নওগাঁর বদলগাছী বরেন্দ্র অঞ্চলের নাক ফজলী আম স্বাদে ও গুণে অনন্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এই উপজেলার প্রায় প্রতিটি কৃষক নাক ফজলী আমের বাগান করার দিকে ঝুকছেন। যাদের বাগান করার মতো জমি নেই তারা বাড়ির চারপাশে কয়েকটি নাক ফজলী আম গাছ রোপণ করছেন।
নাক ফজলী এই আমের ওজন ৩শ’ গ্রাম থেকে ৪শ’ গ্রাম পর্যন্ত হয়। আবার নাক ফজলী আমের চামড়া ও অাঁটি সরু। মিষ্টতার দিক দিয়ে ল্যাংড়া ও আম্রপালি আমের সমতুল্য। এই আমের কোন আশ না থাকায় খেতে খুবই সুস্বাদু। আম পাকার পরও শক্ত শক্ত ভাব থাকায় সহজেই বাজার জাত করাও সম্ভব। বাংলাদেশে শুধুমাত্র নওগাঁ জেলার বদলগাছী ও ধামুইরহাট উপজেলায় এই আমের চাষ হচ্ছে ব্যাপক হারে। তবে বর্তমানে পত্নীতলা, জয়পুরহাট, বগুড়া সদর উপজেলাসহ বেশ কিছু জেলায় এই আম চাষের বিস্তার লাভ করেছে। অনেকে মনে করেন এই আমের নিচের দিকে নাকের মতো চ্যাপ্টা হওয়ায় এর নাম করণ হয়েছে নাক ফজলী আম। বদলগাছী উপজেলার কাদিবাড়ী গ্রামের আম চাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার দেড় বিঘা জমিতে নাক ফজলী আমের বাগান রয়েছে। ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৫০ থেকে ৬০টি গাছ রয়েছে। প্রতি বছর আমি এই আম বাগান থেকে ১ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত আম বিক্রয় করি। একই গ্রামের মিজানুর রহমান বলেন, আমার প্রায় ১ বিঘা জমিতে নাক ফজলী আমের গাছ রয়েছে। আমার এই প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ টাকা আম বিক্রয় হয়। মথুরাপুর গ্রামের ওয়াসিম উদ্দীন বলেন, আমি গত বছর ৫ বিঘা জমিতে নাক ফজলী আমের বাগান করেছি। এই এলাকার আরও আম চাষি, মান্নান, বেলাল, ইউনুছ, লৎফর ও মঞ্জুসহ একাধিক কৃষক বলেন, কয়েক বছর আগেও এখানকার কৃষকরা বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ করত। কিন্তু বর্তমান সময়ে ফসলের দাম না পাওয়ায় এখন এই উপজেলার প্রায় সব কৃষকরাই নাক ফজলী আমের বাগানের দিকে ঝুঁকছেন।
এই নাক ফজলী চারার আবির্ভাব সমন্ধে জানতে চাইলে আম চাষিরা বলেন, মফিজ উদ্দীনের মাধ্যমে নাক ফজলী আমের চারা ১৯৫০ সালে কাদিবাড়ী গ্রামে বিস্তার লাভ করে। মফিজ উদ্দীন বলেন বদলগাছী উপজেলার ভা-ারপুর গ্রামের তৎকালীন জমিদার খুকুমণি লাহেরী কাছ থেকে এই আমের জাত সংগ্রহ করেন। জমিদার খুকুমণি লাহেরী ভারতের কলকাতা থেকে এই আমের জাত সংগ্রহ করেন। পরবর্র্তীতে মফিজ উদ্দীন জোড় কলমের মাধ্যমে আজ থেকে প্রায় ৬৬ বছর পূর্বে কাদিবাড়ী গ্রামে এই আমের বিস্তার ঘটায়। বর্তমানে এই উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ছোট বড় প্রায় ৫ শতকের ওপর আম বাগান রয়েছে। এছাড়াও উপজেলার সর্বত্র এর চাষ হচ্ছে। জোড় কলমের মাধ্যমে এই আমের চারা রোপণ করার ১ থেকে ২ বছরের মধ্যে গাছে মকুল আসে ও গাছের বয়স ৩-৪ বছর হলে প্রতিটি গাছ থেকে প্রায় ৪-৫ মন আম পাওয়া যায়। গত বছর এ অঞ্চলে এই আম বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত। যারা একবার এই আমের স্বাদ গ্রহণ করেছে পরবর্তী সময়ে আবারও ঐ আমচাষিদের কাছে আম নেয়ার জন্য ধরনা দেয়। বর্তমানে বাগানে আমের গাছগুলোতে মুকুলে মুকুলে ভরে গেছে।
বদলগাছী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান আলী বলেন, এই জেলার বাহিরে এই আমের তেমন কোন পরিচিতি না থাকায় দেশবাসী এর স্বাদ গ্রহণ করতে পারত না। তবে গত ৬-৭ বছর থেকে এই উপজেলার নাক ফজলী আম ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানি হওয়ায় এর চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় এখানকার কৃষকরা নাক ফজলী আম চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।