গন্তব্যে পৌঁছার সময় কমছে ৯৫% ট্রেনের

গন্তব্যে পৌঁছার সময় কমছে ৯৫% ট্রেনেরগন্তব্যে পৌঁছার সময় কমছে ৯৫% ট্রেনের
আগামী ১ মার্চ থেকে নতুন ওয়ার্কিং টাইমটেবিল (ডব্লিউটিটি) চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ৫১তম এ টাইমটেবিল কার্যকর হলে সারা দেশে রেলের সময়সূচিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। গন্তব্যে পৌঁছার সময় কমবে ৯৫ শতাংশ ট্রেনের। এতে রাষ্ট্রায়ত্ত এ পরিবহনে যাত্রীসেবার মান যেমন বাড়বে, তেমনি রাজস্ব আয়েও বড় ধরনের অগ্রগতি আসবে বলে মনে করছে রেল কর্তৃপক্ষ।
রেলওয়ে-সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমান সরকারের সময়ে রেলপথে বিপুল বিনিয়োগ হয়েছে। নতুন লাইন নির্মাণের পাশাপাশি পুরনো লাইন সংস্কার করা হয়েছে। যুক্ত হয়েছে নতুন কোচ ও ইঞ্জিন। অনেকগুলো প্রকল্প বাস্তবায়নের পরও প্রকৌশলগত জটিলতায় দীর্ঘদিন ধরে ট্রেন পরিচালনার সময়সূচি হালনাগাদ করা হয়নি। যদিও প্রতি বছর তা হালনাগাদ করার কথা। প্রায় দুই বছর ধরে পুরনো ৫০ নম্বর টাইমটেবিল দিয়ে ট্রেন পরিচালনা করে আসছিল রেলওয়ে। ফলে লাইন নির্মাণ ও সংস্কারের পরও বাড়ানো যায়নি ট্রেনের গতি। তবে দেরিতে হলেও নতুন টাইমটেবিল চালুর মাধ্যমে এ অবস্থার পরিবর্তন আসবে।
এ বিষয়ে রেলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) হাবিবুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, নতুন টাইমটেবিল প্রণয়নের প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত। বেশকিছু ট্রেনের সময়সূচিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এক্ষেত্রে যথাসম্ভব গন্তব্যে পৌঁছার সময় কমানোর চেষ্টা করা হয়েছে। আশা করি, নতুন টাইমটেবিল প্রণয়ন হলে রেলের যাত্রীসেবার মান আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে।
এক দশক আগেও দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রুট ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ৫ ঘণ্টায় ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছত। কিন্তু পুরনো ট্র্যাক ও অবকাঠামোগত অগ্রগতির অভাবে বর্তমানে এ পথে যাত্রায় ৬-৮ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। ২০১৬ সালে এ পথে বড় দুটি ডাবল লাইন প্রকল্প উদ্বোধন হওয়ার পর ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ট্রেনের সময় ৫ ঘণ্টায় নামিয়ে আনার দাবি ওঠে। কিন্তু টাইমটেবিল বাস্তবায়ন না হওয়ায় তা বিলম্বিত হয়। নতুন টাইমটেবিলে সর্বনিম্ন ৫ ঘণ্টা ১০ মিনিটে সুবর্ণ এক্সপ্রেস (বিরতিহীন) ট্রেন ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে যাত্রী পরিবহন করবে। বিরতিহীন সোনার বাংলা এক্সপ্রেসও যথাক্রমে ৫ ঘণ্টা ১০ ও ৫ ঘণ্টা ২০ মিনিটে উভয় পথে যাত্রী পরিবহন করবে। ১০ দিনের মধ্যেই নতুন টাইমটেবিল ছাপিয়ে কার্যকর করার কথা জানিয়েছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক
আবদুল হাই।
রেলের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তথ্যানুসারে জানা গেছে, পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল রেলের টাইমটেবিল সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয় ২০১৬ সালের শেষ দিকে। এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে দুই অঞ্চলের পরিবহন বিভাগ। মেইল ও এক্সপ্রেসের কয়েকটি ট্রেনের সময়সূচি অপরিবর্তিত থাকলেও প্রায় সব ধরনের ট্রেনের সময় কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। পূর্বাঞ্চলে আন্তঃনগর ট্রেনের মধ্যে সর্বোচ্চ ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট সময় কমছে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের সুবর্ণ এক্সপ্রেস ও মহানগর প্রভাতী ট্রেনের। একই অঞ্চলে সিলেট-চট্টগ্রাম রুটের ট্রেন জালালাবাদ এক্সপ্রেসের গন্তব্যে পৌঁছার সময় কমছে ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট। অন্যদিকে পশ্চিমাঞ্চলে রাজশাহী-খুলনা রুটের কপোতাক্ষ এক্সপ্রেসের গন্তব্যে পৌঁছার সময় ১ ঘণ্টা ৫০ মিনিট কমানো হয়েছে।
অনুমোদিত নতুন টাইমটেবিল পর্যালোচনায় দেখা গেছে, পূর্বাঞ্চলে ৪৫টি আন্তঃনগর ট্রেনের গন্তব্যে পৌঁছার সময় সর্বনিম্ন ৫ মিনিট থেকে সর্বোচ্চ ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট পর্যন্ত কমছে। ১ ঘণ্টার বেশি সময় কমছে ছয়টি আন্তঃনগর ট্রেনের। এর মধ্যে ৭০১ নম্বর সুবর্ণ এক্সপ্রেসের ১ ঘণ্টা, ৭০২ নম্বর সুবর্ণ এক্সপ্রেসের ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট, ৭০৩ নম্বর মহানগর গোধূলির ১ ঘণ্টা ৫ মিনিট, ৭০৪ নম্বর মহানগর প্রভাতী ও ৭৪১ নম্বর তূর্ণার ১ ঘণ্টা ৫ মিনিট এবং ৭৮৫ নম্বর বিজয় এক্সপ্রেসের ১ ঘণ্টা সময় কমছে।
এছাড়া মেইল, এক্সপ্রেস ও কমিউটার ৭০টি ট্রেনের মধ্যে ৪৪টির গন্তব্যে পৌঁছার সময় কমলেও ১৫টির সময় বাড়ছে। অপরিবর্তিত রয়েছে ১১টি ট্রেনের সময়সূচি। মেইল ট্রেনের মধ্যে ময়মনসিংহ এক্সপ্রেসের (বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে চট্টগ্রাম) সময় কমছে ১ ঘণ্টা ৫০ মিনিট, নোয়াখালী এক্সপ্রেসের (ঢাকা-নোয়াখালী) ১ ঘণ্টা ও ১৪ নম্বর জালালাবাদের (সিলেট-চট্টগ্রাম) ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট করে সময় কমানো হয়েছে।
অন্যদিকে পশ্চিমাঞ্চল রেলের ৩৫টি আন্তঃনগর ট্রেনের গন্তব্যে পৌঁছার সময় কমছে নতুন টাইমটেবিলে। এর মধ্যে রাজশাহী-খুলনা রুটের কপোতাক্ষ এক্সপ্রেসের সময় কমছে ১ ঘণ্টা ৫০ মিনিট। আর গন্তব্যের দূরত্ব কমানোর কারণে সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেসের (ঢাকা-সিরাজগঞ্জ বাজার) সময় যথাক্রমে ২ ঘণ্টা ৩৫ ও ৩ ঘণ্টা ৩০ মিনিট সময় কমানো হয়েছে। অর্থাত্ আগের টাইমটেবিলে ট্রেন দুটি ঈশ্বরদী থেকে ছেড়ে সিরাজগঞ্জ বাজার হয়ে তারপর ঢাকায় পৌঁছত। এতে এ ট্রেনের গন্তব্যে পৌঁছতে ৭ ঘণ্টা সময় লাগত। নতুন টাইমটেবিলে ট্রেনটি গন্তব্যে পৌঁছবে যথাক্রমে ৪ ঘণ্টা ও ৪ ঘণ্টা ২৫ মিনিটে। ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট করে সময় কমছে যথাক্রমে দিনাজপুর-ঢাকা রুটের দ্রুতযান এক্সপ্রেস ও ঢাকা-খুলনা রুটের চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনের। একই রুটের ৭২৫ নম্বর সুন্দরবন এক্সপ্রেসের ১ ঘণ্টা, ঢাকা-দিনাজপুরের ৭০৫ নম্বর একতা এক্সপ্রেসের ৫০ মিনিট, খুলনা-রাজশাহী রুটের ৭১৫ নম্বর কপোতাক্ষের ৫০ মিনিট, খুলনা-ঢাকা রুটের ৭৬৩ নম্বর চিত্রা এক্সপ্রেসের ৫০ মিনিট, ঢাকা-চিলাহাটী রুটের ৭৬৫ নম্বর নীলসাগর এক্সপ্রেসের ৫৫ মিনিট সময় কমছে।
এছাড়া ৭১৪ নম্বর করতোয়া, ৭২৭ নম্বর রূপসা, ৭৩১ নম্বর বরেন্দ্র, ৭৬৫ ও ৭৬৬ নম্বর নীলসাগর, ৭৬৮ নম্বর দোলনচাঁপাসহ ছয়টি ট্রেনের গন্তব্যে পৌঁছার সময় সর্বনিম্ন ১০ মিনিক থেকে সর্বোচ্চ ১ ঘণ্টা কমছে। গন্তব্যের সময় অপরিবর্তিত রয়েছে ৭৩২ নম্বর বরেন্দ্র, ৭৫১ নম্বর লালমনি, ৭৭১ নম্বর রংপুর, ৩১০৮ নম্বর মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের। ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন (৩১০৭) আগে সকাল ৮টা ১০ মিনিটে ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে কলকাতার উদ্দেশে ছেড়ে গেলেও নতুন নিয়মে আগামী ১ মার্চ থেকে সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে ছাড়বে। আন্তঃনগর ছাড়াও পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় সব মেইল, এক্সপ্রেস ও কমিউটার ট্রেনের গন্তব্যে পৌঁছার সময় কমানো হয়েছে।