পাখির অভয়াশ্রম পাবলাখালী বিল

নিজের কাজে ব্যস্ত কৃষক। সামনে উড়ছে পাখি। শিকারির উৎপাত নেই বলে দীঘিনালার পাবলাখালী বিলের কৃপাপুর হয়ে উঠেছে পাখির বিচরণক্ষেত্রে l প্রথম আলোকলের লাঙল দিয়ে জমি চাষ করছিলেন চাষি কমল বিকাশ চাকমা। ইঞ্জিনের শব্দে চারদিক মুখর। তবে বক, শালিক, ঘুঘুসহ নানা জাতের পাখির ভ্রুক্ষেপ নেই। ইঞ্জিনের বিকট শব্দ উপেক্ষা করে তারা বিচরণ করছিল জমিতে। আশপাশের জমিতেও দেখা গেল একই দৃশ্য। পুরো জায়গাটা যেন পাখির অভয়াশ্রম।
গত ২৮ জানুয়ারি সকালে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার কবাখালী ইউনিয়নের পাবলাখালী বিলের কৃপাপুর এলাকায় গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। উপজেলার অন্যান্য স্থানে তামাক চাষ হলেও এই বিলে হয় না। চাষি কমল বিকাশ চাকমা জানান, তামাক-দূষণ না থাকায় এই এলাকায় পাখিদের আনাগোনা বেশি। স্থানীয় লোকজন পাখিদের বিরক্ত করে না। কেবল তা–ই নয়, বাইরের লোকজনকে পাখি শিকারে বাধাও দেয়। ফলে পাখিরা এই এলাকায় নির্বিঘ্নেই বিচরণ করে।
কমল বিকাশ চাকমার পাশের জমিতে কাজ করছিলেন চাষি কন্তি চাকমা (৪৫), পূর্ণ জীবন চাকমা (৩৬) ও ধর্মজিৎ চাকমা (৩৭)। তাঁরা জানান, কয়েক বছর আগেও এ বিলে পাখিদের দেখা যেত না। তখন এই বিলে ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করা হতো। পরে এলাকাবাসী পাখি শিকারে বাধা দেয়। এখন আর এই বিলে কোনো পাখি শিকারি আসেন না। স্থানীয় মানুষজন পাখিদের বিরক্তও করে না। তাই তিন–চার বছর ধরে বিলে পাখির সংখ্যা বাড়ছে।
বিলে কয়েক ঘণ্টা ঘুরে নানা জাতের পাখির দেখা মিলেছে। এর মধ্যে ছিল সাদা বক, শালিক, দোয়েল, টুনটুনি, ফিঙে এবং বেশ কিছু পরিযায়ী পাখি। চাষি রিতা চাকমা বলেন, ‘পাখিরা চাষিদের অনেক উপকার করে। বিশেষ করে ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড় খায়। পাখি থাকলে জমিতে পোকার উপদ্রব কমে। ফলে কীটনাশকও কম লাগে।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর কবাখালী ইউনিয়নের পরিদর্শক আবদুর রহমান বলেন, ‘পাবলাখালী বিলে মানুষ আর পাখির বন্ধুত্ব দেখে মুগ্ধ হয়েছি। সব জায়গায় এভাবে পাখিদের রক্ষা করা হলে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকবে।’
খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী বলেন, পাখিরা যে এলাকাকে নিরাপদ স্থান মনে করবে সে এলাকাতেই বেশি বিচরণ করবে। দীঘিনালার সর্বত্র তামাকের আগ্রাসন। তামাকখেতে ব্যবহার করা হয় শক্তিশালী কীটনাশক। এ কারণে উপজেলার ওইসব স্থানে পাখিরা এখন আর বিচরণ করে না। এ ছাড়া বন–জঙ্গল কাটার ফলে পাখিরা আশ্রয়স্থলও হারিয়েছে। তাই পাখিরা নিরাপদ খাদ্য এবং আশ্রয়স্থলের সন্ধানে পাবলাখালী বিলে যাচ্ছে।