কর্মসংস্থান হচ্ছে ১ লাখ ৫৪ হাজার তরুণের

তথ্যপ্রযুক্তি খাতে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নতুন ৩৪ হাজার তরুণের কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে ২০১২ সাল থেকে ৫৭২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয় ধরে লেবারাইজিং আইসিটি ফর গ্রোথ, এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড গভর্ন্যান্স প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে আইসিটি বিভাগ। অর্থ সংকটসহ বিভিন্ন জটিলতায় আটকে ছিল বহুজাতিক দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় নেয়া প্রকল্পটি। তবে নতুন করে আলোর মুখ দেখছে বহুল আলোচিত এ প্রকল্প। নির্ধারিত লক্ষ্য পূরণ নিশ্চিত করতে এ প্রকল্পে নতুন করে ৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশী মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৩১০ কোটি টাকা। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে আরও ১ লাখ ২০ হাজার তরুণ কাজ পাবেন বলে আশা করছে সরকার। এর ফলে এ খাতে আয় বাড়বে প্রতি বছর প্রায় ২০ কোটি ডলার। দেশীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র জানায়, প্রকল্পটিতে ৭ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা দিতে ২০১০ সালের ২৬ নভেম্বর সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে বিশ্বব্যাংক। প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণে ২০১৪ সালের শুরুতে এ খাতে সহায়তা ৫৮ লাখ ডলার কেটে নেয় বিশ্বব্যাংক। নতুন করে অর্থ দেয়ার ঘোষণা দেয়ায় এতে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা দাঁড়াবে ১০ কোটি ৩১ লাখ ডলারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি, আইসিটি, ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং খাতে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার দেশের আইটি খাতনির্ভর ক্যারিয়ার গড়তে প্রকল্পটি নেয়া হয়েছিল। প্রকল্পে দেশের ৩৪ হাজার তরুণ-তরুণীকে বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ দেবে সরকার। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)।
জানা যায়, প্রকল্পে প্রশিক্ষক হিসেবে থাকবেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের আইটি বিশেষজ্ঞরা। এর মাধ্যমে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে কম্পিউটার প্রকৌশলে স্নাতকধারী এবং বিজ্ঞান ও বাণিজ্যে স্নাতকধারীরা উচ্চতর প্রশিক্ষণের সুযোগ পাবেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ৩৪ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য প্রত্যক্ষ চাকরি ও ১ লাখ ২০ হাজার পরোক্ষ চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হবে। এছাড়া সরকারি কার্যক্রম পরিচালনা ও প্রশাসনে দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ই-গভর্নেন্স ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করবে এ প্রকল্প।
বিশ্বব্যাংক পরিচালিত একটি সমীক্ষার আলোকে প্রকল্পটি ২০০৯ সালে তৈরি করা হয়। ওই সমীক্ষায় বলা হয়, বাংলাদেশে ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত ও মেধাসম্পন্নদের সংখ্যা প্রচুর এবং শ্রমব্যয় কম হওয়ায় তথ্যপ্রযুক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তি-সক্ষম সেবার শিল্প বিকাশের সুযোগ তৈরি হয়েছে। তাছাড়া সফটওয়্যার প্রোগ্রামিং, গ্রাফিকস ও অ্যানিমেশনে এ শিল্প শক্ত অবস্থানে রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের সমীক্ষায় বলা হয়েছে, অন্ততপক্ষে ৩৪ হাজার তরুণ-তরুণী এ প্রকল্পে পরোক্ষ উপকারভোগী হবেন। ৩৪ হাজারের মধ্যে ৩০ শতাংশ অর্থাৎ ১০ হাজার নারী উপকারভোগী হবেন।
প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, দেশে এরই মধ্যে অনেক ফ্রিল্যান্সার তৈরি হয়েছে। সরকার এসব ফ্রিল্যান্সারকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উদ্যোক্তা ও বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) পেশাজীবী হিসেবে গড়ে তোলার কার্যক্রম নিয়েছে।
প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আইসিটি খাত বাংলাদেশে এখনও সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে। আইসিটি খাতকে দারিদ্র্যবান্ধব ও জনপ্রিয় করতে ডিজিটাল বাংলাদেশ স্লোগানে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। উৎপাদনশীলতা, সুশাসন ও সেবার মান নিশ্চিত করতে প্রযুক্তি খাতে দক্ষতা উন্নয়নের বিকল্প নেই। এতে আরও বলা হয়, মূল প্রকল্পটির লক্ষ্য পূরণের স্বার্থে বাড়তি অর্থ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। এতে আরও বলা হয়, মুদ্রার বিনিময় হারে তারতম্যের কারণে ৮৪ লাখ ডলারের ক্ষতি হয়েছে। এর বাইরে আরও ৫৯ লাখ ডলার আগে কেটে নেয়া হয়েছিল। এর ফলে প্রকল্পের লক্ষ্য পূরণে আরও ১ কোটি ৪৪ লাখ ডলার প্রয়োজন। এর বাইরে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের আওতা বাড়াতে নতুন করে ২ কোটি ৪০ লাখ ডলার প্রয়োজন। জাতীয় তথ্য ভা-ারের পরিধি বাড়ানো, সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও প্রকল্প পরিচালনায় ব্যয় আগের চেয়ে বেড়ে যাওয়ায় বাড়তি অর্থ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।