আলুর ৪টি ও গমের ২টি নতুন জাত উদ্ভাবন

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট গমের ২টি, আলুর ৪টি নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে। একই সঙ্গে পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবন করেছে পাটের নতুন একটি জাত। নতুন এ জাতগুলোর সব ধরনের ট্রায়াল শেষ। চলতি সপ্তাহে জাতীয় বীজ বোর্ডের সভায় এগুলো চূড়ান্ত অনুমোদন পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। অনুমোদনের পর কৃষকরা নতুন জাতগুলো মাঠে আবাদের সুযোগ পাবেন।

কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন, নতুন এ জাতগুলোর মাধ্যমে কৃষি খাতে নতুন মাত্রা যোগ হবে। রোগ প্রতিরোধী ও বেশি ফলনের ক্ষমতা এবং যে কোনো ধরনের তাপ সহ্য করার ক্ষমতা সম্পন্ন জাত রয়েছে ছাড়করণের তালিকায়।

কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটরে পরিচালক (গবেষণা) ড. লুত্ফর রহমান বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকার জমি, কৃষি পরিবেশের সঙ্গে সমন্বয় করে নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করা হয়। দেশে গমের গড় ফলন ৩ টন। গবেষণার মাধ্যমে এ ফলন ৫ টনে নিয়ে আসা হচ্ছে। নতুন জাতের কারণে ফলন এবং উত্পাদন উভয় বাড়ে।

তথ্য অনুযায়ী, গত ১৪-১৫ অর্থবছরে চার লাখ ৪৪ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ হয়। হেক্টর প্রতি ফলন ৩ টনের বেশি। উত্পাদন হয় ১৩ লাখ ৪৮ হাজার ১৮৬ টন। নতুন উদ্ভাবিত গমের প্রস্তাবিত নাম দেওয়া হয়েছে বারি গম ৩১। জাতটি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত একটি উচ্চ ফলনশীল গমের জাত। জাতটি পাতার দাগ রোগ সহনশীল, মরিচা রোগ প্রতিরোধী, তাপ সহিষ্ণু এবং দানা সাদা ও আকারে মাঝারি। জীবনকাল ১০৫ থেকে ১০৯ দিন। গমের অপর জাতটির নাম প্রস্তাব করা হয়েছে বারি গম ৩২। জাতটি পাতার দাগ রোগ সহনশীল, মরিচা রোগ প্রতিরোধী, তাপ সহিষ্ণু এবং দানা সাদা ও আকারে মাঝারি। উপযুক্ত পরিবেশে হেক্টর প্রতি ফলন ৪.৬ থেকে ৫ মে.টন। আমন ধান কাটার পর দেরিতে বপনের জন্য জাতটি উপযোগী।

এছাড়া আলুর আরো চারটি নতুন জাত বাজারে ছাড়করণের জন্য অনুমতি চাওয়া হয়েছে। নতুন জাত চারটির প্রস্তাবিত নাম বারি আলু ৭৪, বারি আলু ৭৫, বারি আলু ৭৬, বারি আলু ৭৭। বারি ৭৪ জাতটি হতে ৯০ থেকে ৯৫ দিনে আলু সংগ্রহ করা যায়। গড় ফলন হেক্টর প্রতি ৪৬ দশমিক ২৫ মে.টন। নতুন জাত উদ্ভাবনের জন্য আলুর কৌলিক সারিটি নেদারল্যান্ড থেকে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিয়ে এসেছে। আলু ডিম্বাকৃতি থেকে লম্বা ডিম্বাকৃতি ও বড় আকারের। আলুর চামড়া মাঝারি মসৃণ ও হলুদ রংয়ের। আলুর ভিতরের অংশ ক্রীম রংয়ের ও চোখ অগভীর। জাতটি চেক জাত ডায়ামন্ট ও গ্রানোলা থেকে ৮টি ভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন।

বারি আলু ৭৫ জাতের গাছ হতে ৭০ থেকে ৭৫ দিনে আলু সংগ্রহ করা যায়। আলু খাটো ডিম্বাকৃতি ও মাঝারি আকারের। প্রস্তাবিত বারি আলু ৭৬ নামের জাতটি হতে ৯০ থেকে ৯৫ দিনে আলু সংগ্রহ করা যায়। আলু খাটো ডিম্বাকৃতি, গোলাকার ও মাঝারি আকারের। প্রস্তাবিত বারি আলু ৭৭ জাতের গাছ হতে ৯০ থেকে ৯৫ দিনে আলু সংগ্রহ করা যায়। আলু লম্বা ডিম্বাকৃতি ও বড় আকারের। আলুর চামড়া মাঝারি মসৃণ ও লাল রঙের। আলুর ভিতরের অংশ হলুদ রঙের ও চোখ অগভীর। জাতটির গড় ফলন হেক্টর প্রতি ৩৪ দশমিক ৩১ মে.টন।

কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রস্তাবিত জাতটি কেনাফ-৪ হিসেবে সারাদেশে চাষাবাদের নিমিত্ত ছাড়করণের সুপারিশ করা হয়েছে। এটা উঁচু-নিচু পাহাড়ি অঞ্চল, চর অঞ্চল ও উপকূলীয় অঞ্চলে চাষাবাদের উপযোগী।

ইরান থেকে আহরিত কৌলিক সম্পদ ব্যবহার করে বিশুদ্ধ সারি নির্বাচনের মাধ্যমে এটি উদ্ভাবন করা হয়েছে। জাতটি পাটের মতোই আঁশ উত্পাদনকারী একটি উন্নত জাত। জাতের কাণ্ড লাল রংয়ের; যা এ পর্যন্ত উদ্ভাবিত জাতসমূহ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। জাতটির উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো জাতটি দ্রুত বর্ধনশীল, জলাবদ্ধতা সহিষ্ণু, অধিক ফলনশীল ও বায়োমাস সম্পন্ন।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রধান বীজতত্ত্ববিদ আজিম উদ্দিন বলেন, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি বীজ বোর্ডের সভাপতি কৃষিসচিব এর সভাপতিত্বে বীজ বোর্ডের ৯০তম সভা অনুষ্ঠিত হবে। এসব সভায় গমের দুটি, আলুর ৪টি, পাটের ১টি জাত ছাড়করণ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।