ঘড়ির কাঁটায় সময় তখন রাত ১টা। অমন মধ্যরাতে একদল যুবককে দেখা গেল ছুটে বেড়াচ্ছেন চট্টগ্রাম মহানগর এলাকার এ বস্তি থেকে ও বস্তিতে। যুবক দলের সঙ্গে বড় বড় গামলা ভরা মুখরোচক অনেক খাবার। কোনো হাঁড়িতে মুরগির রোস্ট, কোনোটায় খাসির রেজালা কিংবা পোলাও-বিরিয়ানি। বস্তিবাসীর মধ্যে যুবকরা খাবারগুলো বিলিয়ে দেন। খাবার পেয়ে রাত গভীরেই বস্তিগুলোতে আনন্দ বয়ে যায়। সমাজের নিম্নবিত্ত মানুষগুলোর চোখেমুখে আনন্দের এই ঝিলিক দেখতে বন্দরনগরীর কয়েকজন শিক্ষিত তরুণ অভিজাত বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টার ও ক্লাবের অনুষ্ঠানে উচ্ছিষ্ট ও বেঁচে যাওয়া খাবার সংগ্রহ করে বিতরণের অভিনব এ উদ্যোগ নিয়েছেন। প্রায় পাঁচ মাস ধরে পাঁচ সদস্যের একটি টিম অসাধারণ এ কাজটি করে যাচ্ছে।
খাবার সংগ্রহ ও বিলিকরণ টিমের লিডার মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা কয়েক বন্ধু একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে দেখলাম বেঁচে যাওয়া অনেক খাবার ফেলে দেওয়া হচ্ছে। খাবার ফেলে দেওয়ার এ দৃশ্য আমাদের নাড়া দেয়। এরপর আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে অতিরিক্ত খাবার সংগ্রহ করে তা গরিবদের মধ্যে বিলি করার সিদ্ধান্ত নিই। প্রথমে আমরা হাটহাজারীর মির্জাপুরের একটি আদ্যশ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে বেঁচে যাওয়া খাবার সংগ্রহের মধ্য দিয়ে শুরু করি। ওই খাবার প্রায় আড়াইশ’ দরিদ্র
ও ছিন্নমূল মানুষের কাছে পেঁৗছে দিই। এরপর আমরা চট্টগ্রাম নগরীতে খাবার সংগ্রহ ও বিলি করতে থাকি। এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক অনুষ্ঠান থেকে খাবার সংগ্রহ করে বিলি করেছি।’
চট্টগ্রাম নগরের অভিজাত কমিউনিটি সেন্টার এবং ক্লাবগুলোতে বিয়ে, গায়ে হলুদ, জন্মদিন পার্টি কিংবা পারলৌকিক আদ্যশ্রাদ্ধের বাড়তি ও বেঁচে যাওয়া খাবার ফেলে দেওয়া হয়। নগরীর ডাস্টবিনই হয় সেসব খাবারের ঠিকানা। কিন্তু ফেলে না দিয়ে এসব খাবার সংগ্রহ করে নগরীর বিভিন্ন ছিন্নমূল এলাকায় বিতরণ করছে ‘দুর্বার’ নামের সংগঠনটি। চট্টগ্রামের হাটহাজারীর একটি শ্রাদ্ধ্য অনুষ্ঠানের খাবার বিতরণ থেকে শুরু হয় তাদের কার্যক্রম। এরপর থেকে শুরু হয় নগরীতেও। নগরীর বিভিন্ন বস্তিতে এবং সড়কে থাকা ছিন্নমূল মানুষের কাছে বিলি করা হয় এসব অভিজাত খাবার। চলতি বছরের অক্টোবর থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে ছিন্নমূল মানুষের কাছে খাবার বিলি করছেন চট্টগ্রামের পাঁচ তরুণ।
এ পাঁচ তরুণ হলেন- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাজীব নন্দী, উত্তর চট্টগ্রামের ক্রীড়া সংগঠক মিজানুর রহমান, সাইয়েদ ওবায়েদ, সংস্কৃতিকর্মী ঊর্মি নন্দী ও দুর্লভ নন্দী।
সংগঠনের সদস্য সাইয়েদ ওবায়েদ বলেন, ‘আমরা শহরে আমাদের আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে যেসব অনুষ্ঠানে খাবারের আয়োজন করা হয়, সেসব অনুষ্ঠানে খাবার বেঁচে গেলে আমাদের জানাতে অনুরোধ করি। খাবার বেশি থাকলে তারা আমাদের সঙ্গে যোগযোগ করেন, তখন আমরা গিয়ে সেগুলো সংগ্রহ করে শহরের বিভিন্ন বস্তিতে গিয়ে ছিন্নমূলদের মাঝে বিলি করি। সর্বশেষ জিইসি কনভেনশন সেন্টারের একটি অনুষ্ঠানের বেঁচে যাওয়া দুই শতাধিক লোকের খাবার কদমতলী বস্তিতে বিতরণ করেছি।’
তিনি জানান, খাবার বিলির এ কার্যক্রমকে আরও প্রসারিত করতে একে সাংগঠনিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি প্রতিটি কমিউনিটি সেন্টার, ক্লাব, কনভেনশন সেন্টারের মালিকদের সঙ্গে এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানের রান্না করা বাবুর্চিদের সঙ্গেও যোগাযোগ করছি, যাতে তারা এসব অভিজাত খাবার ফেলে না দেয়। চট্টগ্রাম নগরে ৩৫টির মতো কমিউনিটি সেন্টার আছে। এর মধ্যে ১০টি অভিজাত। শীত মৌসুমে এসব কমিউনিটি সেন্টার এবং কনভেনশন সেন্টারে হয় শহরের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের বিভিন্ন অনুষ্ঠান।