ছয় মাসে ১০ হাজার কোটি টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণ

চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে ৯ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লীঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। যা এই ছয় মাসের লক্ষ্যমাত্রার ৫৬ শতাংশ। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ছয়টি বাণিজ্যিক, দুইটি বিশেষায়িত ও ৩৮টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ৯টি বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংককে ১৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লীঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ সময় সরকারি ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে মোট লক্ষ্যমাত্রার ৪৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ ও বেসরকারি ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে মোট লক্ষ্যমাত্রার ৬৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ। গত বছরের একই সময় মোট লক্ষ্যমাত্রার ৫৩ শতাংশ কৃষি ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল। চলতি বছর শেষে কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে আগের বছরের তুলনায় ৭ শতাংশ বেশি ঋণ বিতরণ হবে। কেননা ২০১৬-১৭ অর্থবছরের কৃষি ও পল্লীঋণ কার্যক্রম ও নীতিমালায় গতবছরের ১৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা থেকে ৭ দশমিক ০১ শতাংশ বাড়িয়ে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। তবে এর মধ্যেও ঋণ বিতরণে লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি ব্যাংক। এছাড়া ছয় মাসে বিদেশি মালিকানার ৯টির মধ্যে তিনটি ব্যাংক কৃষি খাতে একটাকাও ঋণ বিতরণ করেনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের জুলাই-ডিসেম্বর তথ্য থেকে জানা যায়, রাষ্ট্র মালিকানাধীন আট ব্যাংক অর্থবছরের ছয় মাসে ৪ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লীঋণ বিতরণ করেছে। যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৪৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ। কৃষি খাতে বিতরণের জন্য রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর জন্য ৯ হাজার ২৯০ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। গত বছর একই সময়ে সরকারি ব্যাংকগুলো এখাতে ঋণ বিতরণ করেছিল ৪ হাজার ৬৫৬ দশমিক ৫০ কোটি টাকা। সে হিসাবে এ সময় ঋণ বিতরণ সামান্য কমেছে। এছাড়া দেশি-বিদেশি মালিকানার বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো উল্লেখিত সময়ে ৫ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লীঋণ বিতরণ করেছে। যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৬৪ শতাংশ। বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে চলতি বছর মোট ৮ হাজার ২৬০ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লীঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেয়া হয়েছিল। গত বছর একই সময়ে এখাতে মোট লক্ষ্যমাত্রার ৫৮ শতাংশ (৪০৯৯ কোটি টাকা) বিতরণ করেছিল সেরকারি ব্যাংকগুলো। সে হিসাবে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৬ শতাংশ।

২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ছয়টি বাণিজ্যিক, দুইটি বিশেষায়িত ও ৩৮টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ৯টি বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ১৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। ব্যাংকগুলো বিতরণ করে ১৭ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এক হাজার ২৪৬ কোটি টাকা বেশি কৃষি ঋণ বিতরণ হয়েছে। বিতরণকৃত এ ঋণ লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রায় আট এবং পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে প্রায় সাড়ে দশ শতাংশ বেশি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে বিভিন্ন কারণে ব্যাংকগুলো অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করতে পারছে না। আর সামগ্রিকভাবে ব্যাংক খাতে সুদহার কমে আসায় ব্যাংকগুলো কৃষিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। এতে এ খাতে ঋণ বিতরণ বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জোর তৎপরতা এবং ব্যাংকগুলোর উদ্যোগের কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। অগ্রাধিকার খাত হিসেবে এ খাতে ঋণ বিতরণ বাড়াতে বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকগুলোর প্রতি নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। আর ব্যাংকগুলোর দেয়া লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ঋণ বিতরণ না হলে জরিমানারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব কারণেই কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। যার মধ্যে সোনালী ব্যাংক ও ডিবিবিএল বেশি পিছিয়ে। ব্যাংকদুটির কৃষি ঋণ বিতরণ করেছে লক্ষ্যমাত্রার যথাক্রমে ৬ ও ৩০ শতাংশ। এছাড়াও নতুন ব্যাংকগুলোও কৃষি ও পল্লীঋণ বিতরণে পিছিয়ে পড়েছে। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরে ফারমার্স ব্যাংকের ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১০৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এ ব্যাংক কৃষি খাতে মাত্র ২৪ কোটি টাকা বিতরণ করেছে। যা ব্যাংকটির লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২৩ শতাংশ। এ সময় মেঘনা ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার ২২ দশমিক ৪৪ শতাংশ, এনআরবি কমার্শিয়াল ছয় দশমিক ১৩, মধুমতি ব্যাংক এক দশমিক ৯, ইউনিয়ন ব্যাংক দশমিক ৮০, এনআরবি গ্লোবাল ২০ ও সাউথ বাংলা ব্যাংক ২৮ শতাংশ ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ২৩ শতাংশ কৃষিঋণ বিতরণ করেছে। এছাড়া বিদেশি মালিকানার ব্যাংক আল ফালাহ্, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন ও ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্থান কৃষি খাতে কোন ঋণই বিতরণ করেনি।