বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পেছনে যে স্বপ্ন-প্রতিজ্ঞা শক্তি জুগিয়েছে তা বাস্তবায়নে আমাদের যেতে হবে অনেক দূর। তবে এ কথা সত্য, আমাদের আশার ক্ষেত্র এখন সঙ্গতই অনেক বিস্তৃত। আমাদের যুবশক্তি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কতিপয় বিপথগামীর হীন প্রচেষ্টা সংকল্পচ্যুত যাতে না করতে পারে এজন্য আমাদের যুবশক্তিকে আরো দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে। আমরা মনে করি আমাদের চেতনা ও মূল্যবোধের ক্ষেত্রটি অত্যন্ত আলোকিত
সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘ডিজিটাল লিডারর্স পলিসি মিটিং অন জব’ শীর্ষক সেশনে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন। তিনি যুবশক্তির সৃজনশীলতা বিকাশে বৈশ্বিক জ্ঞানকে স্বাগত জানানোর কথা বলেছেন। অত্যন্ত সঙ্গত কথা যে, বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা ক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে হলে জ্ঞানের সর্বাধুনিক আলোয় আলোকিত হওয়া ছাড়া বর্তমানে কোনো বিকল্প নেই। বর্তমান যুগে তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশের কারণে তথ্য ও জ্ঞান এখন হাতের মুঠোয়। সৃজনশীলতা বিকাশের জন্য মেধা ও প্রতিভাকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হলে বৈশ্বিক জ্ঞানার্জন আবশ্যক। আমাদের যুবশক্তিকে কর্মমুখী বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে গড়ে তোলার যে অব্যাহত প্রচেষ্টা রয়েছে তা অত্যন্ত আশাপ্রদ এবং খুব জরুরি বিষয়।
বাংলাদেশ নানাক্ষেত্রে অনেক এগিয়েছে। উন্নয়নের মহাসড়কে পা রেখেছে রক্তস্নাত বাংলাদেশ। বড় অর্থনীতির দেশগুলোকেও পেছনে ফেলে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এক সমীক্ষায় প্রকাশ, ৭৯টি দেশের মধ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নসূচক র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৬তম। ইতিপূর্বে লন্ডনভিত্তিক অর্থনীতির বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান বিএমআই রিসার্চ ভবিষ্যতের ২০টি উদীয়মান বাজার হিসেবে যে দেশগুলোকে চিহ্নিত করে এর শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ অথচ এই বাংলাদেশকে এক সময় তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের গ্লুমবার্গও বাংলাদেশর প্রবৃদ্ধি অর্জন নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। লক্ষণীয় বিষয় যে, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্ফীত হচ্ছে। শুধু তৈরি পোশাক রফতানিতেই নয়, চামড়াজাত পণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী রফতানিতে আমাদের অবস্থান ক্রম যাচ্ছে ওপরের দিকে। এসব ক্ষেত্রে যুবশক্তির অবদান কম নয়। বাংলাদেশের শিল্প-কারখানার উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে যুবশক্তির উল্লেখযোগ্য অংশ।
বাংলাদেশের তরুণ-যুবকরা স্বল্প সময়ের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ হয়ে উঠছে। তারা এগিয়ে যাচ্ছে নানা দিকে এবং দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন-অগ্রগতিতে তারা যে অবদান রাখছে তা অত্যন্ত আশা জাগানিয়া। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে মাথাপিছু প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। সরকারের প্রচেষ্টা সফলতার আলো ছড়াচ্ছে। আমাদের সার্বিক অগ্রগতির পেছনে সরকারের সুদূরপ্রসারী কর্মপরিকল্পনার ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব লক্ষণীয়। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের এক যুগান্তকারী দেশ। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তি খাতের উদ্যোগের ফলে রফতানিমুখী শিল্পনির্ভর দ্রুত অগ্রসরমান এক দেশের নাম বাংলাদেশ। যে কোনো বিচারেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সূচকগুলো আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় দৃষ্টিগ্রাহ্য ঈর্ষণীয়। এই প্রেক্ষাপটে আমাদের এখন কি আর স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে চিহ্নিত করার কোনো অবকাশ আছে?
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক-সামাজিক, উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারা আরো বেগবান করতে হলে যুবশক্তিকে নিয়ে আরো ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা এবং এর বাস্তবায়ন উদ্যোগ অত্যন্ত জরুরি। বিগত প্রায় এক দশকে বাংলাদেশ নানাবিধ প্রতিকূলতা-প্রতিবন্ধকতা ডিঙিয়ে যেটুকু এগিয়েছে এর পেছনে সরকারের নীতিনির্ধারকদের দূরদর্শিতা ও নিষ্ঠার অবদান যে ব্যাপক তা আর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের প্রয়োজন রাখে না। রফতানি, বৈদেশিক মুদ্রা আয়, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণসহ সব ক্ষেত্রেই দেশের ক্রমাগত উন্নতি হচ্ছে। দারিদ্র্যের হার হ্রাসের ক্ষেত্রে আমরা অনেকটাই এগিয়ে। উন্নয়ন-অগ্রগতির এই ধারা অব্যাহত রাখতে হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পাশাপাশি সব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা-দায়বদ্ধতা-জবাবদিহিতার পাঠ অবশ্যই আরো পুষ্ট করতে হবে। বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের আরো বেশি সহযোগিতা করার বিষয়টিও সমভাবেই জরুরি। তাদের অবদান অবিস্মরণীয়।
একটি দেশ-জাতির সরকারের একক প্রচেষ্টায় যতটা এগোতে পারে এক্ষেত্রে যদি সবার সহযোগিতা থাকে তাহলে এগোনোর পথটা সন্দেহাতীতভাবে আরো মসৃণ হয়। বেসরকারি খাতে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান এখন শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও তারা সক্ষমতার স্বাক্ষর রাখতে পারছে। আমাদের দেশের উৎপাদিত ওষুধ যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রায় ১৭০টি দেশে রফতানি হচ্ছে। চামড়া খাতে রফতানি অনেক বেড়েছে। আমাদের সুযোগ রয়েছে কৃষি খাত নিয়ে আরো ব্যাপক কর্মপরিকল্পনার। এ খাতের সঙ্গে শিক্ষিত যুবশক্তিকে যদি ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করা যায় তাহলে বড় ধরনের বিপ্লব সাধন দুুরূহ কোনো বিষয় নয়। কৃষি খাত পণ্যের উৎপাদন ও বাজার ক্ষেত্র বিস্তৃত করার উদ্যোগ নেয়া দরকার নতুনভাবে। এক্ষেত্রে আমাদের সম্ভাবনা ব্যাপক। সরকারের অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রচেষ্টা কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র বিস্তৃত করার চিন্তা, শিক্ষাক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন ইত্যাদি বিষয় ইতোমধ্যে আশার আলো ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে।
সমালোচক কিংবা দুর্মুখেরা যত সমালোচনা করুন না কেন উন্নয়ন-অগ্রগতির বিষয়টি তো দৃশ্যমান। এই বিষয়টিকে তো চাপা দিয়ে কিংবা ঢেকে রাখা সম্ভব নয়। উন্নয়ন-অগ্রগতি যদি হয় তাহলে তা তো দৃশ্যমান হবেই। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন শেখ হাসিনা প্রোথিত করেছেন সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ ক্রম প্রশস্ত হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ এক নয়। এর জন্য যথেষ্ট সংগ্রাম করতে হয়েছে। স্বাধীনতা-উত্তর কয়েক বছরের মাথায় সপরিবারে জাতির জনককে হত্যার মধ্য দিয়ে যে অন্ধকারের গহ্বরে দেশ ফেলে দিয়ে দীর্ঘদিন অগণতান্ত্রিকতার আস্ফালন চলেছে এ থেকে টেনে এ পর্যন্ত এই রক্তস্নাত দেশকে নিয়ে আসা চারটি খানি কথা নয়। রাজনীতির বৈরী হাওয়া আমাদের স্বপ্ন তছনছ করে দিয়েছিল। সেই গাঢ় অন্ধকার যদি দূর করা সম্ভব না হতো তাহলে আজকের বাংলাদেশে পৌঁছা সম্ভব হতো না। এখনো অপচেষ্টা চলছে নানাভাবে আমাদের আবার পেছনের দিকে ঠেলে দেয়ার। এই অপচেষ্টা রুখে দিতে হবে সম্মিলিত প্রয়াসে।
যুবশক্তির একটা অংশকে বিপথে টেনে নেয়ার অপচেষ্টাও আছে অব্যাহত। জঙ্গিবাদ-উগ্রবাদের আগুনে আমাদের পোড়াতে সক্রিয় একটি সংঘবদ্ধ অপশক্তি। সেই অপশক্তির শিকড়-বাকড় এখনো একেবারে উপড়ে ফেলা সম্ভব না হলেও এদের নেটওয়ার্ক যে তছনছ করে দেয়া সম্ভব হয়েছে অনেকটা এই দাবি অসত্য নয়। প্রতিক্রিয়াশীলতা-ধর্মান্ধতা-উগ্রবাদিতার মূলোৎপাটনে সামাজিক শক্তিকে সম্পৃক্ত করে সরকারকে আরো দৃঢ়ভাবে এগোতে হবে। শেখ হাসিনা শক্ত হাতেই দল ও সরকারের হাল ধরেছেন। এর প্রমাণ তো এটিই যে, দেশ ‘তলাবিহীন’ ঝুড়ি থেকে উন্নীত হয়েছে নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশে। অচিরেই পরিণত হবে মধ্যম আয়ের দেশে। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর সেøাগান নয়, একেবারে বাস্তব বিষয়। মৌলবাদ রুখে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সমৃদ্ধির পথে। সমৃদ্ধির এই পথ আরো প্রশস্ত করতে যা যা দরকার তা বর্তমান দেশ নেতৃত্বের রয়েছে বলেই বিশ্বাস করি। শিক্ষাক্ষেত্রে অপশক্তির ‘ঈগল দৃষ্টি’ পড়েছে। এ ব্যাপারে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে কালবিলম্ব না করে। অপশক্তি ও চক্রান্তকারীরা খুব কৌশলে সদা তৎপর হীন প্রচেষ্টায়। কতিপয় ব্যক্তি কিংবা মহলবিশেষ দেশ-জাতির সর্বনাশ কখনোই ঘটাতে পারবে না যদি প্রগতিবাদী সবার ঐক্যের ভিত হয় মজবুত।
বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পেছনে যে স্বপ্ন-প্রতিজ্ঞা শক্তি জুগিয়েছে তা বাস্তবায়নে আমাদের যেতে হবে অনেক দূর। তবে এ কথা সত্য, আমাদের আশার ক্ষেত্র এখন সঙ্গতই অনেক বিস্তৃত। আমাদের যুবশক্তি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কতিপয় বিপথগামীর হীন প্রচেষ্টা সংকল্পচ্যুত যাতে না করতে পারে এজন্য আমাদের যুবশক্তিকে আরো দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে। আমরা মনে করি আমাদের চেতনা ও মূল্যবোধের ক্ষেত্রটি অত্যন্ত আলোকিত। অতএব কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছানো মোটেও নয় দুরূহ। – See more at: http://www.manobkantha.com/2017/01/26/186620.php#sthash.MWjm80mA.dpuf