কালো বীজে সোনালি ঝিলিক

‘কালো সোনা’ হিসাবে পরিচিত পেঁয়াজ বীজের আবাদ করে দেশজুড়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের আদর্শ কৃষক বক্তার হোসেন খান। চলতি বছর ৫০ একর জমিতে পেঁয়াজ বীজ আবাদ করেছেন। এখন চলছে মাঠ পরিচর্যার কাজ। সারাদিন ব্যস্ত আছেন পেঁয়াজ বীজক্ষেত পরিচর্যায়। গত কয়েক বছর ধরে পেঁয়াজ বীজের আবাদ করে তিনি ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন। আর সেই সাফলতার কারণেই চলতি বছর ব্যাপক ভাবে আবাদ করেছেন বীজের। তাঁর সাফলতা দেখে ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ব্যাপক ভাবে এখন প্রচুর পরিমানে আবাদ হচ্ছে পেঁয়াজ বীজের। বক্তার খানের ধারাবাহিক সাফল্যের কারনে ফরিদপুর অঞ্চলে এ বছর রেকর্ড পরিমাণ জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদ করেছেন কৃষকেরা। বক্তার খানের পেঁয়াজ বীজ ক্ষেত দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে কৃষকেরা ছুটে আসছেন। বক্তার খানও কৃষকদের নানা পরামর্শ দিচ্ছেন। সারাদেশে পেঁয়াজ বীজ ছড়িয়ে দিতে কৃষকদের মাঝে স্বল্পমূল্যে বীজ বিক্রি করছেন। সরকারি চাকরির পাশাপাশি পেঁয়াজ বীজের আবাদ করে বক্তার খান এখন বেশ স্বাবলম্বী। তাছাড়া তার ক্ষেতে কাজ করে ২০/৩০ জন দরিদ্র মানুষ এখন বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছেন। বেশ কয়েক বছর আগে পরীক্ষামূলক ভাবে পেঁয়াজ বীজের আবাদ করেন বক্তার খান। পেঁয়াজ বীজ আবাদ বেশ কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল। তাছাড়া এটি চাষে মারাত্বক ঝুঁকি থাকে। যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে নিমিষেই ক্ষতি হতে পারে লাখ লাখ টাকা। প্রথম বছর আবাদ করে বেশ লাভ হওয়ায় পরের বছর অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই তিনি আবাদ বাড়িয়ে দেন। সে বছর বীজ বিক্রি করে লাভবান হওয়ায় অন্য ফসলের চাষ বাদ দিয়ে শুধুমাত্র পেঁয়াজ বীজের আবাদ বাড়িয়ে দেন। গত বছর তিনি ১৪ একর জমিতে বীজ লাগালেও এ বছর লাগিয়েছেন ১৭ একর জমিতে। প্রতি একর জমিতে উৎপাদন খরচ হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। গড়ে প্রতিদিন তার জমিতে কাজ করছে ২০/২৫ জন দরিদ্র মানুষ। এ বছর তার লাগানো পেঁয়াজ বীজ বেশ ভালো হয়েছে বলে জানান বক্তার খান। তিনি জানান, সারাদেশের চাহিদার প্রায় ৮০ ভাগ পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন হয় ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায়। যার বেশির ভাগ উৎপাদন করেন এই চাষি। তার পেঁয়াজ বীজ নিতে মানিকগঞ্জ, পাবনা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, গাইবান্ধা, মংমনসিংহ, কুমিল্লা, সিলেট, রংপুরসহ বিভিন্ন স্থান থেকে চাষিরা প্রতিদিনই আসছেন। তার উৎপাদিত পেঁয়াজ বীজের মান ভালো হওয়ায় ইতোমধ্যেই সারাদেশে সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। সারাদেশে এখন ‘খান বীজ’ একনামেই পরিচিত। এ বছর বক্তার খান ১৭ একর জমিতে আবাদ করেছেন পেঁয়াজ বীজের। যার মধ্যে নিজের জমি রয়েছে ৭ একর। বাকি ১০ একর জমি বর্গা নিয়ে তিনি আবাদ করছেন। প্রতি একর জমি থেকে ২শ কেজি বীজ পাবেন বলে আশা তার। চলতি বছর ৫০ একর জমিতে পেঁয়াজ বীজ চাষ করেছেন বলে জানান তিনি। বক্তার খান জানান, পেঁয়াজ বীজ আবাদ একটি ঝুঁকিপূর্ণ শস্য হলেও এতে লাভ হয় প্রচুর। এটি আবাদে প্রচুর টাকার দরকার হয়। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে বীজ দেখভাল করতে হয়। কোন একটিতে বিচ্যুতি ঘটলে বীজ নষ্ট হয়ে যায়। ফলে সব সময় অনেক টেনশনের মধ্যে থাকতে হয়। বক্তার খান জানান, পেঁয়াজ বীজ চাষে অনেক টাকার দরকার হলেও কৃষি ঋণ তেমন একটা পাওয়া যায় না। যদিও পাওয়া যায় সেই টাকা চাহিদার তুলনায় একেবারেই কম। পেঁয়াজ বীজ আবাদে চাষিদের স্বল্পসুদে বেশি ঋণ দেয়ার দাবি জানান তিনি। ঋণের মেয়াদ বাড়ানোর পাশাপাশি বীজ সংরক্ষণের জন্য এ জেলায় একটি হিমাগার তৈরির দাবি তার। বক্তার খানের পেঁয়াজ ক্ষেতে কাজ করে শতাধিক পরিবার এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালই আছেন। এদিকে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড জেনারেল ম্যানেজার্স অফিসের ডিজিএম লক্ষ্মী নারায়ণ ঘোষাল বলেন, ফরিদপুর অঞ্চলে ব্যাপক হারে পেঁয়াজ বীজের আবাদ হয়ে থবকে।