উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উজ্জ্বল সম্ভাবনার কথা কয়েক বছর ধরেই নানাভাবে শোনা যাচ্ছে। সে ধারাবাহিকতায় এবার যুক্তরাজ্যভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান প্রাইসওয়াটারহাউসকুপারস (পিডব্লিউসি) বলছে, ২০৫০ সাল পর্যন্ত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে শীর্ষ তিনটি দেশের একটি হবে বাংলাদেশ। শুধু তা-ই নয়, এ সময়ে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ভিত্তিতে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৩তম বড় অর্থনীতির দেশ।
পিডব্লিউসি প্রকাশিত ‘২০৫০ সালে বিশ্ব অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ যেভাবে বদলাবে’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, ২০১৭ থেকে ২০৫০ সাল পর্যন্ত ৩৪ বছরে তিনটি দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির গড় ৫ শতাংশের বেশি হবে। এ তিনটি দেশের একটি হলো বাংলাদেশ। বাকি দুটি দেশ হলো ভারত ও ভিয়েতনাম।
একটি দেশের অর্থনীতি কতটা বড় ও শক্তিশালী, সেটি নির্ধারণে সর্বস্বীকৃত দুটি উপায় আছে। একটি হলো ক্রয়ক্ষমতার সক্ষমতার (পিপিপি) ভিত্তিতে জিডিপির আকার, অন্যটি হলো বাজার বিনিময় হারের (এমইআর) ভিত্তিতে জিডিপির আকার। দুই হিসাবেই বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নতির চিত্র উঠে এসেছে পিডব্লিউসির গবেষণায়।
পিডব্লিউসি বলছে, পিপিপির ভিত্তিতে বাংলাদেশ এখন ৩১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। এ হিসাবে ২০৩০ সালে বাংলাদেশের অবস্থান হবে ২৮, আর ২০৫০ সালে ২৩। আগামী ৩৪ বছরে ধারাবাহিকভাবে যে ৩২টি দেশ উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে, তাদের নিয়ে পিডব্লিউসি এ হিসাব তৈরি করেছে। এ ছাড়া এমইআর ভিত্তিতে ২০৫০ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে।
তবে এ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে বাংলাদেশের জন্য বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের কথাও বলেছে পিডব্লিউসি। এর একটি হলো কর্মক্ষম তরুণ জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের মতো উদীয়মান অর্থনীতির জন্য আশীর্বাদ বা অভিশাপ দুটোই নিয়ে আসতে পারে। তরুণদের যথেষ্ট কাজের সুযোগ তৈরি করতে না পারলে তা রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করবে।
ধারাবাহিকভাবে ৫ শতাংশের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে অর্থনৈতিক সংস্কারে বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে পিডব্লিউসির প্রতিবেদনে। এ ছাড়া সামষ্টিক অর্থনীতির মৌলিক স্তম্ভ হিসেবে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা ও শিক্ষার মান উন্নয়নে জোর দিতে বলা হয়েছে। শিক্ষাব্যবস্থাকে কর্মমুখী করার বিষয়েও বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের কথাও বলা হয়েছে।
চীনের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কমে আসার বিষয়টিকে আগামী ৩৪ বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির পেছনে বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করে পিডব্লিউসি। এ প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বয়স্ক জনগোষ্ঠী ও উচ্চ মজুরির কারণে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কারখানা চীন থেকে ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ায় সরিয়ে নেবে।
জিডিপির বিপরীতে বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধিও আগামী ৩৪ বছরে বাড়বে বাংলাদেশে। ২০২৫ সাল পর্যন্ত এ দেশে জিডিপির বিপরীতে বিনিয়োগ হবে গড়ে ২৩ শতাংশ। ২০২৫-পরবর্তী এ বিনিয়োগ বেড়ে ২৫ শতাংশের বেশি হবে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
বিশ্ব অর্থনীতিতে আগামী ৩৪ বছরে সবচেয়ে বড় দেশ হিসেবে চীনের অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে। পিপিপির হিসাবে এখনই বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি চীন, ২০৩০ সালে এমইআরের হিসাবেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাবে চীন। ২০৫০ সালে পিপিপির হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় বড় অর্থনীতির দেশ হবে ভারত।
পিডব্লিউসির হিসাবে যে ৩২টি দেশের অর্থনীতির কথা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এরা এখনই বিশ্ব জিডিপির ৮৫ শতাংশের জোগান দেয়। একই সঙ্গে আগামী ৩৪ বছরে জি সেভেনভুক্ত সাতটি দেশের হাত থেকে ‘ইমার্জিং সেভেন’ভুক্ত সাতটি দেশের হাতে চলে আসবে। ইমার্জিং সেভেনভুক্ত সাতটি দেশ হলো চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, রাশিয়া, মেক্সিকো ও তুরস্ক। আর জি সেভেনভুক্ত সাতটি দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান, কানাডা ও ইতালি।
আগামী ৩৪ বছরে উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বিশ্ব অর্থনীতির ভরকেন্দ্র এশিয়ায় চলে আসবে বলে পিডব্লিউসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।