মুঘল আমলের নিদর্শন ‘সাত গম্বুজ মসজিদ’

মুঘল আমলের স্থাপত্যের নিদর্শন সাত গম্বুজ মসজিদ। ১৬৮০ সালের এ স্থাপনা এখনও রয়েছে স্বগর্বে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণে থাকা মসজিদটি ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিদিন শত শত মুসল্লি এখানে এবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকেন। আল্লাহকে স্মরণ করেন এখানে বসে; আপন মনে।

ঢাকার মোহাম্মদপুরের কাটাসুর থেকে শিয়া মসজিদের দিকে যাওয়ার পথে পড়ে সাত গম্বুজ মসজিদ। এক সময়ের বুড়িগঙ্গার তীরে গড়ে ওঠা মসজিদের পাশে সেই নদী এখন নেই। সেখানে বসতি গড়ে উঠেছে অনেক আগেই। এখন মানুষ আগের মতো নৌকায় চড়ে আর মসজিদে আসেন না। আসেন হেঁটে কিংবা রিকশা করে। কেউবা অন্য যানবাহনে আসেন। তবে বুড়িগঙ্গা এখন লোকালয় হলেও বদলায়নি ‘সাত গম্বুজ মসজিদ’। এর অবয়ব ঠিক আগের মতোই রয়েছে।

সাত গম্বুজ মসজিদ এখন প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণে একটি পুরাকীর্তি। সবকিছুর দেখভাল করে সরকারের এ বিভাগটি। চারদিক থেকে ঘেরা এ মসজিদের সীমানা দেওয়ালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর নোটিশ দিয়ে রেখেছে মসজিদের স্বতন্ত্র বজায় রাখার জন্য। সেখানে লেখা রয়েছেÑ ‘এই প্রত্নতত্ত্ব সম্পদের ধ্বংস, অনিষ্টসাধন, বিকৃতি, পরিবর্তন, ক্ষয়ক্ষতি করলে এবং এর কোনো অংশের উপর লিখলে, খোদাই বা কোনো চিহ্ন স্থাপন বা দাগ কেটে সৌন্দর্যহানি করলে সর্বাধিক এক বছর জেল বা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।’

স্যার চার্লস ডি ওয়াইলির আঁকা একটি চিত্রকল্প আছে এ সাত মসজিদকে ঘিরে। এতে দেখা যায়, বুড়িগঙ্গা নদীর পাশেই মসজিদটি। মসজিদের সামনে বুড়িগঙ্গার বুকে চলেছে নৌকা। এখন বুড়িগঙ্গা আর তার আগের চেহারায় নেই। আগের সেই দৃশ্যপটও গেছে বদলে। বুড়িগঙ্গার এখন দূষণে দখলে দীনহীন দশা।

স্থাপনার পূর্বপাশের দেয়ালের পাশের সাইনবোর্ড ও উইকিপিডিয়া থেকে জানা যায়, ষোড়শ শতকে শায়েস্তা খাঁর আমলে নির্মিত মসজিদটির অবকাঠামো এখনও প্রায় অবিকৃতই আছে। এ মসজিদটি চারটি মিনারসহ সাতটি গম্বুজের কারণে মসজিদের নাম হয়েছে ‘সাত গম্বুজ মসজিদ’। আয়তকার নামাজ কোঠার বাইরের দিকের পরিমাণ দের্ঘ্যে ১৭.৬৮ এবং প্রস্থে ৮.২৩ মিটার। মসজিদের পূর্বদিকে ভাঁজবিশিষ্ট তিনটি খিলান এবং পশ্চিমের দেয়ালে রয়েছে তিনটি মিহরাব।

মসজিদের পূর্বপাশে এরই অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে রয়েছে একটি সমাধি। কথিত আছে, এটি শায়েস্তা খাঁর মেয়ের সমাধি। সমাধিটি ‘বিবির মাজার’ বলেও খ্যাত। এ কবর কোঠাটি ভেতর থেকে অষ্টকোণাকৃতি এবং বাইরের দিকে চতুষ্কোণাকৃতির। বেশ কিছুদিন আগে সমাধিক্ষেত্রটি পরিত্যক্ত এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত ছিল। বর্তমানে এটি সংস্কার করা হয়েছে। মসজিদের সামনে একটি বড় উদ্যানও রয়েছে। মসজিদের পশ্চিম পাশে বাংলাদেশের বিখ্যাত মাদ্রাসা ‘জামিয়া রহমানিয়া আরাবিয়া’ অবস্থিত।

১৬৮০ সালে মুঘল সুবেদার শায়েস্ত খাঁ’র আমলে তার পুত্র উমিদ খাঁ মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদটি লালবাগ দুর্গ মসজিদ এবং খাজা আম্বর মসজিদের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। এখন মসজিদের ভেতরের অংশে এবং বাইরে মুসল্লিদের নামাজ আদায়ের স্থানটি মোজাইক করা হয়েছে। মসজিদের ভেতরে ৪টি কাতারে প্রায় ৯০ জনের নামাজ পড়ার মতো স্থান রয়েছে।

আবুল কালাম আদাজ নামের এক খাদেম এ মসজিদে রয়েছেন প্রায় ২৭ বছর ধরে। তিনি বলেন, ‘এ মসজিদে এখন ইমামতি করছেন হাফেজ মাওলানা ইমদাদুল হক।’ মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা বাদশা মিয়া সাত গম্বুজ মসজিদে প্রায় ৫১ বছর নামাজ পড়েন। তিনি বলেন, ‘আমার বয়স এখন ৭২ বছর। এখানে আসার পর থেকেই দেখছি মসজিদটি এমনই রয়েছে। তবে প্রথমদিকে দেখতাম মুসল্লি কম ছিল। এখন বেশি হয়েছে, পার্থক্য বলতে এটাই। বিষয়টা হলো তখন ঢাকায় মানুষের সংখ্যাও কম ছিল।’