খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের সম্ভাবনা বাড়ছে

  • রেজাউল করিম খোকন (ব্যাংকার)
    সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জীবনধারায় নানা পরিবর্তন আসছে। খাদ্যাভ্যাসও বদলে যাচ্ছে ক্রমেই। নাগরিক জীবনে ব্যস্ততার চাপ সবাইকে কোণঠাসা করে তুলছে। ব্যস্ত জীবন। অফিস শেষে বাসায় ফিরে বাজারে যাওয়া, পছন্দের জিনিস কেনা। তার ওপর আবার রান্না করা। আবার অনেক সময় বাসার চুলায় গ্যাসের চাপ থাকে না। কর্মজীবী মহিলারা সকাল-সন্ধ্যা অফিস করে সময় মেনে রান্না করতে বিরক্তবোধ করেন। এর মধ্যে বাসায় অতিথি এলে তো ঝামেলা আরও বেড়ে যায়। তেমন প্রেক্ষাপট ও পরিস্থিতিতে ব্যস্ত নগর জীবনে সকাল ও বিকালের নাশতা তৈরির ঝামেলা থেকে বাঁচতে এখন অনেক বাসাতেই প্যাকেটজাত রুটি-পরোটা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আবার বাসায় অতিথি এলে কিংবা বিকালের নাশতা হিসেবে পুরি, শিঙাড়া, চিকেন নাগেট, সমুচা, কাবাব, কাটলেট, ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের মতো খাবারের চাহিদা দিনে দিনে বাড়ছে। কারণ, এসব খাবার এখন আর দীর্ঘ সময় নিয়ে ঘরের গৃহিণীদের নিজ হাতে বানাতে হয় না। ফ্রিজ থেকে প্যাকেট খুলে বের করে চুলায় কড়াইয়ে তেলে ভাজলেই হয়ে গেল। এতে সময়ের যেমন সাশ্রয় হয়, ঝামেলাও অনেক কমে যায়, দ্রুত খাবারটা তৈরি করে পরিবেশন করা যায়। এ ধরনের প্যাকেটজাত হিমায়িত খাবারের দিকে ঝুঁকছেন গৃহিণী ও কর্মজীবী নারীরা। খেতেও মন্দ লাগছে না। এখন ঘরে ঘরে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে প্যাকেটজাত হিমায়িত খাবার। সবাই এখন সময়ের সীমাবদ্ধতাকে কাটাতে নানা উপায় খুঁজে বের করছেন। চারদিক সামলানো একজন অফিসগামী নারীর পক্ষে চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে। তেমন অবস্থায় হাতের কাছে হিমায়িত প্যাকেটজাত খাবার পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন দোকানে, সুপারশপে। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বয়স্ক নারী-পুরুষ এ ধরনের খাবারের প্রতি সহজেই আকৃষ্ট হচ্ছেন। কর্মজীবী নারী থেকে শুরু করে গৃহিণী, শিক্ষার্থী ও ব্যাচেলরদের কাছেও হিমায়িত প্যাকেটজাত খাবারদাবারের জনপ্রিয়তা সহজেই চোখে পড়ে। সকাল-বিকালের নাশতা বা নিত্য রান্নার প্রয়োজনেই অনেকেরই ভরসা এখন হিমায়িত প্যাকেটজাত খাবার বা তৈরি খাবার।
    জীবনযাপনের পরিবর্তন ও মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় হিমায়িত খাবারের প্রতি মানুষের নির্ভরতা ক্রমেই বাড়ছে। আগে এসব খাদ্যপণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতো। এখন দেশেই বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠান এসব পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। বাজার ধরতে এসব প্রতিষ্ঠান এ খাতে বেশ বড় অঙ্কের বিনিয়োগও করছে।
    হিমায়িত খাদ্যপণ্য মূলত তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত। এগুলো হলোÑ পরোটা, স্ন্যাক্স ও গোশতের তৈরি খাদ্যপণ্য। গোশতের তৈরি খাদ্যপণ্যের বেশিরভাগই মুরগি থেকে তৈরি করা হচ্ছে। মাছের তৈরি খাবারের কিছু আইটেমও পাওয়া যায়। দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও এখন ক্রেতাদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে এসব খাবার বাজারজাত করছে। এ খাদ্যপণ্যের তালিকায় রয়েছে নানা মুখরোচক খাবার। রুটি, পরোটা, শিঙাড়া, ডালপুরি, আলুপুরি, সমুচা, রোলসহ মুরগির গোশত দিয়ে তৈরি নাগেটস, চিকেন সসেজ, মিটবল, স্প্রিংরোলসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য চমৎকার প্যাকেটে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন সুপারশপ এবং অলিগলির বড় বড় দোকানে। হিমায়িত খাদ্যপণ্যের ক্রেতার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় আজকাল অনেক দোকানদার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য হিসেবে দোকানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের হিমায়িত খাদ্য সামগ্রী রাখছেন। বিভিন্ন কোম্পানির এক প্যাকেট শিঙাড়া বা সমুচা সাধারণত ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়। ২০টি পরোটার একটি প্যাকেট বিক্রি হয় ২০০ থেকে ২২০ টাকায়। চিকেন নাগেট, মিটবল, ফিসবল, কাটলেট, স্প্রিংরোল, চিকেন রোল, ভেজিটেবল রোল, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ইত্যাদি প্যাকেটের আকার ভেদে বিভিন্ন দামে বিক্রি হয়।
    দেশে হিমায়িত খাদ্যপণ্য বাজারজাত করছে এমন অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে গোল্ডেন হারভেস্ট, কাজি ফার্মস, ব্র্যাক চিকেন, আফতাব ফুডস, আইজি ফুডস, রিচ ফুড, প্রাণ-আরএফএল, সিপি, এজি গ্রুপ, প্যারাগন উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে দেশে হিমায়িত খাদ্যপণ্যের বাজার ক্রমেই সম্প্রসারিত হচ্ছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে এখন হিমায়িত খাদ্যপণ্যের বাজারের আকার ৪৫০ কোটি থেকে ৫০০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। কিছু কিছু কোম্পানির হিমায়িত খাদ্যপণ্য বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তাদের বিক্রি বাড়ছে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ হারে। বিভিন্ন সুপারশপে হিমায়িত খাবার ছাড়াও প্যাকেট করা কাটা সবজি, মুরগির গোশতসহ বিভিন্ন ধরনের পিঠাজাতীয় খাবারও পাওয়া যায় এখন। পুডিং, তেলে ভাজা ও নকশা করা পিঠা, মুখরোচক বিভিন্ন স্বাদের হালুয়া ও মিষ্টির চাহিদাও অনেক। এগুলো সাধারণত ঘরে তৈরি করে দোকানে দোকানে বিক্রির জন্য দিয়ে থাকে অনেক নারী উদ্যোক্তা।
    মূলত মানুষের ব্যস্ত জীবনযাত্রা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে এখন অনেকেই তৈরি হিমায়িত খাদ্যের প্রতি ঝুঁকছেন। ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথা বিবেচনা করে এ ধরনের হিমায়িত খাদ্যসামগ্রী প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো তাদের ব্যবসা রাজধানী ঢাকা শহরে সীমাবদ্ধ না রেখে এরই মধ্যে দেশের বড় বড় শহরে সম্প্রসারণ করছে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ডের হিমায়িত খাবার সামগ্রী বিক্রির জন্য শহরের বিভিন্ন জায়গায় নিজস্ব আউটলেট খুলেছে। পাশাপাশি সুপারশপ ও সাধারণ মুদি দোকানে তাদের পণ্য বিক্রি হচ্ছে। ভালো মানের কারণে বেশ কিছু ব্র্যান্ড ক্রেতাদের আস্থা ও সন্তুষ্টি অর্জন করেছে এরই মধ্যে। হিমায়িত খাবার বাজারজাতকরণের সময় প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোকে অবশ্যই যথাযথ মান নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অবশ্যই মনোযোগী হতে হবে। বিভিন্ন দোকানে বিক্রির জন্য রাখা পণ্যসামগ্রীগুলো সঠিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হচ্ছে কিনা বিক্রির সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্যপণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে সতর্ক দৃষ্টি দিতে হবে। কোনোভাবেই যেন দোকানে মেয়াদোত্তীর্ণ হিমায়িত খাদ্যপণ্য বিক্রির জন্য রাখা না হয় সে ব্যাপারে সাবধান করতে হবে সংশ্লিষ্ট সবাইকে। জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কোনো রাসায়নিক উপাদান, প্রিজারভেটিভ যাতে হিমায়িত খাদ্য তৈরির সময় ব্যবহৃত না হয় সে বিষয়ে বিএসটিআই এবং সায়েন্স ল্যাবরেটরি কর্তৃপক্ষকে কড়া নজরদারি করতে হবে। হিমায়িত খাদ্যপণ্যকে সঠিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য প্রস্তুতের পর খুচরা বিক্রেতা পর্যায় পর্যন্ত সরবরাহের ব্যবস্থা (কোল্ড চেইন) ঠিক রাখতে হবে।
    দেশের প্রস্তুত হিমায়িত খাদ্যপণ্যের বাজার এখন আর দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে দেশে প্রস্তুত হিমায়িত খাদ্যপণ্য বিভিন্ন দেশে রফতানি শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশে প্রস্তুত হিমায়িত খাদ্যপণ্যের মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করা প্রয়োজন। বিদেশি ক্রেতাদের রুচি ও পছন্দ অনুযায়ী খাদ্যপণ্য প্রস্তুত করতে হবে। রুচি ও স্বাদের বৈচিত্র্য ধরে রাখতে হবে।
    আমাদের দেশে যেসব ফলমূল, শাকসবজি উৎপাদিত হয় সেগুলো বৃহৎ পরিসরে উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষেত্রে অনেক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়। প্রথমত উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য সঠিক পদ্ধতি, নির্ভুল জ্ঞান ও গবেষণার উপযুক্ত ব্যবস্থা নেই। দ্বিতীয়ত, এই সেক্টরে বিনিয়োগের স্বচ্ছ কোনো ব্যবস্থা নেই। যদি একজন কৃষক কোনো খামার করতে চায় তাহলে এটার জন্য যে বিনিয়োগ প্রয়োজন চাষি তা সঠিকভাবে সরবরাহ পান না এবং যে পদ্ধতিটি বিদ্যমান তা অনেক দীর্ঘ ও ঝামেলাযুক্ত। তাই চাষিরা এ ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এক্ষেত্রেও মধ্যস্বত্বভোগীরাই বেশিরভাগ লাভটা নিয়ে নেয় আর কৃষক ও ভোক্তারা কিছুই পায় না। তাই এ ব্যাপারটিতে সরকারের সুদৃষ্টি দেয়া উচিত। যদি আমরা খাদ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের এ ব্যাপারটিকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারি, জাতি বেকারত্ব নামক অভিশাপ থেকে মুক্ত হবে এবং দেশ উন্নতির শিখরে পৌঁছানোর ধাপটাকে অনেকাংশেই বলিষ্ঠ করতে পারবে।
    যদি আমাদের দেশে আলুর সংরক্ষণ ব্যবস্থা ভালো হতো তাহলে হয়তো এমন অবস্থা ঘটত না। অন্যদিকে যদি আমরা প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে গোল আলু থেকে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য তৈরি করতে পারতাম এবং সারা বিশ্বে বাজারজাত করতে পারতাম, তাহলেও আজ এ অবস্থা হতো না। আমরা আলু উৎপাদনে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আলুর ফলন বৃদ্ধি করতে পারি। আলু থেকে বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করতে হবে, যা অনেক দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে। যেমন বর্তমানে আলু থেকে পটেটো চিপস তৈরি করা হয়, যেটা বাজারে বহুল প্রচলিত ও অনেক দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। এভাবে আলু থেকে বিভিন্ন সংরক্ষণযোগ্য ও পুষ্টিকর খাবার তৈরির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা যায়। আমরা যদি এই আলুকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারি তাহলে একদিকে বেকার সমস্যার কিছুটা সমাধান হবে, অন্যদিকে আলু উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজতকরণের মাধ্যমে কৃষকরা বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে পারবে। তাই এ বিষয়টি নিয়ে সব মহলে চিন্তাভাবনা ও চিন্তাভাবনার প্রতিফলন ঘটানো উচিত।
    পেয়ারা একটি বহুল পরিচিত মৌসুমি ফল। তবে সারা বছরই কিছু জাতের পেয়ারা অল্প পরিমাণে পাওয়া যায়। একটা কথা আমরা অনেকেই জানি কিন্তু মানতে চাই না, কথাটা হলো, পেয়ারা কমলালেবুর চেয়ে কয়েকগুণ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। কিন্তু আমরা পেয়ারার চেয়ে কমলালেবুকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকি। পেয়ারা মূলত মৌসুমি ফল হওয়ায় মৌসুমের সময় প্রচুর পেয়ারা অবহেলার কারণে নষ্ট হয়। উপরন্তু পেয়ারার মূল্য কৃষক ন্যায্যভাবে না পাওয়ায় তারা খামার আকারে পেয়ারার চাষ করতে আগ্রহী হন না। তবে বর্তমানে পেয়ারার চাহিদা কিছুটা বাড়ার কারণে অনেক জাগাতেই পেয়ারা বড় পরিসরে চাষ করতে দেখা যায়। বর্তমানে পেয়ারা থেকে জ্যাম-জেলি তৈরি আরও বড় পরিসরে করতে পারলে দেশে উৎপাদিত ফল পেয়ারা থেকে প্রচুর অর্থ উপার্জন করা যেত বিদেশে রফতানির মাধ্যমে। এতে দেশীয় ফলের উৎপাদন বৃদ্ধি পেত এবং পেয়ারা চাষ ও পেয়ারা প্রক্রিয়াজাতকরণকে কেন্দ্র করে একটি বড় শ্রমবাজার গড়ে উঠত।
    এদেশের শিল্প খাতের মধ্যে খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প অন্যতম প্রধান এবং সম্ভাবনাময় খাত, যা কর্মসংস্থান এবং মূল্য সংযোজনের ক্ষেত্রে বড় অবদান রাখতে পারছে। খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প দেশের প্রস্তুতকৃত খাদ্য উৎপাদনের প্রায় ২২ ভাগের চেয়েও বেশি এবং এই উপখাত ২০ ভাগ শ্রমশক্তির কর্মসংস্থান করছে। মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে (জিডিপি) সব খাদ্য প্রক্রিয়াজাত এন্টারপ্রাইজের অবদান দুইভাগ। দেশের খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প প্রকৃতিগতভাবেই আকার, প্রযুক্তি, পণ্যের গুণগতমান, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ, বিপণন এবং বণ্টনের ভিত্তিতে বহুমুখী। এ খাতে প্রাথমিকভাবে মূলত ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পই বেশি এবং স্থানীয় উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণের সম্ভাবনা, মূল্য সংযোজন এবং রফতানির সঙ্গে সংযুক্ত। দেশে প্রায় ৭০০ প্রক্রিয়াজাতকরণ খাদ্য প্রস্তুতকারী শিল্প রয়েছে, যার মধ্যে গৃহে প্রস্তুতকৃত পণ্যও আছে এবং এর মধ্যে অন্তত ৩০টি শিল্পকারখানা। যার মধ্যে রয়েছে কনফেকশনারি, ফলমূল ও শাকসবজি, সিরিয়াল, ডেইরি বা দুগ্ধজাত, কার্বনেটেড এবং নন কার্বনেটেড জুস, কোমল পানীয় এবং বিভিন্ন ধরনের খাদ্যসামগ্রী। বাংলাদেশের প্রায় ১৬ কোটি জনসংখ্যা নিয়ে এখানে রয়েছে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের বিপুল অভ্যন্তরীণ বাজার। এই বাজার বরং আরও বৃদ্ধি পাবে যদি আমাদের সীমানা সংলগ্ন উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রায় সাড়ে সাত কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত অঞ্চলের জনগণের একই ধরনের খাদ্যাভ্যাস এবং সংস্কৃতিকে বিবেচনায় রাখা হয়।
    খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প ক্ষেত্রে এখনও রয়েছে যথাযথ প্রযুক্তিগত সহায়তার অভাব। এই শিল্পের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নতুন নতুন উদ্ভাবন এবং বিকল্প প্রযুক্তির মাধ্যমে আমাদের বহু ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের উৎপাদন লক্ষণীয়। শুধু নতুন পণ্যের উন্নয়নই নয়, বরং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার, গুণগতমানের উন্নয়ন, বায়োসেপ্টি এবং প্যাকেজিং ব্যবস্থার আধুনিকায়ন এবং সেই সঙ্গে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের বিপণন জোরদার করার পাশাপাশি উৎপাদন পদ্ধতির ওপরও জোর দেয়া হয়েছে।
    খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প কৃষি উৎপাদনের ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল, যেহেতু তার কাঁচামাল মূলত কৃষিজাত পণ্য। এ কারণে এই শিল্পকে নানাবিধ চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হয়।
    যার মধ্যে রয়েছে প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীলতা এবং মৌসুমভিত্তিক ফসল উৎপাদন। প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের রয়েছে সর্বাধিক সম্ভাবনা। এই সম্ভাবনাকে সম্পূর্ণরূপে কাজে লাগাতে হলে প্রয়োজন ফসল উৎপাদন, মূল্য সংযোজনের মাধ্যমে কৃষকের আয় বৃদ্ধি, অতিরিক্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং জনগণের পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প দেশের বিনিয়োগ, প্রযুক্তি এবং রফতানির ভিত্তিতে নতুন সুযোগ ও সম্ভাবনা সৃষ্টি করছে। যথাযথ বিনিয়োগের মাধ্যমে এসব থেকে পূর্ণ সুবিধা গ্রহণ এবং এ সেক্টরের উন্নয়ন ঘটতে পারে।