রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত একসময়ের প্রমত্তা ও খরস্রোতা করতোয়া নদী বর্তমানে মরা নদীতে পরিণত হয়েছে। এর বুক চিরে জেগে ওঠা বিশাল চরে গস্নাডিওলাস ফুল, আলু, আখ, মিষ্টি আলুসহ অন্যান্য রবিশস্য চাষ হচ্ছে। তাই যতদূর চোখ যায়, শুধুই সবুজের সমারোহ। কয়েক হাজার একর জমিতে এবারে মিষ্টি আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। বিশাল চর বদলে দিয়েছে নদীপাড়ের হাজার হাজার দরিদ্র মানুষের ভাগ্য।
রংপুর ও দিনাজপুর জেলার সীমান্ত ঘেষা করতোয়া নদী। ওই এলাকার আবাদী জমি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় অতি কষ্টে জীবিকা নির্বাহ করতেন নদীপাড়ের মানুষেরা। সেই নদীতে চর জেগে ওঠায় এখানকার মানুষেরা প্রতি বছর নুতন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখেন। পানির অভাবে শুকিয়ে যাওয়া করতোয়া নদী একেবারেই মরে গেছে। রংপুর জেলা থেকে প্রতিবছরই বর্ষার সময় এই নদীটি ভেঙে দিনাজপুরের দিকে সরে যাচ্ছে।
নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে অসংখ্য গ্রাম। বদলে যাচ্ছে এ অঞ্চলের মানচিত্র। বর্তমানে মরে যাওয়া এ নদীপাড়ের মানুষ জয়ন্তীপুর, ল্যাংড়ার ঘাট, জাতের ঘাট, কুলানন্দপুরের ঘাট, মেছনার ঘাট, শালিকাদহ, সিরাতনের ঘাটসহ কয়েকটি ঘাটে ডিঙ্গি নৌকা দিয়ে নদী পারাপার হচ্ছে হাজারো মানুষ।
কড়াইবাড়ী গ্রামের চাষি ফজল, মিঠু, অমূল্য, বেরেন বাবু জানায়, ‘নদীত পানি থাকলে হামার চরম বিপদ হয়, আর নদী শুকি গ্যালে হামরা চরোত আবাদ করি খাই।’ করতোয়া নদীর দু’পাশে রংপুরের পীরগঞ্জ ও দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ, ঘোড়াঘাট উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রামের হাজারো চাষিরা করতোয়ার চরে প্রতিবছর বছর শুকনো মওসুমে আলু, আখ, মিষ্টি আলুসহ অন্যান্য রবিশস্যের চাষ করে আসছেন।
সম্প্রতি বরিশাল থেকে আজগর আলী নামের এক ব্যক্তি এসে ওই চরের মধ্যে প্রায় দু’একর জমিতে বিদেশী গস্নাডিওলাস ফুলের চাষ করেছেন। তার দেখাদেখি এলাকার অনেকেই চরের মধ্যে ফুল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। ওই ফুল দেখতে সারাদিন মানুষের ভিড় লেগেই থাকে। ফুল বিক্রি করেও লাভবান হয়েছেন চাষিরা। বিভিন্ন এলাকা থেকে ফুল ব্যবসায়ীরা এসে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ফুল।