কোয়েল জিন্নাত আলীর ফুয়েল

টাঙ্গাইলের সখীপুরে লাঙ্গুলীয়া গ্রামের ১০ম শ্রেণী পড়ুয়া সফল কোয়েল চাষি জিন্নাত আলী। অভাব অনটনের মধ্যে দিয়েই চলছিল জিন্নাত আলীর সংসার। বাবা সাহেব আলী দিনমুজুরী কাজ করে কোনোভাবে সাত মুখের আহার জোগাতেন। অভাবের সংসারে সামান্য আয়ে আশায় এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে গড়েন পলট্রি খামার। লাভের সম্ববনা দেখতে পাওয়ায় তার দেখানো পথে এখন অনেকেই হাটতে চাইছে, এলাকার অনেকেই গড়তে চাইছে কোয়েলের খামার। জিন্নাত লেখাপড়ার পাশাপাশি ২০১৪ সালে বাড়ির আঙ্গিনায় ২ শতাংশ জমির ওপর তৈরি করেন কোয়েল পাখির খামার। ১৫’শত কোয়েলের বাচ্চা দিয়েই শুরু হয় স্কুল পড়ুয়া কিশোর জিন্নাতের স্বপ্নের খামারের যাত্রা। এখন তার খামারে কোয়েলের সংখ্যা ৬ হাজার। এ বছর কোয়েলের বাচ্চা ফোটানোর একটি হ্যাঁচারি করার পরিকল্পনা আছে তার। জিন্নাত জানান, উপজেলার প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারি সফল কোয়েল পাখির ব্যবসায়ী শামীম ভাইয়ের কথা। ছুটে যাই সেখানে। ২০ হাজার টাকা দিয়ে প্রথমে ১৫’শত কোয়েলের বাচ্চা নিয়ে আসি। নিজেই যত্ন নিতে থাকি। ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে আমার স্বপ্নের কোয়েল পাখির খামার। কয়েক মাসের মধ্যেই সামান্য আয় হতে থাকে। দিন দিন কোয়েলের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। বর্তমানে আমার খামারে কোয়েলের সংখ্যা বেড়ে ৬ হাজার ছাড়িয়েছে। প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার কোয়েল ডিম দিচ্ছে। বর্তমানে প্রতি মাসে অর্ধলক্ষাধিক টাকা আমার আয় হয়। জিন্নাত আরও জানান, কোয়েলের খামারে কোন দুর্গন্ধ নেই। তাই এটি পরিবেশ বান্ধব। ব্যবস্যার পাশাপাশি লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছি। এক সময় অভাবের কারণে আমার ও ছোট ভাইয়ের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। কোয়েল খামার করে আমাদের দুই ভাইয়ের লেখাপড়া খরচসহ সচ্ছলতার সঙ্গে সংসার চালাচ্ছি। প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে খামার দেখার জন্য শত শত লোকজন ছুটে আসে। তারা জানতে চান কোয়েল চাষের কলাকৌশল। তিনি আরও বলেন, কোয়েলের নিজস্ব কোন খাবার না থাকলেও বাজারে পাওয়া মুরগির খাবার দিয়েই কোয়েল পালন করা যায়। বাজারে দুই জাতের কোয়েল পাওয়া যায়। একটি লেয়ার জাতের কোয়েল যা ৪২-৪৫ দিনের মধ্যেই ডিম দেয় এবং টানা ১৮ মাস ডিম দিয়ে থাকে। অপর দিকে একটি ব্রয়লার জাতের কোয়েল যা ২৮ দিনের মধ্যে বিক্রির উপযোগী হয়। জিন্নাতের বাবা সাহেব আলী বলেন, কোয়েল চাষের মাধ্যমে সংসারে সচ্ছলতা এনেছে আমার ছেলে। ব্যবসার পাশাপাশি লেখাপড়া চালিয়ে। এ বছরী এসএসসি পরীক্ষা দেবে তাই সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করি আমার বাবা জন্য। এমন ছেলে যেন প্রত্যেক ঘরে ঘরে হয়। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এসএম উকিল বলেন, কোয়েলের মাংস ও ডিম খুব সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। কোয়েলের ডিম ও মাংসে কোলেস্টেরল কম থাকায় স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।