শত বছর ধরে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে কৃষ্ণপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়

সদরপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় শত বছরের অধিক সময় ধরে এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে। উপজেলার ২৪টি মাধ্যমিক ও নিম্ন-মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে এ বিদ্যালয়টি প্রথম। জেলার হিন্দু প্রধান এলাকার মধ্যে কৃষ্ণপুর গ্রাম উল্লেখযোগ্য। ১৮৮০ সালে কুমিল্লার তত্কালীন জমিদার সুবোধ চন্দ্র রায়ের সম্পত্তিতে কৃষ্ণপুর পাঠশালা নামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। যার প্রাথমিক নাম ছিল (কে এল পি এস)। পরে স্থানীয় কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তির উদ্যোগে মাধ্যমিক স্তরের একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগে নেয়া হয়। গৌরচর গ্রামের ডা.সুধীর রঞ্জর দত্তের বড়ভাই তত্কালীন ব্রিটিশ সরকারের জজ কোর্টের নাজির প্রফুল্ল রঞ্জন দত্তের সার্বিক উদ্যোগে স্থানীয় জমিদার অখিল চন্দ্র বিশ্বাস ও তার দুই ছেলে সুবোধ চন্দ্র বিশ্বাস, অতুল চন্দ্র বিশ্বাস (গোপাল বিশ্বাস) এবং চৌধুরী আব্দুল গনি মিয়ার সার্বিক উদ্যোগে একটি মাধ্যমিক স্তরের বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়। বিশ্বাস পরিবার ও গনি মিয়ার পরিবারের উদ্যোগে স্থানীয় হলধর সাহার দান করা জমি এবং পাশের দিরাজউদ্দিন মাতুব্বরের জমি কিনে ১৯১০ সালে কৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরে বিদ্যালয়টির নামকরণ করা হয় কৃষ্ণপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়।

বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠালগ্নে ১৯৩৭ সালে প্রথম এন্ট্রাস পরীক্ষা শুরু হয়। ১৯৪১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রেশন পায়। প্রতিষ্ঠালগ্নের ওই সময় বিদ্যালয়টিতে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ১২৯৫ জন। যা ফরিদপুর জেলার মধ্যে সর্বাধিক বলে বিবেচিত। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত চতুর্থ শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণি চালু আছে। বর্তমানে বিদ্যালয়ের নিজস্ব প্রায় ছয় একর জমি রয়েছে। দুটি বিশাল খেলার মাঠ, পাকা আধাপাকা সাতটি ভবন আজও বিদ্যালয়টির ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। বর্তমানে আক্তারুজ্জামান তিতাসের সভাপতিত্বে ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি শক্তিশালী কমিটি রয়েছে। পশ্চিম পাশের মাঠের সড়ক ঘেঁষে নতুন মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। মার্কেটটি বিদ্যালয়ের নিজস্ব তহবিল গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে বলে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মন্তব্য।

উপজেলার প্রধান ব্যবসা কেন্দ্র হাট কৃষ্ণপুর বাজারের পাশে শত বছরের অধিককাল কৃষ্ণপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হলেও এখানে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়নি। ফলে এখানকার দু’শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী প্রতিবছর এসএসসি পাস করে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য ৩০ কি.মি. দূরের জেলা শহর ফরিদপুর ও ১৫ কি.মি. দূরের উপজেলা সদর সদরপুরে যেতে হয়। ফলে গরীব ও দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিদ্যালয়টিতে কলেজিয়েট স্কুল প্রতিষ্ঠার যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। এলাকার সর্বমহলের দাবি বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এলাকাবাসী।