আড়াইহাজারের তৈরি থ্রি-পিছ-শাড়ি ও গামছা যাচ্ছে দেশের বাইরে

তাঁত প্রধান আড়াইহাজার উপজেলায় তাঁতিদের সামনে সুদিন ফিরে আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এ অঞ্চলের তৈরি থ্রি-পিছ, লুঙ্গি, শাড়ি, পাঞ্জাবি, গামছা ও তোয়ালে এখন দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে যাচ্ছে। বিদেশে হস্তশিল্পের পণ্যের বাজার তৈরি হওয়ায় স্থানীয় তাঁতিরা চোখে আশার আলো দেখছেন। এই মুহূর্তে একটু সরকারি সহযোগিতা পেলে তাঁতিদের সামনে খুলে যাবে অপার সম্ভাবনার দুয়ার। বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচবে আড়াইহাজারের ঐতিহ্যবাহী হস্তচালিত তাঁত শিল্প।

 

সরেজমিনে গত ১৫ দিন তাঁত প্রধান এলাকা ঘুরে জানা যায়, আড়াইহাজারে প্রধানত থ্রি-পিছ, শাড়ি, পাঞ্জাবি, গামছা, তোয়ালেসহ বিভিন্ন ধরনের তাঁতের তৈরি পোশাক তৈরি হয়। উপজেলার এসব তৈরি পোশাক বর্তমানে দেশের বাইরেও যাচ্ছে। স্বাধীনতার পরেও তাঁতের তৈরি কাপড়ের বেশ চাহিদা ছিল। পরে কলের কাপড়ের কাছে হস্তচালিত তাঁতে বোনা কাপড় মার খায়। সে সময় স্থানীয় তাঁতবোর্ডের কর্মকর্তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেননি বলেই প্রবীণ তাঁতিরা অভিযোগ করেন।

 

একাধিক প্রবীণ তাঁতি জানান, একসময় হস্তচালিত তাঁতই ছিল এখানকার অধিবাসীদের মূল পেশা। এখনো অনেক এলাকায় তাঁতিরা ধরে রেখেছে পৈত্রিক পেশা। উপজেলার সুলতানসাদী, নারান্দী, হাইজাদী, বিশনন্দী, দড়ি বিশনন্দী, সদাসদী, গহরদী, জোগারদিয়া, আতাদী, ভৈরবদী, সিঙ্গারপুর ও লতুব্দীসহ বিভিন্ন গ্রামের তাঁতিরা থ্রি-পিছ, গামছা, লুঙ্গি, শাড়ি তৈরি করছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও পুঁজির ব্যবস্থা থাকলে তারা আরো ভালো করতো।

 

তাঁত মালিকরা জানান, গত তিন বছর ধরে এই শিল্পে ধস নেমেছে। ভারত, পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কাপড় আমদানি করায় দেশি তাঁতের কাপড় এখন আর কেউ কিনতে চায় না। দেশের বাইরের কাপড় উন্নত এবং দামে কম থাকায় দেশের ক্রেতারা বিদেশি কাপড়ের দিকে ঝুঁকছে বেশি। সুতার দাম এবং বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম বেশি হওয়ায় দেশি তাঁতের কাপড় উত্পাদন খরচ বেশি হয় বলে বাইরের কাপড়ের সাথে পাল্লা দেওয়া যাচ্ছে না। তাঁত মালিকদের দাবি, সরকার যদি বিদেশ থেকে কাপড় আমদানি কমিয়ে দেয়, তাহলে আবারো দেশি তাঁত কাপড়ের কদর বাড়বে। বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের আওতাধীন উপজেলার তাঁত বেসিক সেন্টারের ফিল্ড অফিসার ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ বলেন, আড়াইহাজারে ২০১৩ সালের জরিপ অনুযায়ী প্রায় ৩১৯৮ জন তাঁতি বা তাঁত মালিক রয়েছেন—যাদের প্রত্যেকের ১০/১২টি করে তাঁত রয়েছে। এছাড়াও প্রায় ২০টি বড় বড় ফ্যাক্টরি রয়েছে। তাঁত শিল্প উন্নয়নে তাঁত বোর্ড আড়াইহাজারের ৫১টি তাঁতি সমিতির মাধ্যমে তাঁতিদের দুই কোটি ৬২ লাখ ৪২ হাজার টাকা দিয়েছে। তাঁত শিল্পকে বাঁচাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।