রাজধানীর বর্জ্য পুড়িয়ে জ্বালানি উৎপাদন করতে চায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এজন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে পাঠানো হয়েছে (একনেক)। ‘প্রত্যাখ্যাত উদ্ভূত জ্বালানি’ শীর্ষক ওই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৪৯ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় দুটি ফায়ার প্লেস তৈরি করা হবে। একটিতে সাধারণ বর্জ্য এবং অন্যটিতে ইলেক্ট্রনিক বর্জ্য পোড়ানো হবে। সাধারণ বর্জ্য পুড়িয়ে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ মূল বর্জ্যে নিয়ে আসা সম্ভব বলে প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়। এছাড়া ইলেক্ট্রনিক বর্জ্য পোড়ানোর পর যে নির্যাস থাকবে তা দিয়ে কয়লাজাতীয় দ্রব্য উৎপাদন করা হবে। ব্যবহৃত হবে ‘প্রত্যাখ্যাত উদ্ভূত জ্বালানি’ হিসেবে। এ দ্রব্য (ল্যান্ড ফিল ওয়েসটেজ) কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বড় বড় ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। ঢাকা দক্ষিণের বর্জ্য দিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ মেগাওয়াট এবং পরবর্তীতে ৪০ থেকে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। বর্তমানে প্রকল্পটি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী (বর্জ্য) আ হ ম আবদুল্লাহ হারুণ বলেন, রাজধানীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক-নির্দেশনায় এ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। মাতুয়াইলে ডিএসসিসির নিজস্ব স্থানে বড় ধরনের একটি ফায়ার প্লেস নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণের বর্জ্য দিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ মেগাওয়াট
এবং পরবর্তীতে ৪০ থেকে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে মাতুয়াইল ল্যান্ড ফিল্ড ভরে যাওয়ায় নতুন করে ৮১ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছে সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে ৫০ একর হবে বর্জ্য ডাম্পিং এবং ৩১ একর বার্ন প্লান্ট বা ফায়ার প্লেসের জন্য। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৪৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫১৪ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে জমি অধিগ্রহণের জন্য। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি এখন একনেকের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অনুমোদন পেলে দ্রুত কাজ শুরু করবে ডিএসসিসি।
আবদুল্লাহ হারুণ বলেন, প্রাথমিক অবস্থা দেখে অনেক বিদেশি প্রতিষ্ঠানই এতে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে। বর্জ্য শোধনের নতুন এ প্রকল্পটি দেশে একেবারেই প্রথম। উন্নত বিশ্বে এ প্রকল্পের অনেক চাহিদা রয়েছে। তিনি জানান, উৎপাদিত এই বিদ্যুৎ বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি) দিয়ে দেয়া হবে। পরবর্তীতে পিডিবির মাধ্যমে ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকার বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে ব্যবহার করা হবে।
ডিএসসিসি কর্মকর্তা জানান, প্রকল্পের আওতায় স্থাপন করা ফায়ার প্লেসে আগুনের তাপমাত্রা যদি ১৮শ’ সেন্টিগ্রেট হয় তাহলে বর্জ্যের আর উচ্ছিষ্ট থাকবে না। তবে সিটি করপোরেশন ৬শ’ থেকে ৮শ’ সেন্টিগ্রেট তাপমাত্রার প্লান্ট বসাতে চায়। এতে পরিবেশ দূষণের কোন সম্ভাবনা নেই। অনেকটা ইটভাটার আদলেই প্রকল্পটি সম্পন্ন হবে। দূষিত ধোঁয়া নিঃসরণের জন্য একটি সুউচ্চ চিমনি থাকবে।
চলতি বছর ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থার পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় দৈনিক উৎপাদিত সাড়ে ৩ হাজার টন বর্জ্যের মধ্যে কোন না কোনভাবে ১৬শ’ টন বর্জ্যই থেকে যাচ্ছে। দৈনিক ১ হাজার ৯শ’ টন করে বর্জ্য সিটি করপোরেশনের নিজস্ব বর্জ্য ল্যান্ড ফিল মাতুয়াইলে ফেলা হচ্ছে। ফলে দিন দিন ভরাট হয়ে যাচ্ছে ওই মাঠটি। আগামী এক বছর পর আর বর্জ্য ফেলার স্থান পাওয়া যাবে না। আর যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ১ হাজার ৬শ’ টন বর্জ্য ডিএসসিসি এলাকার বিভিন্ন ডোবা-নালা এবং নদী-খালে গিয়ে ভরাট হচ্ছে। একই সঙ্গে এলাকার পরিবেশও মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে।
ডিএসসিসির কর্মকর্তারা জানান, উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে সনাতন পদ্ধতি ছেড়ে এবার বর্জ্য পুড়িয়ে ছাই করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তাই নতুন একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পের নাম হচ্ছে ‘রিফিউজ ডিরাইভড ফুয়েল’ বা ‘প্রত্যাখ্যাত উদ্ভূত জ্বালানি’। প্রকল্পের মাধ্যমে নগরী থেকে সংগ্রহ করা বর্জ্য আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হবে। সংগ্রহ করা বর্জ্য চলে আসবে মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশে। এতে বিদ্যুৎ কিংবা কয়লাজাতীয় দ্রব্য উৎপাদন হবে, যা দিয়ে জ্বালানির চাহিদা মিটবে।
ডিএসসিসি সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে ডিএসসিসি মোট আবর্জনা অপসারণ করে ৬ লাখ ৪৩ হাজার ৯৮৪ টন। সে হিসেবে দৈনিক আবর্জনা অপসারণের গড় ১ হাজার ৮শ’ টন। আর ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আবর্জনা অপসারণ করেছে ৫ লাখ ৪৩ হাজার ৫২৩ টন। সেই হিসেবে দৈনিক আবর্জনা অপসারণের গড় ১ হাজার ৯শ’ টনের কিছু বেশি। বিগত এক বছরে ডিএসসিসির আবর্জনা অপসারণ বিভাগের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে ১শ’ টনের কিছু বেশি।
নগরীকে পরিচ্ছন্ন রাখতে ডিএসসিসি গত বছর ৫ হাজার ৭শ’টি মিনি ডাস্টবিন স্থাপন করে। কিছুদিন যেতে না যেতেই অধিকাংশ বিন ভেঙে গেছে, কিছু চুরি হয়ে গেছে। এসব মিনি ডাস্টবিন নষ্ট হওয়ার পর আর পুনঃস্থাপন করা হচ্ছে না।