নকশিকাঁথায় নারীদের জীবন-জীবিকা

মাগুরা সদরের রায় গ্রামে নারীদের জীবন-জীবিকা এখন নকশিকাঁথায়। গ্রামীণ নারীদের নিপুণ হাতে সেলাই নকশিকাঁথা এখন সারা দেশে সমাদৃত। সদরের রায় গ্রামে শতাধিক নারী বাড়ির কুঠিরে বসে অবসর সময়ে এ নকশিকাঁথা সেলাই করছেন। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ব্র্যাকের আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশন গ্রামীণ নারীদের আত্মনির্ভরশীল ও স্বাবলম্বী করতে ৩০ বছর ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় এ কাজ করছে। গ্রামীণ নারীদের এ নকশিকাঁথা সেলাইয়ের বিভিন্ন রঙিন সূতা, সূচ, কাপড় ও অন্যান্য উপকরণ এ ফাউন্ডেশন সরবরাহ করে থাকে। দীর্ঘদিন ধরে রায় গ্রামের প্রায় শতাধিক দুস্থ নারী এ পেশায় যুক্ত হয়ে জীবন-জীবিকার উপর নির্ভর করছে। এ পেশা থেকে অর্জিত অর্থ নিয়ে তাদের সন্তানদের পড়ালেখার খরচ চালাচ্ছে। কাঁথার কারিগররা ৪-৫ জনের একটি দলে বিভক্ত হয়ে বাড়ির কুঠিরে ১ সপ্তাহে একটি নকশিকাঁথা সম্পূর্ণরূপে তৈরি করে। নকশিকাঁথা সেলাইয়ের জন্য বিভিন্ন রঙের সূতা ব্যবহার করা হয়। প্রতিটি কাঁথায় সূচ-সূতার সুন্দর বুননের মধ্যে ফুটে ওঠে ফুল-পাতা, লতা গাছ, চাঁদ-তারা, পশু-পাখির সুন্দর সুন্দর ডিজাইনের আল্পনার বাহারী কাজ। এই কাঁথা বিক্রির জন্য কাঁথা কারিগরদের বাইরে যেতে হয় না কাঁথার কারিগর নুরজাহান জানান, তিনি দু’বছর ধরে আমি এই নকশিকাঁথা শিল্পের সঙ্গে জড়িত। নকশিকাঁথা থেকে অর্জিত অর্থ দিয়ে তিনি ঘরসংসার সামলাচ্ছেন। তাছাড়া এ অর্থ দিয়ে তিনি ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচও বহন করছেন। কাঁথা তৈরির সঙ্গে জড়িত জোৎসা বেগমসহ শাহিদা জানান, ঘরসংসারের কাজ সামলিয়ে অবসর সময়ে আমরা নকশিকাঁথা সেলাই করছি। কাঁথা তৈরির বিভিন্ন উপকরণ ও অন্যান্য জিনিস ব্র্যাকের আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশন সরবরাহ করে থাকে। কাঁথা প্রস্তুত হওয়ার পর তা বিক্রির জন্য আমাদের বাইরে যেতে হয় না। ফাউন্ডেশনই নগদ অর্থ দিয়ে আমাদের কাছ থেকে ক্রয় করে নিয়ে যায়। কাঁথাপ্রতি আমরা ফাউন্ডেশনের কাছ থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা করে পেয়ে থাকি। উক্ত টাকা পাওয়ার পর আমরা ভাগ করে নিই। অর্থের উপার্জন ভালো থাকায় বর্তমানে আমাদের পাশাপাশি এই গ্রামের অনেক নারী এই পেশাকে বেছে নিয়েছে। ব্র্যাকের কর্মকর্তা নুর কামাল জানান, এই পেশা গ্রামে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। গ্রামীণ নারীদের স্বাবলম্বী করতে ব্র্যাক নানামুখী কাজ করছে। তার মধ্যে নকশিকাঁথা তৈরির কাজ ব্র্যাক ৩০ বছর ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় করছে। গ্রামীণ নারীদের নিপুণ হাতে তৈরি এই নকশিকাঁথা আমরা গ্রাম থেকে ক্রয় করে ঢাকার অভিজাত দোকান আড়ংসহ বিভিন্ন আধুনিক শপিং মলের দোকানের মালিকদের নিকট বিক্রি করি। বর্তমানে এটির চাহিদা বেড়েছে। আমরা ঢাকার পাশাপাশি বাইরের জেলাগুলোতে নকশিকাঁথা বিক্রির কাজ শুরু করেছি। মাগুরা জেলা ব্র্যাক প্রতিনিধি রোকেয়া বেগম জানান, ব্র্যাক যেসব সৃজনশীল কাজ করে তার মধ্যে নকশিকাঁথা সেলাই অন্যতম। গ্রামীণ নারীরা অনেক পরিশ্রম করে এই নকশিকাঁথা সেলাই করেন। এরা সবাই আমাদের ব্র্র্যাকের পল্লী সমাজের সদস্য। মাগুরার রায় গ্রামের অনেক নারী এ পেশাকে বেছে নিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছে। আমরা আশা করি ভবিষ্যতে আরো নারী এ পেশায় এগিয়ে আসবে।