ব্যবসার প্রতিবন্ধকতা কমাতে মহাপরিকল্পনা এ মাসেই

দেশে ব্যবসায়িক পরিবেশ আরো উন্নত করা এবং ব্যবসার প্রতিবন্ধকতা কমানোর মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন জটিলতা কমে আসবে। আর এ জন্য গত তিন মাস ধরে পর্যালোচনা করছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। এই পর্যালোচনা শেষে চলতি মাসের শেষ দিন চূড়ান্ত পরিকল্পনা ঘোষণা করবে বিডা।

গতকাল রবিবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় প্রতিষ্ঠানটি। এতে উপস্থিত ছিলেন এসডিজি বাস্তবায়ন-সংক্রান্ত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রধান সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগের সচিব ইউনূসুর রহমান। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বিনিয়োগকে সহজ করতে সরকার নতুন কর্মসূচি নিয়েছে। তাঁরা বলেন, এত দিন ব্যবসায়ীরা হাত বাঁধা অবস্থায় ব্যবসা করেছে। আর নতুন কর্মসূচি বাস্তবায়িত হলে তাদের হাত-পা খুলে যাবে। জানানো হয়, বিশ্বব্যাংকের ডুয়িং বিজনেস রিপোর্ট অনুসারে বর্তমানে ব্যবসায়িক পরিবেশের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৬তম। আগামী পাঁচ বছরে তা কমিয়ে ৯৯তম স্থানে উন্নীত করা হবে। এর অর্থ হলো দেশে ব্যবসায়িক পরিবেশ আরো উন্নত হবে।

জানা গেছে, বিশ্বের কোন দেশে কত সহজে ব্যবসা করা যায়, প্রতিবছর এসংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক। ওই রিপোর্টকে ডুয়িং বিজনেস রিপোর্ট বলা হয়। আর বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ ডুয়িং বিজনেস রিপোর্টে দুই ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। এর মূল কারণ সরকারের অস্থিরতা এবং কার্যকর সংস্কারের অভাব। এর ফলে দেশে বিনিয়োগ বাড়ছে না। ওই রিপোর্টে ব্যবসার পরিবেশকে ১০টি বৃহত্তর নির্দেশিকা বা বিষয়ে বিন্যস্ত করে সেগুলোর অবস্থা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে আছে বাংলাদেশ।

এ সূচকে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮৯তম। এ ছাড়া অবকাঠামো নির্মাণের অনুমতি, বৈদেশিক বাণিজ্য, চুক্তির বাস্তবায়ন, অসচ্ছলতা দূরীকরণ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। যে পাঁচটি সূচকে সবচেয়ে বেশি অবনতি হয়েছে সেগুলোর মধ্যে শীর্ষে আছে ব্যবসা শুরু। এ সূচকে গতবার বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১১১। এবার তা ছয় ধাপ কমে ১১৭ হয়েছে। ঋণের প্রাপ্যতা সূচকে ১২৮ থেকে পাঁচ ধাপ কমে ১৩৩ হয়েছে। সম্পত্তি নিবন্ধন, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা, কর পরিশোধ সূচকে গতবারের চেয়ে এক ধাপ করে পিছিয়েছে বাংলাদেশ। সার্বিকভাবে বার্তা হলো, বাংলাদেশে সহজে ব্যবসা করা যায় না।

গতকাল সংবাদ সম্মেলনে আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিশ্বব্যাংকের ডুয়িং বিজনেস রিপোর্ট বিবেচনায় নিয়ে বিনিয়োগ বাড়াতে বড় ধরনের সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিশেষ করে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্ক করা হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা যাতে সহজে ঋণ পায় সে জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি জমি ক্রয়, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন এবং শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, উৎপাদিত পণ্য যাতে সহজে রপ্তানি করা যায় সে বিষয়টিও সরকারের বিবেচনায় রয়েছে। তাঁর মতে, অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অনেক অর্জন রয়েছে। কিন্তু এত দিন উদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়ীরা যেসব অর্জন করেছে হাত-পা বাঁধা অবস্থায়। অর্থাৎ তাদের অনেক সীমাবদ্ধতা ছিল। আর ভবিষ্যতে তারা যাতে হাত খুলে ব্যবসা করতে পারে তার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

আমিনুল ইসলাম বলেন, বিডার উদ্যোগে ১৮টি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের কার্যক্রমে আরো গতি বাড়াতে কী করবে, সেসংক্রান্ত কর্মসূচি তারা দিয়েছে। এসব কর্মসূচি সমন্বয় করে প্রকাশ করা হবে। তিনি আরো বলেন, বিনিয়োগকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। আর এ জন্য বিডা গঠন করা হয়েছে। আর শিগগিরই তার সুফল পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর মে মাস পর্যন্ত সময়কাল হিসাব করে ডুয়িং বিজনেস রিপোর্ট প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক। আশা করি আগামী রিপোর্টে বাংলাদেশের অবস্থানের উন্নতি হবে। অর্থাৎ বাংলাদেশে সহজে ব্যবসা করা যায়, সেটি ওই রিপোর্টে প্রতিফলিত হবে। ’ নজিবুর রহমান বলেন, কর এবং আমদানি-রপ্তানিসংক্রান্ত কাজে সহায়তা করবে এনবিআর। এ ছাড়া বিভিন্ন ইস্যুতে বিডার সঙ্গে সুষমভাবে কাজ করবে এনবিআর।