সংসারের অভাব-অনটন দূর হয়েছে। সংসারে ফিরেছে স্বাচ্ছন্দ্য। এলাকার মানুষের কাছে একজন সফল মাছচাষী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া এলাকার নূরুল ইসলাম বাবু। অষ্টম শ্রেণীর পাঠ চুকিয়ে বাবার সঙ্গে মাছ চাষ শুরু করেন তিনি। সফলতাও আসে। এর তিন বছর পর ২০০০ সালে নিজেই নেমে পড়েন তেলাপিয়া চাষে। এরপর আর তাকে পেছনে তাকাতে হয়নি। ধীরে ধীরে ব্যবসায় উন্নতি হয়েছে। ফিরেছে নিজের ভাগ্য। জমি কিনে বাড়ি করেছেন। বৃদ্ধি করেছেন পুকুরের আয়তন। বেড়েছে পুঁজিও। তার সফলতার গল্প এলাকার মানুষের মুখে মুখে। তাকে দেখে অনেকে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন মাছ চাষে।
যশোর জেলা মৎস্য অফিসের সিনিয়র সহকারী পরিচালক আক্তার উদ্দীন জানান, এ অঞ্চলে তেলাপিয়া মাছের উৎপাদন ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যশোর জেলায় প্রতিবছর শুধু তেলাপিয়া মাছই উৎপাদন হয় ১৮ হাজার ২৭৪ মেট্রিক টন। দেশের অন্যান্য জেলার তেলাপিয়া উৎপাদন হলেও গুণগত মানের দিক থেকে যশোরের মাছের চাহিদা বেশি। যে কারণে দিন দিন এ মাছের চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
যশোর শহর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে চাঁচড়া মৌজায় অবস্থিত ‘শাহ আলী মৎস্য খামার’। এখানে বসেই নূরুল ইসলাম বাবু তার মাছ চাষের সংগ্রাম ও সফলতার কথা জানিয়েছেন এই প্রতিবেদককে। নূরুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘মাছ চাষ করে ৪০ লাখ টাকায় জমি কিনে ছয় কক্ষের পাকা বাড়ি করেছি। বাড়ি করতে খরচ হয়েছে ২০ লাখ টাকা। বর্তমানে ১০০ বিঘা জমিতে তেলাপিয়া মাছ চাষ করছি। পুকুর ইজারা ও মাছ চাষে প্রায় ৪০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছি। এছাড়াও স্বাচ্ছন্দ্যে চলছে সংসার। দুই সন্তানের মধ্যে ছেলে নবম শ্রেণী আর মেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ালেখা করছে।’
তিনি বলেন, তার শাহ আলী মৎস্য খামারে নিয়মিত-অনিয়মিত ২০ জন কর্মচারীর কর্মসংস্থান হয়েছে। এছাড়াও তার সফলতা দেখে নূর আলম, মিন্টুসহ অনেক বেকার যুবক তেলাপিয়া মাছ চাষ শুরু করেছেন। তেলাপিয়া মাছ চাষে সফলতা অর্জন করায় ‘জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০১৫’ উপলক্ষে তিনি সম্মাননা পুরস্কারও পান।
মাছ চাষ শুরু প্রসঙ্গে নূরুল ইসলাম বাবু জানান, ‘১৯৯৭ সালের দিকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করে বাবার সঙ্গে মাছ চাষে যোগ দেই। নিজেদের কোনো জমি না থাকায় অন্যের পুকুর লিজ নিয়ে বাবা মাছ চাষ করতেন। আমি ছিলাম ভাইবোনদের মধ্যে বড়। বাবার একমাত্র আয়ে সংসার চলে না। তাই অষ্টম শ্রেণীর পর আর লেখাপড়া করা হয়নি। লেখাপড়া ছেড়ে বাবার সঙ্গে মৎস্য খামারে কাজ শুরু করি।
মাছ চাষে সফলতাও আসে। সংসারের অভাব কিছুটা লাঘব হয়। ২০০০ সাল আমার কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় পারিবারিকভাবে আমাকে বিয়ে দেয়া হয়। নতুন সংসার। নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। বাবার সঙ্গে পরামর্শ করে এক বিঘার একটি পুকুর লিজ নেই। তখন আমার পুঁজি মাত্র ১০ হাজার টাকা। এই ১০ হাজার টাকা আমার ভাগ্য খুলে দিয়েছে।’
নূরুল ইসলাম বাবু বলেন, প্রথম বছরই তেলাপিয়া চাষ করে তার তিন লাখ টাকা লাভ হয়। এরপর ২০০৫ সালে তিনি আরও দুটি পুকুর লিজ নেন। বর্তমানে তার ‘শাহ আলী মৎস্য খামার’র আয়তন আরও বাড়িয়েছেন। গত বছর ১০০ বিঘা আয়তনের ৯টি পুকুরে তেলাপিয়া চাষ করে তার লাভ হয়েছে প্রায় ৫০ লাখ টাকা। তার প্রত্যাশা এ বছর তার নিট আয় কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।