পতিত জমিতে কুল চাষ করে হাসি ফুটেছে শেরপুরের নকলা উপজেলার হাজারো কৃষকের মুখে। উৎপাদিত কুল বিক্রি করে দিন বদল করেছেন তারা। কুল চাষ ও বিক্রি করে অভাবকে জয় করতে পারায় খুশি এখনকার কৃষক। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অফিসের সামনে চলে কুল বিক্রি। এর বাইরে বিভিন্ন বাজারেও চলে কুল বিক্রি। সব মিলিয়ে উপজেলার দুই শতাধিক স্থানে দৈনিক প্রায় ৮ হাজার কেজি কুল বিক্রি করা হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সরেজমিন দেখা যায়, এসব স্থানে আপেল, নারিকেল, বাউ, বাউ সুন্দরী, টমা কুলসহ দেশীয় জাতের টক-মিষ্টি বিভিন্ন কুল বেশি বেচাকেনা হচ্ছে।
জানা যায়, উপজেলার তিনটি নদী, ১০টি বিল ও পাঁচটি খালের তীরবর্তী চন্দ্রকোণা, চরঅষ্টধর, পাঠাকাটা, টালকী, বানেশ্বরদী, উরফা ও গনপদ্দী ইউনিয়নসহ ১ হাজার ৭৫০ একর জমি দীর্ঘদিন ধরে অনাবাদি ছিল। এসব জমিতে উন্নত কোনো শস্য বা ফসল জন্মাত না। অনাবাদি এসব জমিতে কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন জাতের কুলের বাগান গড়ে উঠেছে। এসব বাগানের কুল এখন স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা শহরের পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে।
কুল চাষি গনপদ্দি উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক নাজমুল ইসলাম বলেন, তিনি ২০১৩ সালে ৩ বিঘা জমিতে কুল চাষ শুরু করেন। তাতে মাটি কেটে জমি সমতল করা, চারা ক্রয় ও মজুরিসহ প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে ১ লাখ টাকা। ওই বছরই লাভ হয় ৩ লাখ টাকা। পরের বছর আরও ২ বিঘা জমিতে কুল চাষ বৃদ্ধি করেন তিনি। বর্তমানে তার কুল বাগান থেকে প্রতি বছর ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা আয় হচ্ছে। তিনি জানান, প্রথম বছরে যা ব্যয় হয়, তার পরের বছর থেকে খরচ অর্ধেকে নেমে আসে এবং পর্যায়ক্রমে উৎপাদনও কমতে থাকে, তবে লাভের পরিমাণ একই থাকে।
স্থানীয় পাইকাররা বলেন, ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা করে প্রতি মণ কুল কিনেন তারা। প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা করে বিক্রি করায় মণপ্রতি তাদের লাভ থাকে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা।
কুল বাগানের শ্রমিক পাঠাকাটার হাসু ও আলালসহ অনেকেই জানান, তাদের মতো উপজেলায় অন্তত ২০০ থেকে ৩০০ শ্রমিক রয়েছেন, যারা কুল বাগানে কাজ করে সে উপার্জন দিয়ে সংসারের খরচ চালান। নকলা বাজারের খুচরা কুল বিক্রেতা পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী শেফালি ও তানজিনা জানায়, তাদের বড় ভাই না থাকায় তারা সকাল ও বিকালে বাবাকে কুল বিক্রিতে সহযোগিতা করে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর বলেন, মৌসুমী ফলের মধ্যে কুল চাষের জন্য নকলার মাটি অতি উত্তম। এখানকার অনাবাদি জমিতে কুল চাষ করে যে কেউ ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারেন। এতে মাটির সর্বোচ্চ ব্যবহারসহ স্বাবলম্বী হওয়া সহজ। কৃষি অফিস থেকে কুল চাষিদের পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে বলেও তিনি জানান।