উন্নয়নে কোনো বিশেষ এলাকা বিবেচ্য নয়

বগুড়ায় এক জনসভায় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার কোনো একটি বিশেষ এলাকার নয়; সারা দেশের উন্নয়নেই নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যদিও খালেদা জিয়া তাঁর শাসনামলে গোপালগঞ্জকে উন্নয়নের ধারা থেকে বাদ দেন।

গতকাল রবিবার বিকেলে বগুড়ার আদমদিঘীতে সান্তাহার স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

একই সঙ্গে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে পুনর্নির্বাচিত করার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালের মধ্যে যে নির্বাচন অনুুষ্ঠিত হবে, আপনারা যদি এ উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চান তাহলে সেই নির্বাচনে আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করে দেবেন, যাতে আমরা পুনরায় আপনাদের সেবা করার সুযোগ পাই। ’

বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশ আবারও পিছিয়ে যেতে পারে—এ আশঙ্কা ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি শুধু এটুকুই বলব, নৌকা যখন ক্ষমতায় আসে তখন বাংলাদেশের মানুষ কিছু পায়। আর ধানের শীষ যখন ক্ষমতায় আসে তখন ধানে চিটা ধরে যায় এবং দেশে খাদ্যাভাব দেখা দেয়। দেশে লুটপাট, দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সৃষ্টি হয়। ’

সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এগুলো যদি বাস্তবায়ন করতে হয়, তাহলে সরকারের ধারাবাহিকতা থাকতে হবে। ওই লুটেরা, সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদী, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এলে এ দেশের কোনো উন্নয়ন হবে না। সবই থেমে যাবে, তারা নিজেরাই খাবে। কাউকে দেবে না। ’ তিনি বলেন, ‘আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসা মানে সবাইকেই দেবে, সবার জন্য উন্নয়ন হবে, প্রত্যেকের জীবন সুন্দর ও উন্নত হবে। ’

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার নির্দেশে তাঁর সন্ত্রাসী নেতাকর্মীরা সারা দেশে জ্বালাও-পোড়াও করে জাতীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে। তাই দেশের মানুষ আর বিএনপি-জামায়াতের ধ্বংসাত্মক রাজনীতি দেখতে চায় না। খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান হাওয়া ভবন করে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছিল। তাই দেশের মানুষ আর তাদের দেখতে চায় না।

আগামী নির্বাচনেও নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এ নৌকায় ভোট দিয়েই এ দেশ স্বাধীনতা পেয়েছে। এ নৌকাতেই যখন ভোট দিয়েছে তখন দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে, এ নৌকাতে ভোট দেওয়াতেই আজকে মানুষের জীবনে সচ্ছলতা এসেছে। আজকে নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্যই মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা আছে, প্রত্যেক উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত পাকা রাস্তা করার জন্য ইতিমধ্যেই এলজিইডি থেকে আমরা একটি প্রকল্প হাতে নিয়ে একনেকে পাশ করে দিয়েছি। শিগগিরই যার কাজ শুরু হয়ে যাবে। আমরা সমগ্র বাংলাদেশ ম্যাপ করে নিয়ে পরিকল্পনামাফিক উন্নয়নের কাজ করে যাচ্ছি। যার ছোঁয়া আপনারা পাচ্ছেন, আপনারা পাবেন। ’

আদমদীঘি উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আনছার আলী মৃধার সভাপতিত্বে জনসভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ভূমি মন্ত্রী শামছুর রহমান শরীফ ডিলু, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রহমান, আবু সাঈদ আল মাহমুদ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, জাতীয় সংসদের হুইপ শহীদুজ্জামান সরকার, সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান, সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান, সংসদ সদস্য আব্দুল মালেক, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন প্রমুখ।

সান্তাহারে অত্যাধুনিক খাদ্য গুদাম নির্মাণ করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে এবং দীর্ঘ সময় ধরে চাল মজুদ রাখতে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এই প্রথম অত্যাধুনিক খাদ্য গুদাম নির্মাণ করা হয়েছে। যেখানে ২৫ হাজার টন চাল মজুদ থাকবে। এ চাল রাখা যাবে দু-তিন বছর ধরে। এতে করে আপদকালীন দেশে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিলে তা মুকাবিলা করা যাবে। ’ তিনি বলেন, ‘কৃষকদের উন্নয়নে বর্তমান সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে। অথচ বিএনপি আমলে সারের জন্য ১৮ জন কৃষককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। আজ সারের কোনো অভাব নেই। পাঁচবার আমরা সারের দাম কমিয়েছি। সে কারণে আজ কৃষককে সার ও উন্নত বীজের জন্য চিন্তা করতে হয় না। আমরা দুই কোটিরও বেশি কৃষককে কৃষি উপকরণ দিয়েছি। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর আমরা দেশে ১৫ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট বিদু্যুৎ উৎপাদন করেছি। দেশের ৮০ ভাগ মানুষ এখন বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। ’

এদিকে সান্তাহারে প্রধানমন্ত্রীর প্রথম আগমনকে ঘিরে ছোট্ট এই পৌর এলাকায় সাজ সাজ রব পড়ে। জনসভায় যোগ দিতে দলীয় নেতাকর্মীদের স্রোত নামে সকাল থেকে। দলীয় প্রতীক নৌকা, রংবেরঙের টুপি, ব্যানার, নানা ধরনের বাদ্যযন্ত্র, গ্রামীণ বিভিন্ন ঐতিহ্যসহ নেচে-গেয়ে নেতাকর্মীরা জনসভাস্থলে আসে। জনসভাকে ঘিরে স্থানে স্থানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে নিরাপত্তা চৌকি বসানো হয়।

প্রধানমন্ত্রী বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটে বক্তব্য দিতে মঞ্চে ওঠেন। টানা ৪০ মিনিট বক্তব্য দেন তিনি। এর পরপরই প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় ফিরে যান।

এর আগে গতকাল দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে হেলিকপ্টারযোগে সান্তাহারে এসে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী।