সিডর, আইলা বিধ্বস্ত লবণাক্ত বাগেরহাটের মানুষ অব্যাহত প্রচেষ্টায় প্রচলিত কৃষি ও মৎস্য চাষের পাশাপাশি ব্যতিক্রমী কিছু করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। এমনই এ অঞ্চলের মানুষের কাছে মৎস্য ঘেরের বেড়িবাঁধে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কুল চাষ।
এই কুল চাষ করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন, বাগেরহাট সদরের গোটাপাড়া ইউনিয়নের নারায়ণ চন্দ্র হালদার। প্রায় ৩৫ একর জমির ওপর কুল চাষে নিজে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি, স্বাবলম্বী করেছেন এলাকার হতদরিদ্র বহু মানুষকে।
দূর থেকে দেখে ফুল বাগান ভেবে ভুল করলে অবাক হবার কিছু নেই। কাঁচা-পাকা ফলের ভারে মাটিতে নুইয়ে পড়া কুল বাগানের এমন চোখ জুড়ানো দৃশ্য নিশ্চয়ই মুগ্ধ করার মতো। হাতেগোনা কয়েকটি আপেল ও নারকেল কুলের চারা লাগিয়ে যাত্রা, শুরু করেন সদর উপজেলার গোটাপাড়া ইউনিয়নের নারায়ণ চন্দ্র হালদার।
পরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহযোগিতায়, মাছের ঘেরের বেড়িবাঁধের প্রায় ৩৫ একর জমিতে, পুরো উদ্যোমে শুরু করেন কুলের চাষ। বাড়তে থাকে উৎপাদন। উৎপাদিত এসব কুল জেলা ছাড়িয়ে চলে যায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। এলাকার দরিদ্র পরিবারের লোকজন এই বাগানে কুল সংগ্রহের খ-কালীন কাজ করে স্বচ্ছলতা ফেরানোর পাশাপাশি মেটান পরিবারের মৌসুমি ফলের চাহিদাও।
কুল তোলার কাজে নিয়োজিত শ্রমিক তপন, ফারুক, রেজাউলসহ একাধিক শ্রমিক বলেন, আমরা ২০ থেকে ২৫ শ্রমিক একসঙ্গে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ মণ কুল তুলছি। এখানে কুল তোলার পাশাপাশি আমরা আনন্দ ও স্বাদ করে খাচ্ছি। ঘেরে মাছ, বেড়িবাঁধে কুল চাষ সব মিলিয়ে ভালোভাবে দিন পার করছি।
বাগেরহাট সদর উপজেলার গোটাপাড়া গ্রামের কুল চাষি নারায়ণ চন্দ্র বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও আমি কুল চাষ করেছি প্রায় ৩৫ একর জমির ওপর। অন্য বছরের তুলনায় এবার ফলন ভালো। আমাদের ফল খুব মিষ্টি ও সুস্বাদু। ব্যবসায়ীরা আমার বাগানের কুল ক্রয় করে রাজধানীসহ চট্টগ্রাম, ফেনিসহ বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যায়। বর্তমানে প্রতিকেজি নারকেল ও আপেল কুল ৬৫-৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাগেরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. আফতাব উদ্দিন বলেন, মৎস্য ঘেরের বেড়িবাঁধে কুল চাল দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যে বাগেরহাট সদর উপজেলার কুলচাষি নারায়ণ চন্দ্র কুল চাষে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। সে প্রতিবছর কুল চাষ করে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা আয় করে থাকেন।
তার দেখাদেখি অন্যান্য চাষিরা কুল চাষে আগ্রহী হচ্ছে এবং বেড়িবাঁধে বাগান তৈরি করছে। আশাকরি ভবিষ্যতে কুল আবাদ আরও বৃদ্ধি পাবে। কারণ বেড়িবাঁধের ওপরে লবণাক্ততা কম থাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই কুল চাষ। এই কুল পুষ্টি চাহিদা মেটাতে ভূমিকা রাখছে বলে দাবি করেন ওই কর্মকর্তা।