আলো ছড়াচ্ছে ‘কৃষি পাঠাগার’

আলো ছড়াচ্ছে ‘কৃষি পাঠাগার’মাহফুজ মামুন, চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গার গাড়াবাড়িয়া গ্রামের কৃষক-কৃষাণীদের মধ্যে আলো ছড়াচ্ছে ‘কৃষি পাঠাগার’। গ্রামের সব বয়সের মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হচ্ছে কৃষি পাঠাগারের সাফল্যের কথা। এখান থেকে আড়াইশ’ কৃষক-কৃষাণী আধুনিক কৃষি বিষয়ক ও অক্ষরজ্ঞানের শিক্ষা নিচ্ছেন। এ শিক্ষার মাধ্যমে কৃষিতে আধুনিকতার স্পর্শ লেগেছে। বদলে গেছে গ্রামের দৃশ্যপট। গ্রামের পিছিয়ে পড়া কৃষকদের সাফল্য দেখে অন্য কৃষকরা অনুপ্রাণিত হচ্ছেন।
জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়নের গাড়াবাড়িয়া গ্রামের বাগানপাড়ায় সমন্বিত কৃষক উন্নয়ন সংঘ ও কৃষি পাঠাগার প্রতিষ্ঠিত হয়। সমন্বিত কৃষক উন্নয়ন সংঘের সদস্য ৬শ’ জন। আর কৃষি পাঠাগারের সদস্য আড়াইশ’। সংগঠনটি পরিচালনার জন্য ২১ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি রয়েছে। গাড়াবাড়িয়া গ্রামে ১২শ’ সাধারণ কৃষক রয়েছেন। সংগঠন দুটি দেখাশুনা করছেন সদর উপজেলা কৃষি অফিসার তালহা জুবায়ের মাশরুর ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাহিন শাহনেওয়াজ রাব্বি।
কৃষি পাঠাগারে প্রতিদিন দুই শিফটে কৃষক-কৃষাণীদের ক্লাস নেওয়া হয়। বিকেলে কৃষাণীদের আর সন্ধ্যায় কৃষকদের এক ঘণ্টা করে পাঠদান করা হয়। বাগানপাড়ার শিক্ষিত দুই যুবক বকতিয়ার হোসেন ও সাইদুর রহমান বিনা বেতনে কৃষক-কৃষাণীদের পাঠদান করেন। এখানে কৃষির আধুনিক চাষাবাদ, কলাকৌশল, সার-কীটনাশকের ব্যবহার, বালাই ব্যবস্থাপনা, জৈব সার উত্পাদন ও ব্যবহার, আইপিএম ও আইএফএমসি সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়। পাশাপাশি নিরক্ষর কৃষক-কৃষাণীদের লেখাপড়া শেখানো হচ্ছে। ফলে তারা অক্ষরজ্ঞান অর্জন করছেন। এ শিক্ষা দিয়ে কৃষাণীরা বাড়ির আঙিনায় ছোট ছোট সবজি ও ফলের বাগান গড়ে তুলছেন। কৃষকরা চাষের সঠিক নিয়মকানুন প্রয়োগ করে সফলতার মুখ দেখছেন। পাঠাগারের সদস্যরা স্বামী-স্ত্রী। সংগঠনের ৬শ’ সদস্য মাসিক ১শ’ টাকা করে চাঁদা দেন। এ পর্যন্ত সংগঠনের তহবিলে ৬৫ হাজার টাকা জমা হয়েছে। ২০১৮ সালের শুরুতে সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে বিনা সুদে ঋণ কার্যক্রম চালু করা হবে।
সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সংগঠনের সদস্যদের মাঝে বিনামূল্যে চালতার চারা, সেচের জন্য ৩শ’ ফিট ফিতা পাইপ, মৌমাছি চাষের জন্য ২০টি বাক্স, দুটি হ্যান্ড স্প্রে ও একটি ফুট পাম্প দিয়েছে।
পাঠাগারে কৃষকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিনামূল্যে মেডিক্যাল ক্যাম্প ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা হয়। কৃষকদের ধান ঝাড়ার জন্য চশমা দেওয়া হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক গত শুক্রবার রাতে কৃষকদের একটি টিভি দেন। তিনি গ্রামের মাঠ ঘুরে দেখেন। কৃষি পাঠাগারে কৃষক-কৃষাণীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং রাতে কৃষকদের সঙ্গে কৃষি বিষয়ক বায়োস্কোপ দেখেন।
কৃষি পাঠাগারের সভাপতি আবদুল কাদের জানান, গ্রামের সবাই আমরা একটি পরিবারে আবদ্ধ হয়েছি। কৃষি গ্রামের কৃষকদের আলোর মুখ দেখিয়েছে। বাড়ির মেয়েরাও আমাদের সঙ্গ দিচ্ছে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাহিন শাহনেওয়াজ রাব্বি বলেন, গাড়াবাড়িয়া গ্রামের কৃষকদের জন্য কিছু করার উদ্দেশ্য নিয়ে আমি সমন্বিত কৃষক উন্নয়ন সংঘ গঠন করি। প্রথমে নানা সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়েছে। তা কাটিয়ে সংগঠনের সফলতার মধ্য দিয়ে আমি সফল হয়েছি।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তালহা জুবায়ের মাশরুর জানান, সমন্বিত কৃষক উন্নয়ন সংঘের সদস্যদের আধুনিক কৃষির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেই কৃষি পাঠাগারের উদ্যোগ নিয়েছি। পাল্টে গেছে গ্রামের দৃশ্য। নারীরাও শত বাধা পেরিয়ে সফলতার দ্বারপ্রান্তে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খামারবাড়ীর মহাপরিচালক মনজুরুল হান্নান সকালের খবরকে জানান, এ গ্রামের কৃষকরা দেশের অন্য জেলার কৃষকদের কাছে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। এ পাঠাগার মডেল হিসেবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। নতুন প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হবে এ সংগঠনটি।