বাংলাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থায়ন অনুমোদন দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এর ফলে ১১৫ মিলিয়নেরও বেশি স্থানীয় জনগণ লাভবান হবেন। প্রকল্পটি ইউনিয়ন পরিষদসমূহে জাতীয় বাজেট হতে বরাদ্দ নিশ্চিত করবে। বিশ্বব্যাংকের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট
অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ) থেকে পাওয়া এই ঋণ ছয় বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩৮ বছরে পরিশোধ করতে হবে। এতে শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ দিতে হবে।
গতকাল ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের সদর দফতরে এ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সংস্থাটির ঢাকা কার্যালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় সরকারকে নিজস্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তহবিল ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিতে এবং জনগণের চাহিদার ভিত্তিতে অগ্রাধিকারমূলক উন্নয়ন কর্মকা- বাস্তবায়নে সক্ষম করে তুলবে। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণে পূববর্তী দুটি প্রকল্পের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় লোকাল গর্ভন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট-৩ (এলজিএিসপি-৩) গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পটি বাংলাদেশের সবকয়টি ইউনিয়ন পরিষদে- অর্থাৎ ৪৫৫০টি ইউনিয়ন পরিষদেই বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পটি পৌরসভা এলাকায়ও সম্প্রসারিত হবে এবং পাইলটভিত্তিতে দেশের ৮টি বিভাগের ১৬টি পৌরসভায় বস্নক গ্রান্টসের আওতায় অর্থ সরবরাহ আরম্ভ করবে। প্রকল্পে যোগ্য বিবেচিত পৌরসভাসমূহ এই প্রথমবারের মতো জনগণের প্রয়োজনীয় সেবার মান বাড়াতে উপ-প্রকল্প বাছাই ও বাস্তবায়ন করতে বস্নক গ্রান্টসের মাধ্যমে অর্থ পাবেন।
বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালে বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর রাজশ্রী পারালকার বলেন, বিকেন্দ্রীকরণকে এগিয়ে নেয়া এবং স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালীকরণে সরকারের সঙ্গে বিশ্বব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। নিয়মিত, অনুমেয় ও স্বচ্ছ অর্থ স্থানান্তর পদ্ধতি ইউনিয়ন পরিষদ এবং অংশগ্রহণকারী পৌরসভাগুলোকে পরিকল্পনা প্রণয়ন, অংশগ্রহণমূলক বাজেট তৈরি, সরকারি অর্থ ব্যবস্থাপনা ও জবাবদিহিতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
অর্থ স্থানান্তর পদ্ধতি প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে প্রকল্প শুরুর চতুর্থ বছর থেকে সরকার জাতীয় বাজেট বরাদ্দ থেকে ইউনিয়ন পরিষদসমূহে বস্নক গ্রান্টসের অর্থ সম্পূর্ণভাবে প্রদান করবে। এতে করে ইউনিয়ন পরিষদসমূহ আরও কার্যকরভাবে স্থানীয় প্রয়োজন মেটাতে এবং ইউনিয়ন পরিষদ ও বাসিন্দাদের মধ্যকার সম্পর্ক আরও জোরদার করতে সক্ষম হবে।
লোকাল গর্ভন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট-৩-এর বিশ্বব্যাংক টিম লিডার শেনহুয়া ওয়াং বলেন, পূর্বের প্রকল্পগুলোর মতো এলজিএসপি-৩ নারীর ক্ষমতায়নের ওপর গুরুত্ব দেবে। ওয়ার্ড কমিটিসমূহ ও তদারকি কমিটির অন্তত পক্ষে এক-তৃতীয়াংশ সদস্য আগের মতোই নারী থাকবেন। নারীদের সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে নারীদের অগ্রাধিকার দেয়া প্রকল্পসমূহের জন্য অনুদানের অন্তত ৩০ শতাংশ বরাদ্দ করা হবে।
সূত্র জানায়, এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সবগুলো ইউনিয়ন পরিষদ ও ১৬টি পৌরসভায় স্বচ্ছ আন্তঃসরকার অর্থ স্থানান্তর (ইন্টার গভার্মেন্টাল ফিসক্যাল ট্রান্সফার) পদ্ধতি নিশ্চিত হবে। ফলে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। সেই সঙ্গে ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব আয় বৃদ্ধি, স্থানীয় চাহিদা ভিত্তিতে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ, নারীর ক্ষমতায়ন এবং বাস্তবায়ন সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। তাই বিশ্বব্যাংক ধারাবাহিকভাবে প্রকল্পটিতে সহায়তা দিচ্ছে। অর্থাৎ এর আগে এলজিএসপি-১ এবং এলজিএসপি-২ প্রকল্পেও সহায়তা করেছে সংস্থাটি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক নমনীয় ঋণ হিসেবে সহায়তা করবে ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা (৩০ কোটি ডলার)।
বিশ্বব্যাংক থেকে জানানো হয়, প্রকল্পের আওতায় কয়েকটি কম্পোনেন্টের মাধ্যমে কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। কম্পোনেন্ট-১ এর মাধ্যমে মৌলিক থোক বরাদ্দ দেয়া হবে ৪ হাজার ২৮৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এছাড়া দক্ষতাভিত্তিক বরাদ্দ দেয়া হবে ৮৬৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা এবং ইউনিয়ন পরিষদের বিবিজি অর্থ স্থানান্তর ব্যবস্থা প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করা হবে। কম্পোনেন্ট-২ এর আওতায় তথ্য প্রবাহ ও জবাবদিহিতামূলক কাজ করা হবে। যেমন অডিট ও পারফরমেন্স মূল্যায়ন, অডিট ও পারফরম্যান্স মূল্যায়ন ব্যবস্থা প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ এবং এমআইএস পরিচালনা করা হবে। কম্পোনেন্ট-৩ এর আওতায় পৌরসভার বর্ধিত বস্নক গ্রান্টসের পাইলটীকরণ করা হবে। কম্পোন্টে-৪ এর আওতায় ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভাগুলোর সদস্যদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা হবে। কম্পোনেন্ট-৫ এর আওতায় প্রকল্প ব্যবস্থাপনা এবং এলজিএসপি-২ এর সম্পদ ও আনুষঙ্গিক বিষয়াদি এলজিএসপি-৩ এ স্থানান্তর করা হবে।
উল্লেখ্য, পূর্ববর্তী এলজিএসপি’র আওতায় ২০১১ সাল থেকে সকল ইউনিয়ন পরিষদ স্থানীয় প্রয়োজনীয় সেবা প্রদানের লক্ষ্যে নিজস্ব পরিকল্পনায় তহবিল ব্যবহারের পূর্ণ স্বাধীনতাসহ বার্ষিক বস্নক গ্রান্টস পেয়ে আসছে। ২০০৬ সালে প্রথমবারের মতো লোকাল গর্ভন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্টের (এলজিএসপি) মাধ্যমে নিজস্ব পরিকল্পনায় ব্যয়ের জন্য ইউনিয়ন পরিষদসমূহকে বস্নক গ্রান্টসের অর্থ প্রদান শুরু হয়, এই অনুদান সেই সময়ে একটি ইউনিয়ন পরিষদ যা পেত, এখন তার ১১ গুণ বেশি পাচ্ছে। এলজিএসপি-৩ তহবিল বরাদ্দের এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে।