দারিদ্র্যের হার ২২ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে এসেছে

পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বর্তমান সরকারের পরিকল্পিত ও সুষম দারিদ্র্যবান্ধব উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের ফলে দারিদ্র্যের হার ২২ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে এসেছে, যা ২০০৫ সালে ৪০ শতাংশ ছিল। গতকাল দশম জাতীয় সংসদের ১৪তম অধিবেশনের ৭ম কার্যদিবসে সরকারিদলের সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব তথ্য জানান। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়।
মন্ত্রী বলেন, বাস্তবায়নাধীন সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার প্রাক্কলন অনুযায়ী ২০২০ সাল নাগাদ দারিদ্র্যের হার ১৮ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসবে। মন্ত্রী জানান, ২০০০, ২০০৫, ২০১০ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল যথাক্রমে ৪৮ দশমিক ৯, ৪০ শতাংশ ও ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ। ওই সময়ে শহরের দারিদ্র্যের হার ছিল যথাক্রমে ৩৫ দশমিক ২, ২৮ দশমিক ৪ ও ২১ দশমিক ৩ শতাংশ এবং গ্রামীণ দারিদ্র্র্যের হার ছিল যথাক্রমে ৫২ দশমিক ৩, ৪৩ দশমিক ৮, ৩৫ দশমিক ২ শতাংশ।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, শহর এবং গ্রামের মধ্যে আয় বৈষম্য কমিয়ে আনতে সরকার ক্রমাগতভাবে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করছে। এ খাতে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪৫ হাজার ২৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা বাজেটের ১৩ দশমিক ২৮ এবং জিডিপির ২ দশমিক ৩১ শতাংশ। তিনি বলেন, এর বাইরে পিছিয়ে পড়া অঞ্চলসমূহের দুর্বল গ্রামীণ অবকাঠামো (বিদ্যুৎ, গ্রামীণ সড়ক ও সেচ) এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের (বন্যা ও খরা) বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় খামার এবং কৃষিভিত্তিক আয় বৃদ্ধিতে সুনির্দিষ্ট বাধাসমূহ অপসারণে মনোযোগ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এছাড়া অতি দরিদ্রদের কর্মসংস্থানের জন্য চলতি অর্থবছরে বাজেটে ১ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
সরকার সব মায়ানমার নাগরিককে প্রত্যাবাসনে সমর্থ হবে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অব্যাহত প্রচেষ্টা ও উদ্যোগের ফলশ্রুতিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্তর্জাতিক জনমতের ভিত্তিতে বাংলাদেশ নিজ ভূখ-ে অবৈধভাবে প্রবেশকারী সব মায়ানমার নাগরিককে প্রত্যাবাসনে সমর্থ হবে। গতকাল সংসদে সরকারিদলের সদস্য বেগম পিনু খানের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে ৩৩ হাজারের অধিক রেজিস্টার্ড শরণার্থী বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক হাইকমিশন পরিচালিত দুটি রেজিস্টার্ড ক্যাম্পে এবং ৩ লাখেরও অধিক অনিবন্ধিত মায়ানমার নাগরিক বিভিন্ন অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে। সম্প্রতি আরও ৬৭ হাজার মায়ানমার নাগরিক বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে।
আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, মায়ানমারের নাগরিকদের প্রত্যাবাসনের জন্য দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করা হয়েছে। বাংলাদেশ ও মায়ানমারের মাঝে অনুষ্ঠিত সব দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ও ফরেন অফিস কনসালটেশনে মায়ানমার থেকে আগত সব অনুপ্রবেশকারীকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য সরকার নিয়মিত জোরালোভাবে দাবি উত্থাপন করে আসছে। তিনি বলেন, এছাড়াও বিদেশে সব বাংলাদেশ মিশন সংশ্লিষ্ট দেশসমূহে অবৈধ মায়ানমার নাগরিক সংক্রান্ত বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষে কূটনৈতিক কর্মকা- পরিচালনা করছে এবং বাংলাদেশের অবস্থানের পক্ষে জনমত তৈরির চেষ্টা করছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ ও ওআইসিসহ অন্য আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থাসমূহের সহযোগিতায় বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী দেশ মায়ানমারের সঙ্গে কূটনৈতিক আদান-প্রদান ও পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যমে এই দীর্ঘমেয়াদি সমস্যাটির একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে উপনীত হওয়া যাবে।
বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য বিল ২০১৬ পাস
জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য বিল, ২০১৬ পাস হয়েছে। গতকাল দশম জাতীয় সংসদের ১৪তম অধিবেশনের ৭ম কার্যদিবসে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে কণ্ঠভোটে তা পাস হয়।
পরিবেশ ও বনমন্ত্রী তার প্রস্তাবে বলেন, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উহার উপাদানসমূহের টেকসই ব্যবহার, জীবসম্পদ ও তদসংশ্লিষ্ট জ্ঞান ব্যবহার হইতে প্রাপ্ত সুফলের সুষ্ঠু ও ন্যায্য হিস্যা বণ্টন এবং আনুষঙ্গিক অন্য বিষয়ে বিধান করিবার নিমিত্তে বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য বিল, ২০১৬ স্থায়ী কমিটি কর্তৃক সুপারিশকৃত আকারে বিবেচনা করে পাসের প্রস্তাব করেন।
বিলে অনুমোদন ব্যতীত জীববৈচিত্র্য সম্পর্কিত কার্যক্রম গ্রহণে বিধি-নিষেধ, জীববৈচিত্র্য বিষয়ক গবেষণালব্ধ ফলাফল হস্তান্তরের বিধি-নিষেধ, গবেষণালব্ধ প্রবন্ধ প্রকাশ, জীববৈচিত্র্য বিষয়ক মেধাস্বত্ব অধিকারের জন্য আবেদনে বিধি-নিষেধসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বিধান করা হয়। বিলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্বে ১৮ সদস্য বিশিষ্ট জীববৈচিত্র্য বিষয়ক জাতীয় কমিটি গঠনের বিধান করা হয়। এছাড়া বিলে জীববৈচিত্র্য বিষয়ক জাতীয় কর্ম-কৌশল ও কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়ন, জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ ঐতিহ্যগত স্থান ঘোষণা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব প্রদান, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ তহবিল গঠন, হিসাব রক্ষণ ও নিরীক্ষা, বার্ষিক প্রতিবেদনসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বিধান করা হয়েছে।
বিলে অনুমোদন ব্যতিত জীববৈচিত্র্য সম্পর্কিত কার্যক্রম গ্রহণকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে এর জন্য সুনির্দিষ্ট বিধান করা হয়েছে। এছাড়া বিপন্ন প্রাণী বা জীব সম্পদের বিরূপ প্রভাব সৃষ্টিকারী কার্যক্রমকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে সুনির্দিষ্ট দ- বিধান করা হয়েছে।
জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম, সেলিম উদ্দিন ও বেগম নূর-ই হাসনা লিলি চৌধুরী বিলের ওপর জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধিত প্রস্তাব আনলে তা কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।