কৃত্রিম কিডনি বানিয়ে চমকে দিলেন বাঙালি শুভ রায়

বিশ্বে যেসব রোগের কারণে মানুষের মৃত্যুর হার বেশি সে তালিকায় সাত নম্বরে আছে কিডনি সম্পর্কিত অসুখ। বেশিরভাগ সময়েই দুটি কিডনি অচল হয়ে মারা যান রোগীরা। তবে এবার বুঝি এমন মৃত্যু বন্ধ হতে চলল। কারণ কৃত্রিম কিডনি তৈরি করেছেন এক বাঙ্গালী বায়ো-ইঞ্জিনিয়ার শুভ রায়। সাত বছর ধরে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন কীভাবে কৃত্রিম কিডনি তৈরি করা যায় সে বিষয়ে। অবশেষে সফল হয়েছেন তিনি। তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন কৃত্রিম কিডনি। ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই বায়ো-ইঞ্জিনিয়ার অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হিসেবে কর্মরত আছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির বায়ো-ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে।

শুভ রায়ের এ উদ্ভাবনের কথা প্রথম জানা যায় ট্যাঙ্কার ফাউন্ডেশনের গুণীজন সংবর্ধনার বার্ষিক অনুষ্ঠানে। এ অনুষ্ঠানে শুভ ও তার সহযোগী গবেষকদের দারুণ এই আবিষ্কারের কথা ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে তাদের বানানো এই কৃত্রিম কিডনি শীর্ষ মার্কিন সংস্থা ‘ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (এফডিএ)-এর অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। সেখান থেকে ছাড়পত্র পেলে আর দুই-তিন বছরের মধ্যেই বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আসবে এই কৃত্রিম কিডনি।

যেভাবে কাজ করে কৃত্রিম কিডনি :মানবদেহে দুটি কিডনি রয়েছে, সেখানেই যেকোনো এক দিকে কফি কাপের আকৃতির এই কৃত্রিম কিডনিকে বসিয়ে দেওয়া যাবে। এই কিডনিকে পরিচালনা করবে হার্ট থেকে আসা রক্তই। সাধারণ সুস্থ কিডনির মতোই এই রক্তকে ফিল্টার করবে কৃত্রিম কিডনি। শুধু তাই নয়, শরীরে রক্তচাপকেও নিয়ন্ত্রণ করবে এই কৃত্রিম কিডনি। আমাদের শরীরে হিমো-ডায়ালিসিসের যে চালু পদ্ধতি রয়েছে, তাতে দুটি কিডনি বয়ে চলা রক্তস্রোত থেকে শুধুই বিষ বা দূষিত পদার্থগুলোকে ছেঁকে (ফিল্টার) বের করে নেয়। কিন্তু শরীরে বসানো ওই কৃত্রিম কিডনির গায়ে আলাদা একটি ‘মেমব্রেন’ বা স্তর (লেয়ার) থাকায় এটি খুব ভেবে-চিন্তে রক্তস্রোত থেকে বিষ বা দূষিত পদার্থগুলোকে বের করে নেবে। এই কৃত্রিম কিডনির সঙ্গে একটি বায়ো-রিঅ্যাক্টরও আছে, যা বানানো হয়েছে কিডনির সুস্থ, সবল কোষগুলো দিয়ে। সেগুলোই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার ডায়ালিসিসের সময় রক্তস্রোতের সামনে থাকবে। এটা স্বাভাবিক কিডনির চেয়ে অনেক দ্রুত ও দক্ষতার সঙ্গে ডায়ালিসিসের কাজটা করতে পারবে আমাদের শরীরে। ২০১৪ সালে বিশ্বে প্রায় পাঁচ হাজার রোগী মারা গেছে শুধু কিডনি প্রতিস্থাপনের অপেক্ষায় থেকে। এছাড়া প্রতি বছর কিডনির সমস্যায় ভুগছে অসংখ্য মানুষ। তাদের এই দুর্দশার দিন বুঝি শুভ রায়ের হাত ধরেই শেষ হতে চলল। এই কৃত্রিম কিডনি বাজারে আসার পর আর কাউকে কিডনি জটিলতায় মৃত্যুবরণ করতে হবে না। মানবতার পথে বিজ্ঞানের সাফল্যের পথে শুভ রায়ের এই অনবদ্য আবিষ্কার যোগ করল আরেকটি মাত্রা।