দেশের অন্যতম প্রধান নদ ব্রহ্মপুত্র। শুষ্ক মৌসুমে দেশের মোট পানিপ্রবাহের দুই-তৃতীয়াংশই আসে এখান থেকে। এ নদের পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ায় দেশের উত্তর ও মধ্য অঞ্চলে পানির স্তর ক্রমেই নিচে চলে যাচ্ছে। এ অবস্থায় বর্ষা মৌসুমে এ নদের পানি ধরে রাখতে ব্যারাজ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য সমীক্ষা চালাতে এরই মধ্যে ১১০ কোটি টাকা ব্যয় ধরে একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আজকের বৈঠকে প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হবে। এ ব্যারাজ নির্মাণ হলে যমুনা, পদ্মা, বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর প্রাণ ফিরবে। ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমবে। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকা এবং গোটা উত্তর-মধ্য ও উত্তর-পূর্ব এলাকায় শুষ্ক মৌসুমে পানিপ্রবাহ নিশ্চিত হবে। সিরাজগঞ্জ, পাবনা, রাজশাহী ও নবাবগঞ্জ এলাকার অগভীর পানির স্তরে আর্সেনিকের মাত্রাও কমে আসবে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, জামালপুরের বাহাদুরাবাদ বা এর আশপাশের উপযুক্ত স্থান অথবা মূল ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে পুরনো ব্রহ্মপুত্রের সংযোগস্থলে ৫ কিলোমিটার ভাটিতে ব্রহ্মপুত্র ব্যারাজ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে ‘ফিজিবিলিটি স্টাডি অ্যান্ড ডিটেইল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন অব ব্রহ্মপুত্র ব্যারাজ’ শীর্ষক প্রকল্পটির প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এ সমীক্ষা প্রকল্পে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রায় ৮০ জন পরামর্শক কাজ করবেন। ২০২০ সালের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ করবে পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা (ডব্লিউআরপিও)। এ সময়ের মধ্যে সমীক্ষা চালিয়ে ব্যারাজ নির্মাণের বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন করে মূল কাজ শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রকল্পের প্রস্তাবনায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ব্রহ্মপুত্র দেশের অন্যতম প্রধান জলাধার। এটি দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শুষ্ক মৌসুমে দেশের মোট পানিপ্রবাহের দুই-তৃতীয়াংশই এ নদ জোগান দেয়। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকা এবং সমগ্র উত্তর-মধ্য ও উত্তর-পূর্ব এলাকা এ নদ দিয়ে সরাসরি প্রভাবিত। এ নদের পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ায় বর্তমানে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সেচের অধিকাংশই অগভীর এবং গভীর নলকূপের ওপর নির্ভরশীল। এতে পানির স্তর নিচে নামছে। এতে আরও বলা হয়, ভারত সীমান্তবর্তী এদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বড় অংশ উচ্চ বরেন্দ্র এবং সমতল বরেন্দ্র এলাকা হওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির পুনর্ভরন কম হচ্ছে। এ কারণে এসব এলকায় বর্তমানে নলকূপ স্থাপনও দুরূহ হয়ে পড়ছে। এদিকে সিরাজগঞ্জ, পাবনা, রাজশাহী ও নবাবগঞ্জ এলাকার অগভীর পানির স্তরে আর্সেনিকের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় আশপাশের নদনদীর পানিপ্রবাহের পরিমাণ বাড়াতে হবে। এতে ভূগর্ভস্থ পানির প্রাপ্যতা বাড়বে। কিন্তু পুরনো ব্রহ্মপুত্র ও ধলেশ্বরী নদী থেকে পানিপ্রবাহ ঢাকার চারপাশের নৌপথে নৌযান চলাচলের জন্য অপর্যাপ্ত। এজন্য বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর পানিপ্রবাহও বাড়ানো প্রয়োজন। এজন্য ব্রহ্মপুত্র ব্যারাজ নির্মাণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
ব্যারাজ নির্মাণ হলে ব্রহ্মপুত্র ও এর শাখা এবং এর ওপর নির্ভরশীল নদীগুলোর পানির প্রবাহ নিশ্চিত করা যাবে। শুষ্ক মৌসুমে খরা উপদ্রুত এলকায় পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যাবে। এতে সংশ্লিষ্ট এলাকার পরিবেশ, কৃষি, বাণিজ্য এবং শিল্পের প্রসার ঘটবে। একই সঙ্গে নদীগুলোর নাব্য বাড়ার ফলে নৌচলাচল বৃদ্ধি পাবে, পরিবহন খরচ কমবে। এসব নদীতে মাছের প্রজনন বাড়বে। ফলে মাছের বাড়তি উৎপাদন নিশ্চিত হবে। অর্থাৎ ওই নদনদী প্রাণ ফিরে পাবে। এদিকে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্পের আওতায়, সামাজিক, পরিবেশ, অথনৈতিক, হাইড্রোলজিক্যাল ও মরফোলজিক্যাল বিষয় যাচাই করে দেখা হবে। তাছাড়া সড়ক ও রেলপথসংবলিত ব্যারাজের নকশা, প্রধান প্রধান সেচ ও পানি নিষ্কাশন খালের নকশা এবং পানি, বিদ্যুৎ অবকাঠামোর প্রয়োজনীয় নকশাসহ ব্যারাজ পরিচালনার নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হবে।