছে উপজেলা কৃষি উন্নয়ন কোর কমিটি। এদিকে পাইলট প্রকল্পের আওতায় আসা ইউনিয়ন দুইটির সুবিধাভোগী কৃষকের মধ্যে উৎসাহ দেখা দিয়েছে। তারা জমি চাষে বেশ উৎসাহী হয়েছেন। আদমপুর ইউনিয়নের ঘোড়ামারা গ্রামের উপকারভোগী কৃষক বিশ্বজিত সিংহ জানান, বিগত সময়ে তার জমিগুলো অনাবাদি থাকত। পাইলট প্রকল্পে এখন আবাদের উপযোগী হওয়ায় আমরা খুশি।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক জানান, এরই মধ্যে ইউনিয়নের জন্য ১৯টি সেচ পাম্প বিতরণ করা হয়েছে। এ সেচ পাম্পের অর্থ উপজেলা পরিষদ থেকে খরচ করা হয়েছে। এছাড়া কৃষকের মধ্যে বিনামূল্যে বিভিন্ন জাতীয় বীজ প্রদান করা হচ্ছে। কৃষককে উৎসাহ দিতে এবং তাদের উদ্বুদ্ধ করতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি জানান, এ ইউনিয়ন দুইটিতে সফলতা পাওয়া গেলে পর্যায়ক্রমে সব ইউনিয়নে এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হবে।