কাল পহেলা ফাগুন, বসন্তের প্রথম দিন, তার পরদিন ভালবাসা দিবস। এই দুটি দিনে ফুলের কদর থাকে ব্যাপক। এই দুই দিনই প্রিয়জনের হাতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা ও ভালবাসার প্রকাশ ঘটানো যেন সংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে গোলাপ ফুলের চাহিদাই থাকে তুঙ্গে। এর সপ্তাহখানেকের মধ্যেই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। তখনো ফুল দিয়ে মানুষ ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানাবে। এসব মিলে ফুলের চাহিদাও এখন বেড়ে গেছে। আর বছরজুড়েই থাকে ফুলের কদর। এই চাহিদা মেটাতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হচ্ছে ফুলের চাষ। এর মধ্যে সাভারের বিরুলিয়া গ্রাম হচ্ছে অন্যতম। এই গ্রামে ব্যাপকভাবে হচ্ছে গোলাপ ফুলের চাষ। রাজধানীতে গোলাপ ফুলের চাহিদার বড় একটি অংশ আসে সাভার থেকে। গোলাপের চাষ করে এই গ্রামের মানুষ যেমন স্বাবলম্বী, তেমনি খুশিও। ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ছেড়ে সাভারের বিরুলিয়া গ্রামের রাস্তায় ঢুকতেই চোখে পড়বে নানা ধরনের গোলাপের সমারোহ। মাঠের পর মাঠ গোলাপের চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে লাল, গোলাপি, মেরুন রঙের গোলাপও রয়েছে। দেখে মনে হবে, এ যেন এক রঙের দুনিয়া। মনের প্রশান্তির পাশাপাশি চোখও জুড়িয়ে যাবে। আর ফুলক্ষেতের আইলে দেখা যাবে মৌচাষিদের মৌ বাক্স। যেখানে মৌচাষ করা হচ্ছে। এক ঢিলে দুটি পাখি মারার মতো অবস্থা। গোলাপ চাষি শাহজাহান মিয়া বলেন, আমরা শুধু গোলাপের চাষ করি না, এর সঙ্গে আমাদের আবেগ, ভালবাসাও জড়িত। এখানে ফুলের সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ আসে। তারা এর সৌন্দর্য দেখে যেমন খুশি হয়, তেমনি তাদের খুশিতে আমরাও খুশি।
সাভার উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যানুসারে বিরুলিয়া গ্রামে ২৫০ হেক্টর জমিতে প্রায় ৬০০টি বাগানে ফুলের চাষ হয়। এর বেশিরভাগ গোলাপ। বিরুলিয়ার কমলাপুর গ্রামে ৭ হেক্টর জমিতে গোলাপ, ৫ হেক্টরে গ্লাডিওলাস, বাগ্নিবাড়ী গ্রামে ১৫৫ হেক্টরে গোলাপ ও ৩০ হেক্টরে গ্লাডিওলাস, কাকাবর গ্রামে ২ হেক্টরে গোলাপ, বিরুলিয়া গ্রামে ৪৬ হেক্টরে গোলাপ ও ৫ হেক্টরে গ্লাডিওলাস আবাদ হয়। এ ছাড়া বিরুলিয়ার মোস্তাপাড়া, শ্যামপুরসহ অন্যান্য গ্রামেও কম-বেশি গোলাপের আবাদ হয়।সাদুল্লাপুর, কমলাপুর, বাগ্নিবাড়ী, কুমারখোদায় বসতবাড়িসহ মোট এলাকা ৬১৪ হেক্টর। এর মধ্যে শুধু ফুলেরই আবাদ হয় প্রায় ২০০ হেক্টরে। স্থানীয় ফুলচাষি শাহজাহান মিয়া জানান, এখানকার মাটি গোলাপ চাষের উপযোগী। পাকা মিলন, মিরান্ডি, লিঙ্কন ও সাদা জাতের গোলাপের ভালো চাষ হচ্ছে। তবে অধিক লাভজনক হওয়ায় মিরান্ডি জাতের গোলাপ চাষ হচ্ছে বেশি। স্থানীয় ফুলচাষিরা নিজেদের প্রয়োজনে এ গ্রামেই গড়ে তুলেছেন ফুলের হাট। শ্যামপুর গ্রামে প্রতি সন্ধ্যায় বসে গোলাপের হাট। সেখানকার আবুল কাশেম মার্কেটের সামনে সন্ধ্যায়ই শুরু হয় ফুল ব্যবসায়ীদের আনাগোনা। এ ছাড়া মোস্তাপাড়ায় সাবু মার্কেটেও গোলাপ বেচাকেনা হয়। স্থানীয় ফুল ব্যবসায়ী ও নার্সারির মালিক সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি মার্কেটে প্রতিদিন গড়ে ৮০ জন ফুল ব্যবসায়ী ফুল কিনতে আসেন। প্রত্যেকে ৪টি করে ফুলের বান্ডিল কিনে নিয়ে যান। প্রতি বান্ডিলে থাকে ৩০০ ফুল। বর্তমানে প্রতি বান্ডিল বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায়।
কৃষকরা জানিয়েছেন, জৈব ও রাসায়নিক সার, বীজ, কীটনাশকসহ বছরে প্রতি হেক্টর জমিতে ফুল চাষে খরচ হয় ৭ লাখ টাকা। শীতে পোকামাকড়ের প্রকোপ কম থাকলেও গরমে খুব বেশি থাকে। এ কারণে কীটনাশক দিতে হয়। নিয়মিত পানি সেচ, সার ও পরিচর্যা ছাড়া ভালো গোলাপ উৎপাদন করা সম্ভব নয়। প্রতি হেক্টরে বছরে ১৫ লাখ ফুল উৎপাদন হয়।
“