লালমনিরহাটে সবজি চাষে চরাঞ্চলে বিপ্লব

 শীতকালীন সবজি চাষে লালমনিরহাটসহ উওর ৮ জেলার চরাঞ্চলে বিপ্লব ঘটে গেছে। চরের সবজি এখন ৫০ টি বেশি দেশে রফতানি হচ্ছে। এই রফতানি হতে বছরে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকা আয় হচ্ছে। অর্থকারি সফল হিসেবে সবজি চাষ করে কৃষক লাভের মুখ দেখছে। তাই শিক্ষিত অর্ধশিক্ষিত তরুণরাও সবজি চাষে ঝুকে পড়েছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে বাংলাদেশ সবজি চাষে বিশ্বে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও)’র তথ্য মতে, গত চল্লিশ বছরে বাংলাদেশে সবজি চাষের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৬ গুন। বেড়েছে জমির পরিমানও। গত একদশকে সবজি চাষের পরিমান বেড়েছে ৭ শতাংশ হারে। ২০১৬- ২০১৭ অর্থ বছরে রবি মৌসুমে ৫ দশমিক ২৮ লাখ হেক্টর জমিতে সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়ে ছিল। কিন্তু গত বছর এই জমির পরিমান ছিল ৫ দশমিক ১০ লাখ হেক্টর। কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসেবে ২০১৩- ২০১৪ সালে দেশে এক কোটি ৩৯ লাখ টন সবজি উৎপাদন হয়। তিন বছরে সবজি উৎপাদন বৃদ্ধির হার প্রায় ৬ শতাংশ।
এ অঞ্চলে তামাকের পরিবর্তে অর্থকারি কৃষি ফসল হিসেবে সবজি চাষের দিকে কৃষক ঝুকছে। বিশেষ করে তরুণ কৃষকরা বেশি সবজি চাষে মনোযোগ দিয়েছে। সবজি চাষে জমির পরিমানও ব্যাপক হারে বেড়েছে। বিশেষ করে উত্তরের বড়বড় নদী ধরলা, তিস্তা, সানিয়াজান, করতোয়ায় এখন বছরের নয় মাস পানি থাকে না। জেগে উঠেছে বিশাল বিশাল বালু চর। ওই সব চরে সেচের সুবিধা সৃষ্টি করে প্রযুক্তি ব্যবহার করে ৯ মাস নানা জাতের সবজিসহ ফসল ফলাচ্ছে কৃষক। তিস্তা, ধরলা, সানিয়াজান ও রত্নাই নদীর চরে কৃষক আলু, টমেটো, মুলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পেঁপে, লাউ, মাটিয়া কুমড়া ( মিষ্টি জাতের কুমড়া), ধান, পাট, ধনিয়া, পিঁয়াজ, মরিচ, সরিষা, ভুট্টাসহ নানা ফসল ফলাচ্ছে।
সবজি চাষে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। চীন, ভারতের পরে বাংলাদেশের স্থান। বাংলাদেশের সবজি প্রায় ৫০টি বেশি দেশে রফতানি হচ্ছে। এই রফতানি আয়ের পরিমান প্রায় ৬৫০ কোটি টাকা। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে তরুণ কৃষক কীটনাশক ব্যবহার না করে অগ্রানিক পদ্ধতিতে বিষমুক্ত সবজি চাষ করছে। ব্যাপক হারে ফলন হচ্ছে। কৃষক দামও পাচ্ছে। তাই তামাক চাষের আধিক্যতা এ অঞ্চলে কমতে শুরু করেছে। অর্থকারী ফসল হিসেবে সবজি চাষ লাভ জনক হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে বিশ্বে সবজি চাষে তৃতীয় স্থানে হলেও এখনো পর্যন্ত জনসংখ্যার তুলনায় সবজি চাষে পিছিয়ে আছে। প্রতিদিন একজন মানুষ ১২০ গ্রাম সবজি খাওয়ার প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশে তার বিপরীতে মাত্র ৮০ গ্রাম সবজি খেয়ে থাকে। এছাড়াও মোট উৎপাদিত সবজির প্রায় ৬০ শতাংশ সংরক্ষনের অভাবে প্রতিবছর নষ্ট হয়ে যায়। ভোক্তার কাছে উৎপাদিত সবজির প্রায় ৪০ শতাংশ পৌচ্ছাচ্ছে।
বাংলাদেশে শুধু নিজেদের দেশের সবজি নয় বিদেশি সবজিও চাষ হচ্ছে। খুচরা বাজারে গেলে চোখে পড়ে হরেক রকমের বিদেশি সবজি। বিদেশি এসব শাক-সবজির মধ্যে রয়েছে লেটুসপাতা, ব্রকলি, ক্যাপসিয়াম, চেরি টমেটো, চাইনিজ ক্যাবেজ প্রভৃতি বিশ্বের ৫০টি দেশে সবজি রফতানি হচ্ছে। এরমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশে ৬০ শতাংশ সবজি রফতানি হয়ে আসছে। এছাড়াও যেসব দেশে সবজি রফতানি হচ্ছে দেশ গুলো হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালমিয়া, সুইডেন, ডেনমার্ক, ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, জাপান, সিঙ্গাপুর, ওমান প্রভৃতি দেশে সবজি রফতানি হয়ে আসছে। রফতানি করা সবজির হচ্ছে আলু, বরবটি, শসা, চিচিঙ্গা, করলা, কাঁকরোল, টমেটো, পেঁপে, বেগুন, ঢেঁড়স, লাউ, কচুর লতা, মিস্টি কুমড়া, লালশাক, পুঁইশাক, ফুলকপি, পালংশাক, বাঁধাকপি, কাঁচামরিচ, পটোল, শিমের বিচি, কাঁচকলা, কলার ফুল, কচুশাক, কাঁঠালের বিচি ও ডাটা শাক ইত্যাদ্দি।
চরাঞ্চলে সবজি চাষ লালমনিরহাট জেলায় ব্যান্ডিংয়ের মাত্রা পেয়েছে। এমন কোন চর নেই যেখানে সবজি চাষ হচ্ছে না। চরাঞ্চল গুলো একেকটি ছোট ছোট খাদ্যভান্ডারে পরিনত হয়েছে। তবে সবজি চাষের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে সবজি বাজারজাতকরাণ, বিপন ও সংরক্ষণের তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি। এখনো পর্যন্ত কৃষকের চেয়ে ফড়িয়া ব্যবসায়িরা সবজিতে বেশি লাভবান হচ্ছে।
লালমনিরহাট কৃষি অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিদু ভুষন রায় জানান, চরাঞ্চলে কৃষিতে বিপ্লব ঘটছে। চরাঞ্চলের মানুষজন এখন অর্থনীতিক ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। সে দিন বেশি দূরে নয়, চরাঞ্চলের মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নতের কাছাকাছি চলে যাবে।