কমলার রঙে রঙিন পঞ্চগড়সামসউদ্দীন চৌধুরী কালাম, পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ে কমলার বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয়েছে। আবহাওয়া ও মাটি উপযোগী হওয়ায় এখানে কমলা চাষের সম্ভাবনা দেখছে কৃষি বিভাগ।
পঞ্চগড় কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, মাটিতে অম্লের (পিএইচ) পরিমাণ সাড়ে চার থেকে সাড়ে পাঁচ পর্যন্ত থাকলে ওই জমি কমলা চাষের উপযোগী। পঞ্চগড়ের জমি ওই মানের ও উঁচু থেকে মাঝারি উঁচু শ্রেণির। এ জেলায় বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২ হাজার ৫শ’ থেকে ৩ হাজার মিলিমিটার। এ ধরনের জলবায়ু কমলা চাষের জন্য খুবই উপযোগী।
এক সময় জেলার কয়েকজন চাষি শখের বসে বাড়ির উঠানে কমলার চারা রোপণ করেন। কয়েক বছর এসব কমলা গাছে ধরে সুস্বাদু কমলা। কমলা চাষে কৃষকদের আগ্রহ দেখে পঞ্চগড় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর উন্নত কমলা চাষ প্রকল্প হাতে নেয়। ২০০৬ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের কার্যক্রম পাঁচ বছর চলে। এ সময় জেলায় ৪ হাজার ৮৮৮টি কমলা চারা লাগানো হয়। পঞ্চগড় সদর উপজেলার মীরগড়ের হাফেজ মজিবর রহমান, তেঁতুলিয়ার মখলেছার রহমান, আটোয়ারীর পানিশাইল গ্রামের আবদুর রশিদ এবং বোদা উপজেলার সর্দারপাড়া গ্রামের তরিকুল ইসলাম প্রত্যেকে ৬৬ শতক জমিতে কমলা চারা রোপণ করেন। কমলা চাষিদের প্রত্যেককে ১৭০টি করে চারা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে সরবরাহ করা হয়। প্রকল্পের আওতায় পঞ্চগড় সদর, তেঁতুলিয়া, আটোয়ারী ও বোদা উপজেলার ৫৪০ জন চাষিকে কমলা চাষের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। জেলা কৃষি অফিসের ৩০ জন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকেও এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া জেলার সদর উপজেলার,
হাফিজাবাদ. সাতমেরা, চাকলাহাট ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন কৃষক বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কমলার বাগান করে লাভবান হয়েছেন। কৃষকদের বাগানে কমলার ফলন ভালো হওয়ায় এসব এলাকায় অনেকে কমলা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে। সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, এই উপজেলায় ৭৫ হেক্টর জমিতে কমলা চাষ হচ্ছে। এসব বাগানে উত্পাদিত কমলার আকার, রঙ ও স্বাদ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি জেলার কমলার মতো।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়নের ভেলকুপাড়া গ্রামের কমলার বাগান মালিক মো. রাজু বলেন, আমি সাড়ে ১২ বিঘা জমিতে কমলা চাষ করেছি। গত বছর থেকে ফলন পাচ্ছি। এবার এখন পর্যন্ত এক লাখ টাকার কমলা বিক্রয় করেছি। গাছে বিক্রয়ের মতো আরও এক লাখ টাকার কমলা আছে। জেলা সদরের হাড়িভাসা ইউনিয়নের বামনপাড়া গ্রামের কমলার বাগান মালিক হাবিবুন নবী প্রধান বলেন, আমি ২০০৯ সালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে কমলার চারা নিয়েছি। তিন বছর পর ফল পাই। পরপর তিনবার কমলা বিক্রি করি। এবার চতুর্থ বার কমলা বিক্রি করছি। পাইকাররা বাড়িতে এসে কমলা নিয়ে যাচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চগড়ের মাটি ও আবহাওয়া কমলা চাষের উপযোগী হওয়ায় এখানে উন্নতজাতের নাগপুরী খাসিয়া কমলার চাষ করা যাবে। সাধারণত নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল কমলা চাষের উপযোগী। গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলেও কমলা চাষ হয়। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পঞ্চগড় জেলার মতো একই জলবায়ু, পরিবেশ ও মাটি হওয়ায় দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি জেলার মতো এ জেলায়ও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কমলার চাষ সম্ভব। উত্পাদিত কমলা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রফতানি করে কৃষকরা সচ্ছলতা আনতে সক্ষম হবে।
পঞ্চগড় সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল মতিন বলেন, পঞ্চগড় জেলার মাটি ও আবহাওয়া কমলা চাষের উপযোগী। এখানে ভারতের দার্জিলিং ভ্যারাইটির কমলা চাষ সম্ভব। গুণে ও মানে ভালো হওয়ায় পঞ্চগড়ে উত্পাদিক কমলার কদর দিন দিন বাড়ছে। শুধু সদর উপজেলায় এ বছর ৭৫ হেক্টর জমিতে কমলা চাষ করা হয়েছে। যা গত বারের তুলনায় বেশি। পঞ্চগড়ে কমলার চাষ করে লাভবান হওয়ায় কৃষকরা কমলা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।