দুই শতাধিক নারীর জীবিকা কুমড়া বড়ি

কুষ্টিয়ার খোকসায় বানিজ্যিক ভিত্তিতে তৈরি হচ্ছে মাসকলাই ডালের কুমড়া বড়ি। উপজেলার কমলাপুর গ্রামের ২ শতাধিক মহিলার শীতের প্রধান ব্যবসা এই কুমড়া বড়ি। কুষ্টিয়ার জেলার ৬ উপজেলা সহ রাজবাড়ী ও ঝিনাইদহ জেলায় বড়ি সরবরাহ করেন কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার কমলাপুর গ্রামের কুমড়া বড়ি ব্যবসায়ীরা।
খোকসা উপজেলার কমলাপুর গ্রামের বিধবা সেলিনা খাতুন (৫৫) প্রায় ১৬ বছর ধরে কুমড়া বড়ির ব্যবসা করছেন। প্রথম দিকে পাটাতে মসকলাইয়ের ডাল বেঁটে কুমড়া বড়ি তৈরি করতে হতো। পরিশ্রম বেশি হলেও মাসকলাইয়ের ডাল এবং কুমড়ার দাম কম থাকায় লাভ বেশি হতো। বাজারে কুমড়া বড়ির চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় কমলাপুর গ্রামের বারিক শাহ্ , বাচ্চু শাহ্ , আজিজুল শাহ্ , সেলিনা খাতুন ডাল ভাঙ্গানোর মেশিন কিনেছেন। নিজেদের ডাল ভাঙ্গানো ছাড়াও যারা কুমড়া বড়ি নিজেদের প্রয়োজনে তৈরি করেন তাদের ডাল ভাঙ্গান তারা। মৌসুমে ৮ টাকা কেজি দরে প্রতি দিন গড়ে প্রতিটি মেশিনে ৬০/৭০ কেজি ডাল ভাঙ্গানো হয় বলে জানান কমলাপুর গ্রামের ডাল ভাঙ্গানো মেশিনের মালিক বারিক শাহ্ । কর্তিক মাস থেকে শুরু হয়ে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত চলে ডাল ভাঙ্গানোর এবং কুমড়া বড়ি তৈরির কাজ।
কুমড়া বড়ি তৈরি করে স্বাবলম্বী কমলাপুর গ্রামের মৃত আব্দুল লতিফ শাহ্র স্ত্রী সেলিনা খাতুন (৫৫) বলেন, স্বামী লতিফ শাহ্ জীবিত থাকতে ঢাকায় রিঙ্া চালাতেন। ৩ ছেলে ১ মেয়ে নিয়ে তিনি বাড়িতে থাকতেন। স্বামীর আয়ে সংসার চলত না। সংসারের স্বচ্ছলতার জন্য তিনি প্রতিবেশিদের দেখাদেখি কুমড়া বড়ি তৈরির কাজ শুরু করেন। সে সময় শুধু খোকসা বাজারের কয়েকটি দোকানে কুমড়া বড়ি সরবরাহ করতেন তিনি। ৩ বছর আগে স্বামী আব্দুল লতিফ শাহ্ মারা গেলে সংসার চালানোর জন্য বানিজ্যিক ভিত্তিতে কুমড়া বড়ি তৈরি শুরু করেন। ৩০ হাজার টাকা ব্যয় করে তিনি ডাল ভাঙ্গানোর মেশিন বসিয়েছেন। কমলাপুর পুরাতন বাজারের পাশে ৩ শতাংশ জমি কিনে নিজে বাড়ি করেছেন। মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন। বড় ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছেন। এখন সেলিনা খাতুন নিজে ২ জন শ্রমিক নিয়ে বড়ি তৈরির কাজ করেন। এখন মৌসুমের শেষ সময়। গত বুধবার তিনি ২৫ কেজি ডালের বড়ি তৈরি করেছেন। বড়ি বাজারজাত করনের বিষয়ে জানতে চাইলে সেলিনা খাতুন বলেন বড়ি বসানোর পর তিন দিন রোদে শুকিয়ে বস্তায় ভরে ভ্যানে করে খোকসা, কুমারখালী, পান্টি এবং রাজবাড়ী জেলার পাংশা এবং ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ করা হয়।
এক কেজি মাসকলাইয়ের ডালের পাইকারী দাম ৮০ টাকা। এক কেজি কুমড়ার দাম ২৫ টাকা। এক কেজি উন্নতা মানের কুমড়া বড়ির পাইকারি দাম ২০০ টাকা। মাসকলাইয়ের ডালের সাথে বড় মটরের ডাল মিশিয়ে সামান্য পরিমান কুমড়া দিয়ে তৈরি কুমড়া বড়ির পাইকারী দাম ১৫০ টাকা এবং কুমড়া ছাড়া শুধু মাসকলাইয়ের ডালের সাথে বিভিন্ন মসলা মিশিয়ে তৈরি করা বড়ির পাইকারী দাম ১০০ টাকা। ২৫ কেজি ডালের তৈরি বড়িতে সেলিনা খাতুনের লাভ হয় ৩০০/৩৫০ টাকা। মৌসুমে প্রতি মাসে গড়ে ১০ বার বড়ি তৈরি করেন তিনি। সকল খরচ বাদ দিয়ে গড়ে লাভ হয় ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। বছরের অন্যান্য সময় ছাগল পালন, নাইলনের সুতার খোশা, কাগজের শপিং ব্যাগ তৈরির কাজ করেন তিনি।
গত শুক্রবার সকালে কমলাপুর গ্রামে গিয়ে দেখা মেলে অপর এক কুমড়া বড়ি ব্যবসায়ী রাশিদা খাতুন(৩৫) সাথে। তিনি তৈরি করছেন ৩০ কেজি ডালের বড়ি। কুমড়া ব্যবহার করছেন ২০ কেজি। স্বামী মহির উদ্দিন শাহ্ , মেয়ে কাকলী (১৪) এবং একজন শ্রমিক লাবনী (১৫) কে নিয়ে তিনি লেগে পড়েছেন কুমড়া বড়ি তৈরির কাজে। রাশিদা খাতুন সাংবাদিকদের বলে, বছরের শীতের ৫ মাস তিনি কুমড়া বড়ির ব্যবসা করেন। স্বামী মহির উদ্দিন শাহ্ ব্যটারী চালিত ভ্যান চালান। অবসরে কন্যাকে নিয়ে চৈত্র থেকে আষাঢ় মাস পর্যন্ত কাশন তৈরি করেন। বর্ষা মৌসুমে কাগজের ব্যাগ তৈরির কাজ করেন।